অরিত্রীর মৃত্যু কি শুধুই আত্মহত্যা ? - সময় সংবাদ | Popular Bangla News Portal

Breaking

Post Top Ad

Responsive Ads Here

বৃহস্পতিবার, ডিসেম্বর ০৬, ২০১৮

অরিত্রীর মৃত্যু কি শুধুই আত্মহত্যা ?


একটি কলাম- 
শিক্ষক এবং শিক্ষার্থী এই দুই নিয়ে একটি বড় সমাজব্যবস্থা রয়েছে সারা বিশ্বে। এরা অামদের সমাজব্যবস্থার বড় একটি অংশ হয়েছে কালক্রমে।
কিন্তু এই সমাজ ব্যবস্থা নিয়ে শিক্ষকের ভিতর এই বোধ না হওয়াতে সমাজব্যবস্থার ব্যপ্তি সেভাবে বাড়েনি। আর সমস্যা গুলো সেখানেই বাড়ছে। আমি এখনও আমার কিছু শিক্ষককে এতো সম্মান করি যা হয়তো এই লেখায় তুলে ধরা সম্ভব হবে না। 

আমি সমাজকর্মের একজন ছাত্র ছিলাম। কলেজে পড়াকালীন ভালো কিছু শিক্ষক বন্ধুু আমার জুটে ছিলো হয়তো এ কারনে আমার রেজাল্ট মাষ্টার্সে এসে অনেক ভালো হয়েছিলো। তারমধ্যে রেজা স্যার, আলতাফ স্যার, নূর মোহম্মদ স্যার ও আহসান স্যারের কথা তুলে ধরা যায়। তাদের বন্ধুর মতো আচরন প্রতিটি শিক্ষার্থীকে এতো বেশী অনুপ্রানিত করতো তা বলার নয়। এখনো তাদের সাথে দেখা হলে অনেক আদর ভালোবাসা ভিতর থেকে চলে আসে। আবার ব্যতিক্রমও রয়েছে অনেক স্যার নিয়ে যাক সেসব কথায় আর যাব না। 

তবে অরিত্রীর নকলের সাথে এ সমন্ধে আমার একটি গল্প মনে পরে গেলো। আমি মাষ্টার্স শেষ করে বেকার বসে আছি। তখন পরিবারের অনুরোধে শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা দিতে গেলাম ফরিদপুর রাজেন্দ্র কলেজের শহর শাখায়। সেখানে আমার পাশে আরেক ছাত্র আমার পরিচিত হওযায় ও মাঝে মাঝে আমার কাছে কিছু উত্তরের ব্যাপারে প্রশ্ন করছিলো। সত্যি বলতে সে সময় আমি ওর এমন আচরনে খুবই বিরক্ত ছিলাম। ক্লাসে ডিউটিরত এক শিক্ষক আমার খাতা নিয়ে রেখে দেয় তার কাছে। আমাকে সে সময় প্রায় ত্রিশ মিনিট খাতা না দেওযায় আমি কিন্ত ভালো রেজাল্ট ভালো করতে পারি নাই। তবে এখনো ওই স্যারকে আমি মনে রেখেছি। কেননা তার ভুল বিচারে আমি সেদিন বড় কষ্ট পেয়ে ছিলাম। 
দেখুন এমন ভুল ব্যাপার কিন্তু ঘটে। এরপরেও বলবো শিক্ষকদের অনেক বেশী নমনীয় অনেক বেশী ¯েœহ কাতর হতে হয়। কিন্তু আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় সেটা এখন অনেক ক্ষেত্রেই হচ্ছে না। যেখানে একজন ছাত্র-ছাত্রী তাদের স্কুলে চান্স পেতে দশ লক্ষ টাকা ঘুষ দিতে হয়। সেখানে আমার তো মনে হয় আমাদের শিক্ষকরাই ওই ছাত্র-ছাত্রীকে দূর্নীতির প্রথম পাঠ শিখালেন। এখানেই বড় ব্যার্থতা রয়ে গেছে সমাজের। এরপর শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীর মধ্যে যে বন্ধুর মতো সম্পর্ক থাকার কথা সেটি এখন নেই। এখান থেকেই আগে আমাদের শিক্ষকদের বেড়িয়ে আসতে হবে তবেই হয়তো সমাজে অরিত্রীর মতো শিক্ষার্থীর মৃত্যু রোধ করা সম্ভব। 

ইন্টারনেট দুনিয়াই ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ওই দিনের অধ্যক্ষ এর রুমের একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে। কিভাবে একটি ১৪/১৫ বছরের মেয়ের সামনে তার বাবা-মাকে অপমান করা হচ্ছে। যেটা এখন জানা যাচ্ছে হয়তো এ কারনে কচি মনের ওই অবুজ সন্তান তার বাবা এবং মায়ের অপমান সহ্য করতে না পেরে মৃত্যুকেই আলিঙ্গন করলেন। এটাই তার কাছে সবচেয়ে ভালো পথ ছিলো সমাধানের। কিন্তু এমন কি হওয়ার কথা ছিলো সেদিন। এমন বয়সে দেশের বেশীরভাগ ছাত্র-ছাত্রীর কাছে চলে এসেছে মোবাইল এটাই বাস্তব। কিন্তু এমন না হলেও পারতো। কিন্তু আধুনিক সমাজের বিভিন্ন পরিবর্তনের কারনেই বাবা-মা অনেকটা বাধ্য হয়েই তুলে দিচ্ছেন ফোন। 

শিক্ষা যে প্রসার ঘটেছে সেখানে একজন ছাত্রছাত্রী বাবা-মার কাছে যতক্ষন থাকে তার থেকে অনেক বেশী থাকতে হয় শিক্ষদের কাছে। এ কারনে বিদেশে শিক্ষককে দ্বিতীয় পিতা-মাতা বলা হয়। কিন্তু শিক্ষকরা কি সেটা মনে করেন আমাদের দেশে। যদি মনেই করতেন তাহলে হয়তো অরিত্রীর মতো এমন ঘটনা ঘটতো না।     

অরিত্রীর বাবা দিলীপ অধিকারী এ ব্যাপারে অভিযোগ করে বলেছেন, অরিত্রী ক্লাস পরীক্ষায় মোবাইলে উত্তরপত্র লিখে নিয়ে গিয়েছিল বলে জানিয়ে ছিলো স্কুল কর্তৃপক্ষ। তাকে পরীক্ষায় অংশ নিতে না দিয়ে স্কুল থেকে সোমবার আমাকে ডেকে পাঠানো হয়। আমি স্কুলের প্রিন্সিপালের রুমে দুঃখ প্রকাশ করতে গেলে তারা অরিত্রীকে টিসি দিয়ে দেবে বলে জানান এবং আমাকে অনেক কথা শোনান মেয়ের ও স্ত্রীর সামনে। এ সময় আমি মেয়ের সামনেই কেঁদে ফেলি। অরিত্রী হয়তো আমার ওই কান্না-অপমান মেনে নিতে পারেনি। বাসায় ফিরে সে তার ঘরে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয় এবং ফ্যানের সাথে ঝুলে আত্মহত্যা করে। বাহির থেকে অনেক ডাকাডাকি করেও দরজা না খোলায়, দরজা ভেঙ্গে ভেতরে ঢুকে তাকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করি। পরে হাসপাতালে নিয়ে এলে চিকিৎসক আমার মেয়েকে মৃত ঘোষণা করেন। এই জন্যই বলবো অরিত্রীর মৃত্যু কি শুধুই মৃত্যু?   

অথচ এমন সমস্যার সমাধান বাব-মার হাতেই তুলে দিতে পারতেন ওই অধ্যক্ষ। তাতে সমাধান যেমন হতো তেমনি মেয়েটি হয়তো ভুল বুঝতে পেরে সামনের দিকে এগিয়ে যেতো বাবা-মায়ের সম্মান রক্ষার্তে। তা সেদিন করেননি ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ। বড় ক্ষমতাবান চেয়ারে বসে সেদিন তিনি অরিত্রীকে ও তার বাবা-মাকে শুধু একজন দোকানের খদ্দের ভেবে ছিলেন। হয়তো আজ অরিত্রী চলে যাবে কাল মৌসুমী নামে আরেকজন আসবে টাকার বিনিময়ে। স্বল্প সুতোয় কি ভাবে কলেজের টিসি দিয়ে বিদায়ের চুড়ান্ত রীতি তিনি সেদিন বেধে দিয়ে একটি সংসার ও একটি স্বপ্নকে ধংস করলেন। তা হয়তো তার কঠিন মনে কোনদিন আসবে না। কারন দশ লক্ষ টাকাই যেখানে অনেক নষ্ট স্বপ্নের সমাধানের মাপকাঠি। 

দেশের নামী-দামী স্কুল এন্ড কলেজের সব্বোর্চ মাত্রার শিক্ষক তিনি। যা ইচ্ছা তাই করতে পারেন রাজধানীর বুকে। অবাধ এই ক্ষমতায় তাদেরকে অনেক বেশী নমনীয় হওয়ার থেকে অনমনীয় করে তুলেছে। রাজধানী ও জেলা শহরের বেশীর ভাগ নামী-দামী স্কুল কলেজে চলে আসছে এই অসম রীতি। এই ব্যতিক্রম রীতি থেকে বের হয়ে এসে শিক্ষক যেদিন শিক্ষার্থীর পরম বন্ধু হতে পারবে সেদিন দেশের অরিত্রীরা হাসঁবে মুক্ত হাওয়াই। পাল্টে যাবে এই নিয়মের বেড়া জালে আটকে থাকা শিক্ষা ব্যবস্থা।    

এরই মাঝে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী অরিত্রীর আত্মহত্যার ঘটনার পরে অভিবাবকরা তাদের দীর্ঘদিনের অভিযোগ তুলে ধরেছেন গনমাধ্যম ও শিক্ষা মন্ত্রীর কাছে। সেখানে তারা স্কুলের নানা অনিয়মের কথা ফাসঁ করেছেন। যা হয়তো বলেননি ভয়ে এতদিন যদি মেয়েদের কিছু হয়। 

তারা জানিয়েছেন নিয়মের বাইরে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। এখানে নির্দিষ্ট সংখ্যক সিট আছে কিন্তু তারা সেটা না মেনে তারা অতিরিক্ত শিক্ষার্থী ভর্তি করে প্রতি বছর। সেখানে একজন শিক্ষার্থী ভর্তি করাতে ১০ লাখ টাকাও নেয়া হত এমন তথ্যও মন্ত্রী জানতে পেরেছেন। তারা যতো শিক্ষার্থী ভর্তির অনুমোদন পায় তার চেয়ে অনেক বেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করেন বলেও শিক্ষা মন্ত্রী প্রমান পেয়েছেন। এদিকে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শাখা খোলার অনুমোদন শিক্ষা মন্ত্রনালয় দেই নাই অথচ তারা শাখা খুলে ফেলেছে। 

এখন তদন্ত হচ্ছে, ঘটনার সাথে জরিত তিনজন মৃত্যুর সাথে প্ররোচনা খুনিকে আটক করাও হবে হয়তো। কিন্তু অরিত্রীর বাবা-মা কি বুকের ছেড়াঁ ধন অরিত্রীকে আর ফিরে পাবে। এখন জীবনের বাকি পথটি তাদের হাতরে ফিরতে হবে অরিত্রীর বেচেঁ থাকা পনেরটি বছরের সৃতি নিয়ে।  

সঞ্জিব দাস, 
লেখক- সাংবাদিক - ০১৭৪৩৯২৩৩৭১। 

Post Top Ad

Responsive Ads Here