সময় সংবাদ ডেক্সঃ
লাইলাতুল কদর
লাইলাতুল কদর ইসলাম ধর্ম অনুসারীদের কাছে অনেক পবিত্র একটি রাত।এই রাতের তাৎপর্য অপরিসীম ।লাইলাতুল কদরের ইবাদত কে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ ইবাদত হিসেবে আখ্যায়িত করা হয় ।
৬১০ খ্রিস্টাব্দে রমজান মাসের ২৭ তারিখ রাত্রিতে নূর পাহাড়ের হেরা গুহায় রাসূল মুহাম্মদ (সাঃ) এর উপর পবিত্র কোরআন নাজিল হয় । জিব্রাইল( আঃ) এর মাধ্যমে কুরআনের আয়াতগুলো প্রথম নাজিল হয় । এভাবে জিব্রাইল (আঃ) এর ওহীর মাধ্যমে দীর্ঘ ২৩ বছর যাবৎ কোরআন খন্ড খন্ড আকারে নাজিল হতে থাকে ।
ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের জন্য এই রাত অনেক তাৎপর্যপূর্ণ। পবিত্র কোরআনেও কদর সূরা এর মাধ্যমে এই রাতের তাৎপর্য বর্ণনা করা হয়েছে ।
শবে কদরের রাত্রি কে শ্রেষ্ঠ রাত্রি হিসাবে আখ্যায়িত করা হয়েছে ।
পবিত্র এই রাত্রি সম্পর্কে আল-কোরআনের সূরা কদর বিশ্লেষণ করে জানা যায় ।
নিশ্চয়ই আমি কোরআন অবতীর্ণ করিয়াছি মহিমান্বিত রজনীতে ।
(আয়াত:১)
আর মহিমান্বিত রজনী সম্পর্কে তুমি কি জানো?
(আয়াত: ২)
মহিমান্বিত রজনী সহস্র মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ ।
(আয়াত: ৩)
সেই রজনীতে ফেরেশতাগণ ও রুহ অবর্তীর্ণ হয়
প্রত্যেক কাজে তাহাদের প্রতিপালকের অনুমতিক্রমে ।
(আয়াত: ৪)
শান্তিই শান্তি, সেই রাতে ঊষার আবির্ভাব হওয়া পর্যন্ত ।(আয়াত: ৫)
হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সাঃ) ইরশাদ করেছেন,
যে ব্যক্তি ঈমান ও বিশ্বাসের সাথে এবং সোয়াবের আসায় রমজানের রোজা রাখে, শবে কদরের রাত্রে দাঁড়ায় তার পূর্বের সব গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়।
হযরত ইবনে ওমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করিম (সাঃ) এর কয়েকজন সাহাবী কে রমজানের শেষ সাত রাতে লাইলাতুল কদর দেখানো হয়েছিল। তখন রাসুল (সাঃ) বললেন, আমি দেখতে পাচ্ছি তোমাদের স্বপ্ন শেষ সাত রাতের সাথে সামঞ্জস্যশীল হয়ে গেছে । তাই যে ব্যক্তি তা খোঁজ করতে চায়, সে যেন শেষ সাত রাতেই তা খোঁজ করে ।
হযরত আয়েশা ( রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সাঃ)
ইরশাদ করেছেন-তোমরা লাইলাতুল কদর রমজানের শেষ দশ দিনের বিজোড় রাতে তালাশ করো ।
রাসুলুল্লাহ (সাঃ) রমজানের শেষ দশ দিনে ইতেকাফে বসতেন এবং বলতেন তোমরা লাইলাতুল কদর শেষ দশকে তালাশ । যখন নয় রাত অতিক্রম হয়ে যায় অথবা সাত রাত বাকি থাকে (অর্থাৎ ২৩ রাত্রি হতে ২৯ তারিখের রাত্রি পর্যন্ত) ।
ওবাদা ইবনে (রাঃ) থেকে বর্ণিত,রাসূলুল্লাহ (সাঃ)
একতা আমাদেরকে লাইলাতুল কদর সম্পর্কে অবহিত করার জন্য বেরিয়ে আসেন। এমন সময় দু'জন মুসলিম বিবাদে লিপ্ত ছিল। তখন তিনি বললেন, আমি বের হয়ে এসেছিলাম তোমাদেরকে লাইলাতুল কদরের সঠিক তারিখ অবহিত করার জন্য, কিন্তু অমুক অমুক ব্যক্তি ঝগড়ায় লিপ্ত ছিল, তাই তার সঠিক এলেম আমার থেকে উঠিয়ে নেওয়া হয়। সম্ভবত এর মধ্যেই তোমাদের কল্যাণ নিহিত আছে। অতএব তোমরা লাইলাতুল কদর শেষ দশ দিনের পঞ্চম,সপ্তম ও নবম (২৫,২৭,২৯) রাতে খোঁজ করো ।
হযরত আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন রমজানের শেষ দশক আসতো তখন রাসুলুল্লাহ (সাঃ)
বেশি বেশি ইবাদতের প্রস্তুতি নিতেন এবং রাত্রে জেগে থাকতেন ও পরিবার পরিজনদের জাগিয়ে দিতেন।
কোরআনে বর্ণিত আছে তোমরা প্রচুর প্রচুর এবাদত বন্দেগী করো আমার কাছে ক্ষমা চাও ।আল্লাহ নিশ্চয়ই ক্ষমাশীল । হাজার রাতের ইবাদত এর থেকেও শ্রেষ্ঠ এই রাতের ইবাদত ।
ইসলাম ধর্মের অনুসারীরা অনেক গুরুত্ব ও শ্রদ্ধার সঙ্গে এই রাত্রি পালন করে আসছে। রমজানের শেষ দশকের বিজোড় রাতগুলোতে তারা প্রচুর ইবাদত-বন্দেগী করে থাকে। মসজিদগুলোতে
মানুষের ঢল নামে । তারা প্রচুর পরিমাণে ইবাদত, বন্দেগী নামাজে মশগুল থাকে, আল্লাহকে স্মরণ করে।