গণভবনের ইট-পাথরও থাকবে না: রিজভী - সময় সংবাদ | Popular Bangla News Portal

শিরোনাম

Friday, October 18, 2019

গণভবনের ইট-পাথরও থাকবে না: রিজভী

সময় সংবাদ ডেস্ক//
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, জনগণের ধৈর্য ও সহ্যের বাঁধ ভেঙে গেছে। মিডনাইট ভোট ডাকাতির পর গোটা দেশের ভোট বঞ্চিত মানুষ এমনভাবে ক্ষিপ্ত হয়ে আছে যে, গণবিস্ফোরণ শুরু হলে গণভবনের ইট-পাথরও থাকবে না।

শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টায় ভারতের সাথে অবৈধ চুক্তি ও বুয়েটের মেধাবী ছাত্র আবরার ফাহাদকে হত্যার প্রতিবাদে এবং বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে মিছিল শেষে আয়োজিত এক পথসভায় তিনি এসব কথা বলেন।

মিছিলটি নয়াপল্টনস্থ বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে শুরু হয়ে নাইটিঙ্গেল মোড় ঘুরে আবারও বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নিকট এসে শেষ হয়। মিছিলে নেতৃত্ব দেন বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী। পথসভায় সভাপতিত্ব করেন জাতীয়তাবাদী মৎস্যজীবী দলের আহ্বায়ক রফিকুল ইসলাম মাহতাব এবং সঞ্চালনা ছিলেন সদস্য সচিব আবদুর রহিম।

রুহুল কবির রিজভী বলেন, এদেশের জনগণ গণভবনের নাম পরিবর্তন করে ‘সান্ত্বনা ভবন’ নামে ডাকতে শুরু করেছেন। ডাক্তারের ‘সরি’ শব্দটি যেমন রোগীর স্বজনের কাছে চরম ভয়ংকর, গণভবনের ‘সান্ত্বনা’ শব্দটিও স্বজনহারাদের কাছে তেমনই ভয়ংকর ! সান্ত্বনার নামে গণভবনের এই প্রহসন যেন দেশবাসীকে আর দেখতে না হয়।

তিনি বলেন, শেখ হাসিনা প্রায়শ:ই তার নিজের স্বজন হারানোর কথা বলে কাঁদেন। স্বজন হারানোর সুবিধাভোগী হিসেবে তিনি কয়েক বার প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। আপনজনকে হারিয়ে আপনি যেমন ব্যথাতুর হন, অন্যদিকে আপনার শোষণ-পীড়ণে বাংলাদেশের হাজার হাজার পরিবার আজ সর্বশান্ত, স্বজনহীন-গৃহহীন। তারা নীরবে-নিভৃতে কাঁদেন, কিন্তু তাদের কান্না তো টেলিভিশনে দেখানো হয় না।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, এ অবৈধ সরকারের লোকজনের দ্বারা কোনো হত্যাকা-ের পর যখন আর সামাল দিতে পারে না, তখন তারা নাটক তৈরি করে। ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার জন্য সরকার অনুগত প্রচার মাধ্যমকে ব্যবহার করে বিভ্রান্তিকর অপপ্রচার চালায়। হত্যার শিকার হতভাগ্যের পিতা-মাতা বা স্বজনদের গণভবনে ডেকে নিয়ে সান্তনার নামে প্রহসনের নাটক তৈরি করা হয়। প্রধানমন্ত্রী হত্যাকারীকে সর্বোচ্চ শান্তির গ্যারান্টি দেন বটে, কিন্তু নিহত ব্যক্তির নামে অপপ্রচার চালাতে থাকেন। যেমন আবরার ফাহাদ হত্যাকে শিবিরের কর্মী সন্দেহে হত্যা হিসেবে চালানো হচ্ছে। একইভাবে শহীদ আবরার ফাহাদ হত্যাকা-ের পর ফুঁসে ওঠা আন্দোলনকে স্তিমিত করার জন্য তার পিতা-মাতাকে ডেকে নেয়া হয় গণভবনে। সেখানে প্রধানমন্ত্রী আবরার ফাহাদ হত্যাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করার আশ্বাস দেন।

তিনি বলেন, জনগণ নিশ্চয়ই ভুলে যায়নি যে, ইতোপূর্বে ইলিয়াস আলীর স্ত্রী-সন্তানদেরও গণভবনে ডেকে নিয়ে সান্তনা দেয়া হয়েছিল। তাকে উদ্ধার এবং জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির আশ্বাস দেয়া হয়েছিল। কিন্তু আজও ইলিয়াস আলীর পরিবার তার সন্ধান পায়নি। সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনির মা-বাবাও গণভবনের আশ্বাস পেয়েছিলেন। বিশ্বজিৎ এর মা-বাবা, নুসরাতের মা-বাবা, তনুর বাবাকেও গণভবনে ডেকে নিয়ে বিচারের গ্যারান্টি ও সান্তনা দেয়া হয়েছিল। কিন্তু এইসব মামলার কি পরিণতি হয়েছে দেশবাসী তা জানেন।

রুহুল কবির রিজভী বলেন, বুয়েটের মেধাবী শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যা নিছক একটি হত্যাকা- নয়। আমাদের রাষ্ট্র, সমাজ ও চিন্তা চেতনায় যে পচন ধরেছে-আবরার হত্যা তারই নগ্ন বহি:প্রকাশ। অবৈধ চুক্তি নিয়ে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাসই ছিল আবরার ফাহাদের অপরাধ। আবরার বাংলাদেশের স্বার্থের পক্ষে, বাংলাদেশের জনগণের ন্যায্য অধিকারের পক্ষে কথা বলায় এ দেশিয় তাবেদাররা তাকে সহ্য করতে পারেনি। আর পারেনি বলেই আবরারকে নির্মমভাবে হত্যা করে আধিপত্যবাদী অপশক্তি বাংলাদেশের বিরোধী গোষ্ঠীকে তারা একটি সতর্ক বার্তা দিয়েছে। তাই আবরারের মৃত্যু কোনো সাধারণ মৃত্যু নয়।

তিনি বলেন, আবরারের মৃত্যু দেশপ্রেমিক জনগণকে একটি সুষ্পষ্ট বার্তা দিয়েছে, আর তা হলো সাহসিকতার সাথে বাংলাদেশের স্বার্থ রক্ষায় ঐক্যবদ্ধ হয়ে বর্তমান আওয়ামী জুলুমবাজ সরকারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া। আর এই বার্তা থেকেই বিএনপিসহ সকল রাজনৈতিক দল, সংগঠন ও সর্বস্তরের মানুষ আবরার হত্যাকা-ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছে। আধিপত্যবাদী অপশক্তি এবং তাদের এ দেশিয় দোসরদের বিরুদ্ধে দেশপ্রেমিক জনগণের আন্দোলনের মূর্ত প্রতীকে পরিণত হয়েছেন শহীদ আবরার ফাহাদ। আবরার ফাহাদ বর্তমান দুরাচার সরকারের বিরুদ্ধে কেবল বলিষ্ঠ কন্ঠস্বরই নয়, শহীদ আবরার এখন দেশপ্রেমের প্রতীক।

কারাগারে বেগম খালেদা জিয়াকে কত্যার নীলনকশা চালানো হচ্ছে অভিযোগ করে বিএনপির এ নেতা বলেন, দেশের সর্বস্তরের মানুষের অব্যাহত দাবী সত্বেও শারীরিকভাবে গুরুতর অসুস্থ জনপ্রিয় দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিচ্ছেন না প্রধানমন্ত্রী। সরকার দেশনেত্রীকে কোনোভাবেই মুক্তি না দিয়ে কারাগারে হত্যার নীলনকশা বাস্তবায়নে জোরালো তৎপরতা চালাচ্ছে। এখন আওয়ামী লীগের নেতারা প্রকাশ্য জনসমাবেশে বুক ফুলিয়ে ঘোষণা করছেন বেগম খালেদা জিয়াকে আমৃত্যু কারাগারে বন্দী রাখা হবে।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ বলেছেন, ‘বেগম খালেদা জিয়াকে বাকি জীবন কারাগারেই কাটাতে হবে।’ তার কথায় প্রমাণ হয়, দেশে আইন আদালত, বিচার-আচার কিছুই নেই। ক্ষমতাসীন দলের ফ্যাসিষ্টরা প্রকাশ্য রাজপথেই রায় ঘোষণা করছেন। তাদের কত বড় স্পর্ধা হলে এদেশের চারবারের প্রধানমন্ত্রী, সর্বকালের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী, গণতান্ত্রিক আন্দোলনের জীবন্ত কিংবদন্তী বেগম খালেদা জিয়াকে কারাগারে বন্দী রেখে হত্যার হুমকী দিতে পারে।

রিজভী আরও বলেন, চারদিক থেকে পতনের আওয়াজ শুনে হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়ে পড়েছে বর্তমান অবৈধ সরকার। দেশের মানুষের দু:সাহসী আন্দোলনের ভয়ে তাদের অন্তরাত্মায় ভূমিকম্পণ সৃষ্টি হয়েছে।

চারদিক থেকে পতনের আওয়াজ শুনে হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়ে পড়েছে বর্তমান অবৈধ সরকার। দেশের মানুষের দু:সাহসী আন্দোলনের ভয়ে তাদের অন্তরাত্মায় ভূমিকম্পণ সৃষ্টি হয়েছে। দেশনেত্রীকে রাজনীতি এবং নির্বাচন থেকে দূরে সরিয়ে রেখে একতরফাভাবে নির্বাচন করার পর এখন তাদের ভয়ের মাত্রা আরো বেড়ে গেছে। এ কারণে দেশনেত্রীকে জামিন দেয়া হচ্ছে না। সুচিকিৎসা না দিয়ে বন্দী রেখে একজন মহিয়সী নারীর ওপর ইতিহাসের বর্বরতম নিপীড়ন চালানো হচ্ছে। আমরা দৃঢ়ভাবে বলতে চাই, অবিলম্বে দেশনেত্রীকে মুক্তি দিয়ে সুচিকিৎসার সুযোগ দিন। অন্যথায় তার সকল দায়-দায়িত্ব সরকারকে নিতে হবে। জনগণ অন্যায়কারীদের হিসাব রাখছেন। তারা সব কড়ায়-গন্ডায় বুঝে নিবে।

No comments: