রোহিঙ্গা গ্রাম গুঁড়িয়ে দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে সরকারি অবকাঠামো - সময় সংবাদ | Popular Bangla News Portal

Breaking

Post Top Ad

Responsive Ads Here

বুধবার, সেপ্টেম্বর ১১, ২০১৯

রোহিঙ্গা গ্রাম গুঁড়িয়ে দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে সরকারি অবকাঠামো


সময় সংবাদ ডেস্ক-
মিয়ানমারে মুসলিম রোহিঙ্গাদের সব গ্রাম গুঁড়িয়ে দিয়ে সেখানে পুলিশ ব্যারাক, সরকারি ভবন ও শরণার্থী ক্যাম্প নির্মাণ করা হয়েছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক অনুসন্ধানে এ তথ্য উঠে এসেছে। স্যাটেলাইট চিত্র থেকে বিবিসি জানতে সমর্থ হয়েছে, কমপক্ষে চারটি রোহিঙ্গা গ্রামকে পুরোপুরি সরকারি অবকাঠামোতে রূপান্তর করা হয়েছে।

২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে সেনা অভিযান বন্ধের ঘোষণা দিয়ে আগস্টে আবারও ক্লিয়ারেন্স অপারেশনের (শুদ্ধি অভিযান) ঘোষণা দেয় মিয়ানমার। রিগনভিত্তিক মার্কিন সংবাদ মাধ্যম ইউরো এশিয়া রিভিউ ২০১৮ সালের মার্চের শুরুতে জানায়, ২০১৭ সালে শেষ থেকে মিয়ানমার সরকার ভারী যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে কমপক্ষে ৪৫৫টি গ্রামের সব অবকাঠামো ও ফসলের ক্ষেত ধ্বংস করে দিয়েছে। জানুয়ারিতে অ্যামনেস্টির সবশেষ গবেষণায় রাখাইনে রোহিঙ্গাদের বহু গ্রাম জ্বালিয়ে ও বুলডোজারে গুড়িয়ে দেওয়ার আলামত উঠে এসেছিল। ফেব্রুয়ারিতে মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ দাবি করে, মিয়ানমার সেনাবাহিনী অর্ধশতাধিক গ্রাম বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দিয়েছে। ওই বছর মার্চের শুরুতে নতুন করে অ্যামনেস্টির দেওয়া বিবৃতি থেকে অন্তত ৩টি সামরিক ঘাঁটি ও রাস্তাঘাট নির্মাণ চলমান থাকার কথা জানা যায়। এবার বিবিসির প্রতিবেদনেও গ্রাম নিশ্চিহ্ন করে সরকারি অবকাঠামো নির্মাণের প্রমাণ উঠে এলো।

২০১৭ সালে রাখাইনে সেনাবাহিনীর কথিত শুদ্ধি অভিযান শুরুর কিছুদিন পরেই মিয়ানমার সরকারের তত্ত্বাবধানে অন্যান্য সংবাদমাধ্যমের মতো করে বিবিসির সাংবাদিকও সেখানে যান। তখন কর্মকর্তারা রাখাইন রাজ্যের ওই গ্রামগুলোতে ভবন নির্মাণের বিষয়টি অস্বীকার করেন। সেখানে প্রবেশাধিকার কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত ছিল। পুলিশি নজরদারির বাইরে সেখানকার মানুষের সাক্ষাৎকার ও চিত্র গ্রহণে সাংবাদিকদের অনুমতি ছিল না। বিবিসি তাদের নতুন প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ওই সরকারি সফরে গিয়েও রোহিঙ্গা সম্প্রদায়কে জাতিগতভাবে নির্মূলের স্পষ্ট প্রমাণ পেয়েছে তারা। তবে এ ব্যাপারে সরকারি কর্তৃপক্ষ বিবিসির সঙ্গে কথা বলতে রাজি হয়নি।

রোহিঙ্গা গ্রামের স্যাটেলাইট চিত্র বিশ্লেষণ করেছে অস্ট্রেলিয়ান স্ট্র্যাটেজিক পলিসি ইনস্টিটিউট নামের একটি প্রতিষ্ঠান। তারা ধারণা করছে, ২০১৭ সালে ক্ষতিগ্রস্ত কমপক্ষে ৪০ ভাগ রোহিঙ্গা গ্রাম সম্পূর্ণরুপে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এটাকে ‘জাতিগত নিধন’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে জাতিসংঘ। তবে সেনাবাহিনীর ওই বড় আকারের হত্যাকে অস্বীকার করেছে মিয়ানমার।

প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে রোহিঙ্গারা রাখাইনে থাকলেও মিয়ানমার তাদের নাগরিক বলে স্বীকার করে না। উগ্র বৌদ্ধবাদকে ব্যবহার করে সেখানকার সেনাবাহিনী ইতিহাসের বাঁকে বাঁকে স্থাপন করেছে সাম্প্রদায়িক অবিশ্বাসের চিহ্ন। ছড়িয়েছে বিদ্বেষ। ৮২-তে প্রণীত নাগরিকত্ব আইনে পরিচয়হীনতার কাল শুরু হয় রোহিঙ্গাদের। এরপর কখনও মলিন হয়ে যাওয়া কোনও নিবন্ধনপত্র, কখনও নীলচে সবুজ রঙের রশিদ, কখনও ভোটার স্বীকৃতির হোয়াইট কার্ড, কখনও আবার ‘ন্যাশনাল ভেরিফিকেশন কার্ড’ কিংবা এনভিসি নামের রং-বেরঙের পরিচয়পত্র দেওয়া হয়েছে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মানুষকে। ধাপে ধাপে মলিন হয়েছে তাদের পরিচয়। ক্রমশ তাদের রূপান্তরিত করা হয়েছে রাষ্ট্রহীন বেনাগরিকে। ২০১৭ সালের ২৩ নভেম্বর একটি প্রত্যাবাসন চুক্তি স্বাক্ষর করে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার। তবে সেই থেকে এখন পর্যন্ত একজন মানুষেরও প্রত্যাবাসন করা হয়নি। গত মাসে নেওয়া রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রত্যাবাসনের দ্বিতীয় প্রচেষ্টাও ব্যর্থ হয়েছে।

Post Top Ad

Responsive Ads Here