মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাচ্ছে ১০ গ্রাম - সময় সংবাদ | Popular Bangla News Portal

শিরোনাম

Friday, April 17, 2020

মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাচ্ছে ১০ গ্রাম

নদী ভাঙ্গন অব্যাহত

বৈশাখের এই প্রখর খরতাপের মধ্যেও সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার যমুনা নদীতে ভয়াবহ ভাঙন শুরু হয়েছে। এতে উপজেলার কৈজুরি, খুকনী ও জালালপুর এই ৩টি ইউপির ১০ গ্রাম ভাঙনের কবলে পড়ে ক্রমশ মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে।

ফলে এসব গ্রামের প্রায় ১৫ হাজার মানুষ করোনাভাইরাসের আতঙ্কের চেয়ে বাড়িঘর, সহায়-সম্বল হারানোর আতঙ্কেই বেশি দিশেহারা হয়ে পড়েছে। 

জানা যায়, গত বছরের ভাঙনে এসব গ্রামের কমপক্ষে ৪ শতাধিক বাড়িঘর, ২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ১টি চিকিৎসা কেন্দ্র, ২টি মসজিদ, ২টি ঈদগাহ মাঠ, ৫০টি তাঁত কারখানা, ৪০০ বিঘা আবাদি জমি, ৩ কিলোমিটার কাঁচা সড়ক, ১টি মাদরাসা, ১টি কবরস্থান, ১টি শ্মাশান ঘাট, ১টি মন্দির ও ২ শতাধিক গাছপালা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। 

এছাড়া গত ১ সপ্তাহে এ ১০ গ্রামের অন্তত ২০টি বাড়িঘর, ২০০ বিঘা ফসলি জমি ও শতাধিক গাছপালা নদীগর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। ভাঙন কবলিত গ্রামগুলোর মধ্যে রয়েছে- ব্রাহ্মণগ্রাম, আরকান্দি, পাকুরতলা, পুঁটিপাড়া, বাঐখোলা, ঘাটাবাড়ি, ভেকা, জালালপুর, চিলাপাড়া ও হাট পাচিল। 

এসব গ্রামের প্রায় ৫ কিলোমিটার এলাকার মানুষ এই ভাঙনের তীব্রতায় দিশেহারা হয়ে পড়েছে। এরই মধ্যে বেশকিছু ঘরবাড়ি, তাঁত কারখানা ও ফসলি জমি নদী ভাঙনে বিলিন হয়ে গেছে।

এ বিষয়ে ক্ষতিগ্রস্ত নূরু মির্জা, আমিরুল ইসলাম, আব্দুল হালিম, আব্দুল হামিদ আলী, এমদাদ আলী, ইউসুফ আলী, এমদাদুল হক মিলন, রাসেল সরকার, শাকিল আহমেদ, সাব্বির হোসেন, সিয়াম হোসেন, আলমগীর হোসেন, সাহেরা খাতুন, মোমেনা খাতুন, শাহাদ আলী, জসিম উদ্দিন, আলিমুদ্দিন, সিরাজুল ইসলাম, পরমেশ্বর সরকার জানান, গত বছরের বন্যায় এ এলাকার প্রায় ৪ শতাধিক বাড়িঘর যমুনা নদীর ভাঙনে বিলীন হয়েছে। এতে প্রায় ৪ শতাধিক মানুষ গৃহহীন হয়েছে। এ বছর সবেমাত্র নদীতে জোয়ার শুরু হয়েছে। বর্ষা মৌসুম শুরুর এখনো ৩ মাস বাকি। অথচ এরইমধ্যে নদীতে ভাঙন শুরু হয়েছে। ফলে আমরা চরম আতংকে দিন কাটছি।

তারা আরো বলেন, বাঁধ নির্মাণের দাবিতে গত ৪ বছর ধরে মিছিল-মিটিং ও মানববন্ধন করেও কোনো কাজ হচ্ছে না। ফলে আমরা এখন প্রশাসনের প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলেছি।

এ বিষয়ে খুকনী ইউপির চেয়ারম্যান মুল্লুক চাঁদ মিয়া, জালালপুর ইউপি চেয়ারম্যান হাজী সুলতান মাহমুদ ও কৈজুরির চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম জানান, যমুনা নদীতে এই অসময়ে ভাঙন নিজ চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা যায় না। দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে এবারের বর্ষায় গ্রামগুলো মানচিত্র থেকে চিরতরে মুছে যাবে। 

তারা আরো বলেন, স্থায়ী তীর সংরক্ষণ বাঁধ নির্মাণের অপেক্ষায় থাকলে এসব গ্রাম সম্পূর্ণরূপে অস্তিত্ব হারাবে। এই ভাঙন রোধে এখনই কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন। 

তারা বলেন, গত বছর এমন সময় বিশেষজ্ঞরা এলাকা পরিদর্শন শেষে স্থায়ীভাবে তীর সংরক্ষণ বাঁধ ও ড্রেজিংয়ের আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু এক বছর পার হলেও কাজ এখনো শুরু না হওয়ায় আমরা চরম হতাশ হয়ে পড়েছি।

শাহজাদপুর ইউএনও শাহ মো. শামসুজ্জোহা বলেন, অচিরেই এখানকার ভাঙন রোধে বালুর বস্তা ফেলার কাজ শুরু হবে। আশা করি এ সমস্যা থাকবে না।

সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম বলেন, ভাঙন রোধে প্রায় সাড়ে ৭০০ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। প্রস্তাবটি একনেকে পাশ হলেই কাজ শুরু হবে। এছাড়া এ বছর ভাঙন ঠেকাতে আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে বালুর বস্তা ফেলার কাজ শুরু হবে।



সময়/দেশগ্রাম/রাজ

No comments: