সঞ্জিব দাস, ফরিদপুর:
ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক মোঃ কামরুল আহ্সান তালুকদার পিএএ একজন অন্যরকম মানুষ এমন কথাই বলছেন ফরিদপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে সেবা নিতে এসে এক পিতা। তিনি বলেন, স্যারের কাছে এসে বলা মাত্রই তিনি আমার স্কুল পড়ুয়া ছেলের জেল থেকে মুক্তির ব্যাপারে সম্পূর্ণ ব্যবস্থা করেছেন। সেই মামলাটি ছিল অনভিপ্রেত একটি মামলা আর সেই মামলায় আমার ছেলেকে জেলে দেয়া হয়েছিল। জেল থেকে মুক্তির পর তিনি তার ছেলেকে নিয়ে ছুটে চলে আসেন তার কার্যালয়ে জেলা প্রশাসকের সাথে দেখা করতে।
এর আগে জেলা প্রশাসক ফরিদপুর সদরের কানাইপুর ইউনিয়নের ২৯ ইঞ্চি উচ্চতার নাইমা সুলতানা পাখির একটি নিউজ পত্রিকাতে প্রকাশ হলে তিনি শিক্ষার্থীকে ঠেকে এনে একটি ল্যাপটপ উপহার দেন। একই সাথে তার পড়াশোনার বিষয়ে খোঁজ-খবর নেন এবং পড়াশুনায় সাহায্য সহযোগিতা করবেন বলে তিনি বলেন।

শহরের রিক্সা চালক হায়দার আলী ফকির রিক্সা চালিয়ে কষ্ট করে লেখা পড়া করান তিন সন্তানকে। বড় দুই সন্তান মাস্টার্স অধ্যয়নরত, ছোট সন্তান এসএসসি পরীক্ষার্থী। এই মানুষটির একমাত্র সম্বল রিক্সাটি চুরি হয়ে যায়। অনেক খোঁজাখুঁজি করে না পেয়ে অসহায় হয়ে তিনি আসেন জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে। তার অবস্থার কথা শুনে জেলা প্রশাসক তাকে একটি রিক্সা উপহার দিয়ে জীবিকার ব্যবস্থা করে দেন।
মে-জুন মাসে ফরিদপুরের শহরের মাঝখানে ফরিদপুরের হৃদপিণ্ড কুমার নদ কচুরিপানায় আবদ্ধ হয়ে পড়ে। বিষয়টি নিয়ে পত্রিকায় নিউজ হওয়ার সাথে সাথে ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক অসামান্য ভূমিকা পালন শুরু করেন তিনি।
এ লক্ষ্যে তিনি গত ১৭ জুন সকাল সাতটায় কুমার নদের ১০ টি পয়েন্টে কচুরিপানা অপসারণ কর্মসূচি হাতে নেন তিনি। এ আয়োজনকে সফল করার জন্য শহরের বড় বিসর্জন ঘাট সংলগ্ন উদ্বোধন করা হয় কচুরিপানা অপসারণের কর্মসূচি।
এবিষয়ে জেলা প্রশাসক বলেন, শহরের কুমার নদ ফরিদপুরের হৃদপিণ্ড। একে রক্ষা করার জন্য যা যা প্রয়োজন জেলা প্রশাসন তাই করবে। এরই ধারাবাহিকতায় একযোগে শহরের আড়াই কিলোমিটার এলাকার দশটি স্পটে ১০ হাজার স্বেচ্ছাসেবী কচুরিপানা অপসারণে নদে নামে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আরও লোকজন অংশগ্রহণ করে।
জেলা প্রশাসক বলেন, চোখের সামনে একটা নদী মারা যাবে এটা হতে পারে না। যেকোনো মূল্যেই এ কচুরিপানা অপসারণ করে কুমার নদের ঐতিহ্য বজায় রাখা হবে। তাইতো চ্যালেঞ্জ জেনেও এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবে এ কাজে আমি সবার সাড়া পেয়েছিলাম।
গত মঙ্গলবার (১২ সেপ্টেম্বর) জেলা প্রশাসনের আয়োজনে জেলা প্রশাসক মো. কামরুল আহসান তালুকদারের নির্দেশনায় ফরিদপুরে এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা প্রদান করা হয়েছে। মঙ্গলবার বিকালে শেখ রাসেল স্টেডিয়ামে জেলার এসএসসি, দাখিল ও সমমান পরীক্ষায় জিপিএ-৫ প্রাপ্ত ১ হাজার ২৬ জন কৃতি শিক্ষার্থীকে সংবর্ধনা দেয়া হয়।
এভাবে বহু ভালো ভালো কাজের সাক্ষী হয়ে রয়েছেন ফরিদপুর জেলা প্রশাসক মোঃ কামরুল আহ্সান তালুকদার পিএএ। জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে সেবা নিতে আসা সেবা প্রার্থীরা জানান কোন বিষয় নিয়ে স্যারের কাছে আসলে কখনোই বিমুখ করেন না তিনি। ধৈর্য ধরে কথা শুনে ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক হিসেবে যোগদানের পর থেকে দিন-রাত পরিশ্রম করে চলছেন তিনি। বিভিন্ন মানবিক উদ্যোগ গ্রহণ করে জনমনে ব্যাপক সাড়া ফেলেছেন। জেলার এমন কোনো জনপদ নেই যেখানে তার মানবিকতার স্পর্শ পড়েনি। তাঁর এমন সব শুভ ও কল্যাণকর উদ্যোগের সুফল পেয়েছেন শত শত অসহায় সাধারণ মানুষ।
তিনি ফরিদপুরে যোগদান করার পরে গত ২৩ মার্চ তারিখে শেখ জামাল স্টেডিয়ামে ঐতিহাসিক বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ ইংরেজী, স্প্যানিশ, ফান্স, জাপানি, চাইনিজ, হিন্দি ও আরবিসহ সাতটি (বিদেশী ভাষায়) উপস্থাপনের আয়োজন করেন। এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তার এই ব্যতিক্রমধর্মী এ আয়োজনে মুগ্ধ হন ফরিদপুর সহ গোটা দেশবাসী।
এছাড়াও মানবিক, বিচক্ষণ এই জেলা প্রশাসকের কিছু বিশেষ উদ্যোগের মধ্যে রয়েছে, ‘আমার সন্তান জাতির সম্পদ’ এই প্রতিপাদ্যকে উপজীব্য করে অভিভাবক সমাবেশ। শিক্ষকরাই জাতি গড়ার মূল্য কারিগর প্রতিপাদ্য নিয়ে শিক্ষক সমাবেশ, শিক্ষার্থীদের ডাটাবেজ, ৭ মার্চের ভাষণ প্রতিযোগিতা, আশ্রয়ণ প্রকল্প ও আশ্রয়ণ শুমারি, স্পট ডিলিং লাইনেন্স বিতরণ, অভিবাসী ও প্রবাসী শুমারি, বেদে শুমারি, ১০০ জন অংশীজনের সমন্বয়ে আযোজিত বিতর্ক বিষয়ক প্রশিক্ষণ, ট্রান্সফরমার চুরি রোধ করতে স্মার্ট ডিভাইস, জাতীয় দিবস সূমহের সফল উদযাপন, জসীম মেলা, অমর একুশে বই মেলা, বিসিক উদ্যোক্তা মেলার সফল আয়োজন, চরমপন্থীদের পুনর্বাসন, মাদকাসক্ত নিরাময় ও পুনর্বাসন, স্মার্ট বাংলাদেশের সকল সুবিধা ও স্মার্ট ডিস্ট্রিক্ট ইনোভেশন চ্যালেঞ্জ কর্মশালা।
ফরিদপুরের বিশিষ্টজনদের আশা ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক কামরুল আহ্সান তালুকদার তার দক্ষতা ও যোগ্যতা দিয়ে ফরিদপুরের মান উন্নয়ন এবং ফরিদপুরকে এগিয়ে নিতে আরো কার্যকর ভূমিকা গ্রহণ করবেন।