সঞ্জিব দাস, ফরিদপুর :
অভাবের সংসারে প্রেম প্রনয়ের দুই বছরের মাঝে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করে নিলেন স্বামী ও স্ত্রী। ফরিদপুর শহরের পূর্ব খাবাসপুর মহল্লার লঞ্চ ঘাট এলাকার একটি ভাড়া বাসায় তারা এই মৃত্যুকেই শেষ অবলম্বন করে বেছে নিলেন। আর পুলিশ সহ স্থানীয়দেরও ধারনা সংসারের টানা পড়েনে পড়ে তারা মৃত্যুকেই গ্রহন করেন। এদিকে এ ঘটনায় সৃতি বনিকের ভাই নিলয় বনিক মঙ্গলবার অজ্ঞাতদের আসামী করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছে কোতয়ালী থানায়।
সোমবার রাত ৮টার দিকে ফরিদপুর কোতয়ালী থানার পুলিশ ঘরের দরজা ভেঙ্গে লাশ দুটি উদ্ধার করে তাদের থাকার ঘর থেকে। মৃত স্বামী ও স্ত্রীর নাম রাজীব বিশ্বাস (৩৪) ও স্মৃতি বণিক (২২)। এরা দুজনই গোপালগঞ্জ জেলার মুকসুদপুর উপজেলার বাটিকামারী এলাকার বাসিন্দা। স্মৃতি বণিক মুকসুদপুরের বাটিকামারী এলাকার খোকন বণিকের মেয়ে। এর মধ্যে রাজিব বণিকের গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জ জেলার মুকসুদপুর উপজেলায়। তিনি ফরিদপুর সদর উপজেলার মমিন খাঁর হাটে অবস্থিত একটি কলেজে শিক্ষক হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন বলে জানা গেছে।
পূর্ব খাবাসপুরের লঞ্চঘাট মহল্লার বাড়ির মালিক শওকত সরদার জানান, বছরখানেক আগে ওই দম্পতি তার বাড়ির একটি কক্ষ ভাড়া নিয়ে থাকতে শুরু করে। ওই সময় তাদের মধ্যে রাজিব কলেজে শিক্ষকতা আর তার স্ত্রী টিউশনি করেন বলে তারা বাড়িটি ভাড়া নেন।
ওই বাড়ির অপর এক ভাড়াটিয়া ফারুক শিকদার বলেন, সন্ধ্যার দিকে সোনালীর মাসি তাদের ঘরের একটি দরজা বন্ধসহ অপর দরজায় তালা দেওয়া দেখতে পান। এ সময় তিনি রাজিবের স্ত্রীকে ডাকলেও তারা দরজা খোলেনি। এক পর্যায়ে বাজার থেকে লোক এনে তালা ভাঙলেও ভেতর থেকে দরজা বন্ধ থাকায় তা খোলা সম্ভব হয়নি। পরে তার মাসি ঘরের একটি জানালা ভাঙলে দেখতে পান ঘরের মধ্যে গলায় রশি নেওয়া অবস্থায় রাজিবের লাশ ঝুলছে। আর তার স্ত্রী সোনালীর মৃতদেহ বিছানায় পড়ে রয়েছে।
এ দিকে ফারুক শিকদারের স্ত্রী আছিয়া বলেন, ওই দম্পতি বেশিরভাগ সময় ঘরেই কাটাত। ব্যবহারেও তারা অমায়িক ছিলেন। আমার বাচ্চারা দুপুরে বদ্ধ ঘরে ওই দুজনকে ঝগড়া করতে শুনেছে।
খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসা সোনালীর মেসো গোপাল পোদ্দার জানান, দুই বছর আগে রাজিব ও সোনালী প্রেম করে একে অপরের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। এরপর থেকেই তারা পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন ছিল। সম্প্রতি কথা প্রসঙ্গে রাজিব তাকে জানায় সে চরের একটি কলেজে শিক্ষক হিসেবে যোগ দিয়েছে। এরপর থেকে আর তার সঙ্গে যোগাযোগ হয়নি রাজিবের।
ফরিদপুর কোতয়ালী থানার দ্বিতীয় কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক (এসআই) বেলাল হোসেন জানান, পুলিশ দরজা ভেঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় রাজীবের লাশ এবং শয্যায় পড়ে থাকা অবস্থায় স্বপ্নার লাশ উদ্ধার করে। তিনি বলেন, যে ঘর থেকে লাশ উদ্ধার করা হয় সেটি ভিতর থেকে বন্ধ ছিল। তিনি বলেন, লাশ দুটি উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। তিনি বলেন, এ ঘটনায় নিহত সৃতি বনিকের ভাই নিলয় বনিক মঙ্গলবার অজ্ঞাতদের আসামী করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছে।
No comments:
Post a Comment