![]() |
নির্মাণ কাজ শেষের দুই দিনেই সড়কে ধস |
আমতলী (বরগুনা) প্রতিনিধি:
নির্মাণ কাজ শেষের দুই দিনের মাথায় সড়ক খানাখন্দে ভরে গেছে। বুধবার খানাখন্দ সড়কে ধানের চারা রোপন করে ঠিকাদারের কাজের অনিয়মের প্রতিবাদ করেছেন বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী।
খবর পেয়ে শুক্রবার বরগুনা জেলা এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী সুপ্রিয় মুখার্জি ও উপজেলা প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন সড়ক পরিদর্শন করে ঠিকাদার শহীদুল ইসলাম মৃধাকে পুনরায় সড়ক নির্মাণের নির্দেশ দিয়েছেন। ঘটনা ঘটেছে আমতলী উপজেলার গুলিশাখালী ইউনিয়নের খেকুয়ানী ও মহিষকাটা সড়কে।
জানাগেছে, উপজেলা প্রকেীশলী অধিদপ্তর গুলিশাখালী ইউনিয়নের ডাক্তার বাড়ী স্ট্যান্ড থেকে গোছখালী বাজার পর্যন্ত ২.৮ কিলোমিটার ও মহিষকাটা হতে গোছখালী বাজার পর্যন্ত ৩ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণের দরপত্র আহবান করে। ২ কোটি ৩২ লক্ষ টাকায় ৫.৮ কিলোমিটার সড়কের কাজ পায় হলদিয়া ইউনিয়ন পরিষদ সাবেক চেয়ারম্যান ঠিকাদার শহীদুল ইসলাম মৃধা। দরপত্রে এ বছর ৩০ জুন কাজ শেষ হওয়ার কথা। ঠিকাদার শহীদুল ইসলাম ডাক্তার বাড়ী থেকে গোজখালী অফিস পর্যন্ত ২.৮ কিলোমিটারের কাজ গত ২৩ জুন শেষ করেন। কাজের মান ছিল অত্যান্ত নি¤œমানের বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। কাজ শেষ হওয়ার দুই দিনের মাথায় গত ২৬ জুন (গত সোমবার) সড়কের বিভিন্ন স্থান থেকে ইটের খোয়া ও বিটুমিন উঠে সড়কের মাটি বের হয়ে খানাখন্দে পরিনত হয়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ কাজের নি¤œমানের বিষয়টি উপজেলা প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুনকে বেশ কয়েকবার জানানো হলেও তিনি কোন পদক্ষেপ দেয়নি। গত বুধবার এলাকাবাসী ওই খানাখন্দ সড়কে ধানের চারা রোপন করে ঠিকাদার ও উপজেলা প্রকৌশলীর অনিয়মের প্রতিবাদ করেছেন। অপর দিকে মহিষকাটা থেকে গোজখালী বাজার পর্যন্ত ৩ কিলোমিটারের কাজ একই ঠিকাদার গত ১৫ জুন শেষ করেছে। কিন্তু সড়ক নির্মাণের ১০ দিনের মাথায় ওই সড়কের বিভিন্ন স্থানে খানাখন্দ হয়েছে। খবর পেয়ে গত শুক্রবার বরগুনা জেলা এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী সুপ্রিয় মুখার্জি ও উপজেলা প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন সড়ক পরিদর্শন করে ঠিকাদার শহীদুল ইসলাম মৃধাকে পুনরায় সড়ক নির্মাণের নির্দেশ দিয়েছেন।
শনিবার সরেজমিনে ঘুরে দেখাগেছে, দুইটি সড়কের বিভিন্ন স্থানে খানাখন্দে ভরে গেছে। সড়কের মাটি বের হয়ে যাচ্ছে।
বাইনবুনিয়া গ্রামের বাসিন্দা ইব্রাহিম খলিল বলেন, কাজের শুরুতেই ঠিকাদার শহীদুল ইসলাম মৃধা নি¤œমানের ইট, খোয়া, পাথর ও বিটুমিন দিয়ে কাজ করছিল। আমি তার অনিয়মের প্রতিবাদ করি। এতে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে আমার বিরুদ্ধে চাঁদা দাবীর মামলা করবে বলে হুমকি দেয়। আমি এ বিষয়টি তাৎক্ষনিক উপজেলা প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন ও বরগুনা নির্বাহী প্রকেীশলীকে জানিয়েছি। কিন্তু তারা কোন ব্যবস্থা নেয়নি। ফলে সড়ক নির্মাণের দুই দিনের মাথায়ই খানাখন্দে ভরে গেছে।
স্থানীয় বাসিন্দা মহসিন, নাইজুর ইসলাম নয়ন, সাইদ ও আল আমিন খলিফা বলেন, উপজেলা প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন ও ঠিকাদার শহীদুল ইসলাম মৃধা যোগসাজসে দায়সারা কাজ করে সড়কের টাকা আত্মসাৎ করেছেন। দ্রæত এদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার দাবী জানান তারা।
স্থানীয় বাসিন্দা হাবিবুর রহমান ফরাজী, আলতাফ গাজী ও হালিমা বেগম বলেন, সড়কে নি¤œমানের কাজ করে ঠিকাদার ও সংশ্লিষ্টরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বদনাম করছেন। আমরা এ ঘটনার সাথে জড়িতদের শাস্তি দাবী করছি।
গুলিশালী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাড. এইচএম মনিরুল ইসলাম মনি বলেন, ঠিকাদার নি¤œমানের নির্মাণ সামগ্রী দিয়ে সড়কে কাজ করেছে। ফলে কাজ শেষের অল্প দিনের মধ্যে সড়কের বিভিন্ন স্থান খানাখন্দ হয়েছে। কাজের শুরুতে ঠিকাদারের অনিয়নের প্রতিবাদ করতে এলাকায় মাইকিং করেছি। কিন্তু ঠিকাদার কোন কথাই আমলে নেয়নি। উল্টো যারা প্রতিবাদ করেছে তাদের চাঁদাবাজী মামলা দিয়ে হয়রানীর হুমকি দিয়েছেন।
ঠিকাদার শহীদুল ইসলাম মৃধা বলেন, সড়ক নির্মাণের নির্মাণ সামগ্রী আনা হয়েছে। দ্রুত সড়কের কাজ পুনরায় করবো।
আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ আশরাফুল আলম বলেন, বিষয়টি আমি জেনেছি। সড়কের কাজ যথেষ্ট নি¤œমানের হয়েছে। বরগুনা জেলা নির্বাহী প্রকৌশলী ও উপজেলা প্রকৌশলীর সাথে আলোচনা করেছি। দ্রæত তারা ওই সড়ক দুটো পুনরায় সংস্কার করে দিবেন।
বরগুনা নির্বাহী প্রকৌশলী সুপ্রিয় মুখার্জি বলেন, ওই সড়কদুটি পরিদর্শন করেছি। ঠিকাদারকে দ্রুত পুনরায় সড়কের কাজ করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।