মতামতঃ
আজ ১৪ই জুন বিশ্ব রক্তদাতা দিবস। রক্ত অতি মূল্যবান সম্পদ এবং এর মূল্য অমূল্যহীন। স্বেচ্ছায় এবং বিনামূল্যে রক্তদান করে যারা প্রতিনিয়ত হাজার হাজার মানুষের জীবন বাঁচিয়ে তুলেছে তাদের সহ সব মানুষকে রক্ত দান করাতে উৎসাহিত করাই রক্ত দিবসের উদ্দেশ্য।
১৯৯৫ সাল থেকে আন্তর্জাতিক রক্ত দিবস পালন করা হয়ে থাকে।এবং পরবর্তীতে ২০০০ সালে ❝ নিরাপদ রক্ত ❞ এই থিম নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবসের অভিজ্ঞতা নিয়ে পালিত হয়েছিলো বিশ্ব রক্তদান দিবস।২০০৫ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য অধিবেশনের পর থেকে প্রতিবছর এই দিবস পালন করা হয়।
রক্ত মানব দেহের অতি প্রয়োজনীয় উপাদান। রক্ত ছাড়া কেউ বাঁচতে পারে না। চিকিৎসকদের মতানুসারে " প্রত্যেক মানুষের শরীরেই কিছু বাড়তি রক্ত থাকে। যা আমাদের শরীরের প্রয়োজন হয় না। যার ফলে রক্তদানের মতো মহৎ কাজের দ্বারা মানুষের জীবন বাঁচাতে পারি। রক্ত দান করলে শরীর দূর্বল হওয়র কোন কারণ নেই। নিদিষ্ট পরিমাণ রক্ত দেওয়ার ফলে ব্যাক্তির কোন ক্ষতি হয় না। প্রতি তিন মাস অন্তর রক্ত দান করা যায় এবং প্রাকৃতিকভাবে তা পূর্ণ হয়।
- কোরআনে বলা আছে, ❝যে একজন ব্যাক্তির জীবন রক্ষা করল, সে যেন সমগ্র মানবজাতিকে রক্ষা করলো।❞ (সূরা মায়েদাহ, আয়াত ৩২)
তাই মানুষের জীবন রক্ষা করার মাধ্যমে আমরা সবাইকে উৎসাহিত করতে পারি। রক্তদানের পূর্বে অনেকের মনে নানা ধরনের ভয়-ভীতি কাজ করে। অনেক সময় দেখা যায় মুমূর্ষু রোগীর জন্য রক্তের প্রয়োজন হয় কিন্তু অনেকে নিজের স্বজন নয় বলে গুরুত্ব দেয় না, এছাড়া নানা অজুহাতে রক্তদান করা থেকে এড়িয়ে যায়। ফলে অকালে ঝোড়ে পড়ে কত শত প্রাণ, সঠিক সময়ে রক্তের অভাবে। আমাদের হৃদয়ে ধারণ করতে হবে মানুষ মানুষের জন্য ; প্রত্যেক মানুষই প্রত্যেক মানুষের আপনজন। আজ এই কঠিন পরিস্থিতিতে তারা পড়েছে, কাল হয়তো আমাকে কিংবা আমার আপনজনের ও কারো প্রয়োজন হতে পারে। তাই মানবতার সেবায় সদা সর্বদা এগিয়ে আসতে হবে। রক্তের প্রয়োজন হলে নিজের পরিবার, বন্ধুবান্ধবের ওপর নির্ভর করতে হয়। এমনকি অনেক রক্তদাতা আছে অর্থের বিনিময়ে রক্তদান করেন।যেসব পরিবারের আর্থিক সমস্যা থাকে, অসচ্ছল পরিবারের জন্য দুঃসাধ্য।
বর্তমান সময়ে অনেকে এই মহান কাজে উদ্বুদ্ধ হয়ে রক্তদান করেন। এই করোনাকালে যখন কেউ ঘর থেকে ও বেড়োতে চাইতো না তখন মানবসেবক যোদ্ধারা প্রতিকূল অবস্থায় দূর দূরান্ত থেকে রক্ত দান করতে গিয়েছেন।
একজন রক্তদাতা তার অনুভূতি প্রকাশে বলেন ❝ আমার রক্ত দেওয়ার আগ্রহ ছিলো বরাবরই। কিন্তু আমার ওজন ছিলো মাত্র ৪২কেজি। প্রথমবার যখন রক্ত দিতে গিয়েছিলাম তখন খুব ভয় করছিলো। ব্লাড দেওয়ার পর কোন অসুবিধা হয়নি। আমার ওজন আস্তে আস্তে বাড়তে থাকলো। তারপর থেকে আমি নিয়মিত ব্লাড ডোনেট করি।তিন মাস হয়ে গেলে আর ভালো লাগতো না, মনে হতো আমাকে ব্লাড দিতে হবে। আমার সব বন্ধু, ছোট-বড় ভাইবোনদেরকে বলে রাখতাম ব্লাড লাগলে আমাকে বলবেন। ব্লাড দেওয়া যেন আমার নেশা হয়ে গেলো। ব্লাড দেয়া আমার নেশা হলেও আমি টাকার বিনিময়ে কখনোই ব্লাড দিতাম না। কেউ আমাকে টাকা দিলে আমি শুধু যাতায়াত ভাড়া নিতাম। কোন কিছু কিনে দিতে চাইলে ও নিতাম না। সেই টাকায় কোন অসহায় মানুষকে খাবার কিনে দিতে বলতাম। করোনার কারণে অনেকে বাড়ি থেকে বের হতে চাইতো না। কিন্তু আমার কাছে যে চেয়েছে ৩মাস হলেই রক্তদান করেছি।
এইভাবে আমার ১৬তম বার ব্লাড দেয়া হয়েছে। এখন
আমার ২মাস হলো ব্লাড দিয়েছি।❞[সবুজ কুমার দাস,শিক্ষার্থী,সরকারি রাজেন্দ্র কলেজ,ফরিদপুর ]
এমন বীর রক্তদাতারাই আমাদের অনুপ্রেরণা যোগায়। জয় হোক মানবতার।
স্বেচ্ছায় ও বিনামূল্যে রক্তদানকারী আড়ালে থাকা মানুষদেরকে অনুপ্রাণিত হওয়ার উদ্দেশ্যে, এমন হাজারো মানবতার সেবকদেরই জন্য, উৎসর্গীকৃত ১৪জুন বিশ্ব রক্ত দান দিবস। হৃদয়ের অন্তস্তল থেকে জানাই,সকল রক্তদাতা বীর যোদ্ধাদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধাবোধ, ভালোবাসা ও শুভ কামনা রইলো।
❝হোক আজ একটি পণ,
রক্ত দিয়ে বাঁচাতে সহায়তা করবো রোগীর জীবন ❞
লেখকঃ মাহিয়া সুলতানা আরজু(মুক্তা খান)