মতামত //সময় সংবাদ ডটকমঃ
এবারের প্রতীক্ষিত বৃষ্টি নিছক বৃষ্টি নয়। প্রায় পাঁচ ছয় মাস ধরে খরা এবং অনাবৃষ্টির কারণে মাটি শুকিয়ে চৌচির হয়ে যায়। বৃষ্টির সংস্পর্শ পাওয়া মাত্রই চারদিকে ভেজা মাটির ঘ্রাণ সবাইকে আনন্দ ফিরিয়ে দেয়।
গত কাল ২রা মে রবিবার রাত ৯ টায় বৃষ্টি শুরু হয় অন্যান্য জেলার মতো ফরিদপুর জেলার চরভদ্রাসন উপজেলাতেও। উপজেলাবাসীর মনে স্বস্তি ফিরে পায়। এর কয়েকদিন আগে অল্প কয়েকটি জেলায় গুড়িগুড়ি বৃষ্টি দেখা মিললেও কাউকেও স্বস্তি দিতে পারে নি। প্রায় ঘন্টা দুয়েক একটানা মুশলধারে বৃষ্টি, হালকা বজ্রপাত এবং প্রচন্ড ঝড়োবেগ ছাড়াই শান্ত পরিবেশেই বৃষ্টির স্পর্শে মানুষ এবং জমিনকে শান্ত করে দিয়েছে।
করোনার লকডাউনে মানুষ ছিন্নভিন্ন৷ সেই সাথে তীব্র তাপপ্রবাহে ব্যক্তি জীবনে দেখা দিয়েছে অস্বস্তি, অধৈর্য, বিতৃষ্ণা এবং নাভিশ্বাস। প্রচন্ড তাপের রোদ উপেক্ষা করে মানুষ তার ভাগ্যান্বষনে চলে গিয়েছে তার কর্মক্ষেত্রে। অনেকে শহর ছেড়ে গ্রামমুখী হয়েছে। মানুষের পাশাপাশি পশুপাখি জীবজন্তুর জীবনেও খরা এবং অনাবৃষ্টির কারণে একই অবস্থা দেখা গিয়েছে।
তীব্র তাপপ্রবাহে পুড়ছে সারা দেশ।নেই কোথাও বৃষ্টি। রোজার সঙ্গে তীব্র গরম যুক্ত হয়ে জনজীবনে ভোগান্তি চরমে উঠেছে। গতমাসের রবিবার (২৫ এপ্রিল) দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠেছে ৪১ দশমিক ৩ ডিগ্রিতে, যা রেকর্ড হয়েছে যশোরে। এটি গত সাত বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড।
বৃষ্টির দেখা মেলার না কারণে এবার কৃষকেরা পড়েছে বিপাকে। তারা ক্ষেতে হাল দিয়ে নতুন ফসল রোপণের আশায় আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। কখন মিলবে বৃষ্টি এবং কখন এরা ফসল বুনবে।
পুরো চৈত্র এবং বৈশাখ মাসের মাঝামাঝি সময়ে কৃষকেরা নতুন মৌসুমের জন্যে ফসল ফলাতে জমি চাষ করে থাকে। বৃষ্টির দেখা মেলার সাথে সাথেই শুরু করে দেয় ক্ষেতের কাজ।
এবারের অনাবৃষ্টি এবং খরার কারণ ফসলী জমি নামি (ঠিক সময়ে ফসল রোপণ না করতে পারা) হওয়ার পাশাপাশি চরাঞ্চলে দেখা দিয়েছে ফসল পুরে যাওয়া। কৃষকের শতশত বিঘার বাদাম পুরে গিয়েছে। করোনা মহামারীর মধ্যে অনেকে কৃষির দিকে ঝুকে পড়েছিলো। অনেকে কাজ হারিয়ে গ্রামে চলে আসলে এই কৃষি কাজের সাথে যুক্ত হয়ে পড়ে। কিন্তু খরা এবং অনাবৃষ্টির কারণে তাদের হতাশ করে দিয়েছে।
বাংলাদেশে আগে গ্রীষ্ম মৌসুমটা কমবেশি হালকা পাতলা বৃষ্টি দেখা মিলতো । কিন্তু এবারের চিত্র পুরো ব্যতিক্রম ।
এবার দেশের প্রতিটি জেলা ই পাঁচ ছয় মাস ধরে বৃষ্টির দেখা মেলেনি। এর কারণে দেশের বিভিন্ন জেলায় জেলায় বৃষ্টির জন্যে মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের নামাজ আদায় করতে দেখা গিয়েছে। কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, নরসিংদী, ফরিদপুর, মাদারীপুরসহ অনেক জেলাতেই বৃষ্টির জন্যে নামাজ আদায় করা হয়েছে। সেখানে দুই রাকাআত নামাজ পড়ে বৃষ্টির জন্যে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করতে দেখা গিয়েছে।
বৃষ্টির দেখা মিললে কৃষকেরা নতুন ফসল ফলানোর জন্যে ক্ষেতে আবার হাল দেওয়া শুরু করেছে। জনজীবনে স্বস্তি ফিরে এসেছে এবং পশুপাখিদের মধ্যেও প্রাণচঞ্চলতা ফিরে পেয়েছে।
নাজমুল
শিক্ষার্থীঃ দর্শন বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।