দেশে বজ্রপাতে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে, অধিকাংশই কৃষক ও শ্রমিক - সময় সংবাদ | Popular Bangla News Portal

Breaking

Post Top Ad

Responsive Ads Here

শনিবার, অক্টোবর ১২, ২০১৯

দেশে বজ্রপাতে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে, অধিকাংশই কৃষক ও শ্রমিক

সময় সংবাদ ডেস্ক//
দেশে বজ্রপাতে নিহতের সংখ্যা বাড়ছে। প্রতিবছর বিশ্বে বজ্রপাতে মৃত্যুর এক-চতুর্থাংশই ঘটে বাংলাদেশে। দেশে প্রতি বছর গড়ে ২৫০ জনের বেশি মারা যান বজ্রপাতে। বেসরকারী হিসাবে মৃত্যুর সংখ্যা আরও বেশি। প্রতি বছর মার্চ থেকেই শুরু হয় বজ্রপাত। চলতি বছর বজ্রপাতে মৃত্যুর সংখ্যা ইতোমধ্যে ৮০ ছাড়িয়ে গেছে। কিন্তু বাংলদেশে বজ্রপাত নিয়ে কোন গবেষণা ও তা থেকে মৃত্যুরোধের কার্যকর জাতীয় কোন কার্যক্রম নেই। সীমিত পরিসরে বজ্রপাত সম্পর্কিত পুস্তিকা ও লিফলেট প্রকাশ এবং সেমিনার আয়োজন করার মধ্য দিয়েই সরকারি দায়িত্ব পালন সীমাবদ্ধ রয়েছে।

ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশ (আইডিইবি) পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০১৮ সালে ৪৪৯ জন বজ্রপাতে মারা গেছেন। নিহতদের অধিকাংশই প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর। আইডিইবির প্রতিবেদনে বলা হয়, বজ্রপাতে ২০১৫ সালে ২৭৪ জন মারা যান। ২০১৬ সালে সংখ্যাটা ছিল ৩৮৭ জন। ২০১৭ সালে ৩৭২ জন মারা যান। গত বছর একই কারণে প্রাণ হারিয়েছেন ৪৪৯ জন। নিহতদের মধ্যে প্রান্তিক কৃষক ৩৪ ভাগ, নির্মাণ শ্রমিক ২৬ ভাগ, পথচারী ৯ ভাগ, সামরিক কাজ ও বার্জে চার ভাগ করে এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে ২৩ ভাগ মানুষ প্রাণ হারাচ্ছেন।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া বিজ্ঞান বিভাগের গতবছরের এক গবেষণায় বলা হয়, ২০১০ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত বজ্রপাতের ঘটনায় ১৮০০র বেশি মানুষ মারা গেছে। সে গবেষণায় দেখানো হয়েছে যে বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি বজ্রপাত হয় সুনামগঞ্জ এবং মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে। দেখা গেছে রংপুর বিভাগের মধ্যে ঠাকুরগাঁও এবং লালমনিরহাটে সবচেয়ে বেশি বজ্রপাত হয়। রাজশাহী বিভাগের সবচেয়ে বেশি বজ্রপাত হয় চাঁপাইনবাবগঞ্জে। ময়মনসিংহ বিভাগে সবচেয়ে বেশি বজ্রপাত হয় নেত্রকোনায়। ঢাকা বিভাগে সবচেয়ে বেশি বজ্রপাত হয় কিশোরগঞ্জে। আর সুনামগঞ্জে বজ্রপাত বেশি হলেও মানুষ মারা যাচ্ছে বেশি উত্তরাঞ্চলে।

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা ‘দুর্যোগ ফোরামে’র তথ্য মতে, গত দশ বছরে দেশে বজ্রপাতে প্রায় আড়াই হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে। তাদের অর্ধেকই খোলা মাঠে বজ্রপাতের শিকার হয়েছেন। এতে হতাহতের সংখ্যাও কম নয়।

মার্চ থেকেই বাংলাদেশে বজ্রপাত শুরু হয় বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রতি বছর বজ্রপাতে অনেক মানুষের মৃত্যু ঘটে। এর পেছনে নানা কারণ থাকতে পারে। তার মধ্যে সবচেয়ে বড় কারণ হচ্ছে বায়ুম-লে অস্থিরতা সৃষ্টি। আবহাওয়ার অস্বাভাবিক অবস্থা বায়ুম-লে অস্থিরতা সৃষ্টি করে। আর বজ্রপাতের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। ঘূর্ণিঝড়ের মতোই ভয়ঙ্কর হতে পারে বজ্রপাত। একটি ঘূর্ণিঝড়ে যে সংখ্যক মানুষের মৃত্যু ঘটে, বজ্রপাতের কারণে তার চেয়ে বেশি মৃত্যু ঘটতে পারে। ঘূর্ণিঝড়ে একই সময়ে একই জায়গায় অনেক মানুষের মৃত্যু ঘটে থাকে। আর বজ্রপাতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ ভিন্ন ভিন্ন সময়ে ক্ষতির শিকার হয়। তাই বজ্রপাতের ভয়াবহতা খুব বেশি মানুষের চোখে পড়ে না। 

বাংলাদেশে বজ্রপাতের ওপর তেমন কোন গবেষণা নেই। তবে ইউরোপ, জাপান ও আমেরিকায় এ বিষয়টি নিয়ে বড় বড় গবেষণা চলছে। ২০০৮ সালে সুইডেনে অনুষ্ঠিত ২৯তম ‘ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স অন লাইটিং প্রটেকশন’ শীর্ষক সম্মেলনে তেল আবিব বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক কলিন প্রাইস তার ‘থান্ডারস্টর্ম, লাইটিং এ- ক্লাইমেট চেঞ্জ’ শীর্ষক গবেষণাপত্র উপস্থাপন করেন। সেই গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, বায়ুদূষণ তথা পরিবেশ দূষণের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে বজ্রপাতের। বজ্রপাতে একদিকে যেমন বায়ুদূষণের মাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে, তেমনি বেড়েছে পরিবেশে বজ্রপাতের হার ও তীব্রতা। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রের বিশেষজ্ঞরা আরও বলেছেন, আবহাওয়া সম্পর্কিত দ্বিতীয় বৃহত্তম ঘাতক হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে বজ্রপাত। জনসংখ্যার ঘনত্ব বেশি হওয়ায় বাংলাদেশে বজ্রপাতে মৃত্যুর সংখ্যাও বাড়ছে। আবহাওয়া অধিদফতরের সাপ্তাহিক ও দীর্ঘমেয়াদী পূর্বাভাস তালিকায় নতুন যুক্ত হয়েছে বজ্রঝড়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের পাশাপাশি বনের পরিমাণ ও উঁচু গাছের সংখ্যা কমে যাওয়ায় বেড়েছে বজ্রপাতে মৃত্যুর সংখ্যা। বজ্রপাতের হাত থেকে বাঁচতে ঝড়-বৃষ্টির সময় খোলা জায়গায় না থাকা ও ইলেকট্রনিক ডিভাইস বন্ধ রাখার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা। সেই সাথে তাগিদ দেন গাছ লাগানো, আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণ ও বজ্রপাত প্রতিরোধক আর্থিং ব্যবস্থা স্থাপনের।

২০১৬ সালে বজ্রপাতকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ হিসেবে ঘোষণা করে সরকার। এর ক্ষয়ক্ষতি কমাতে নেয়া হচ্ছে নানা পদক্ষেপও। বজ্রপাতে হতাহতের সংখ্যা কমাতে আরো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া দরকার বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। আহতদের পর্যাপ্ত চিকিৎসার তাগিদও দিলেন তারা। দুর্ঘটনা এড়াতে, বজ্রপাতের সময় আতঙ্কিত না হয়ে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নেয়ার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের। এছাড়া, পানিতে, খোলা জায়গা, বিদ্যুতের খুঁটি, উঁচু টাওয়ার কিংবা বড় গাছের নিচে আশ্রয় নেয়া যাবে না। মোবাইল ফোনসহ ইলেকট্রিক ডিভাইস ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে হবে। টিনের চাল এড়িয়ে চলা এবং বজ্রপাতে আহত ব্যক্তিকে খালি হাতে স্পর্শ না করারও পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

বজ্রপাতের হাত থেকে বাঁচতে সচেতনতার বিকল্প নেই বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। আর আইডিইবির উত্থাপিত প্রবন্ধে বজ্রপাতের ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় ২২টি সুপারিশ করা হয়েছে। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে হাওর অঞ্চলে সুরক্ষা জোন তৈরি করা, বিদ্যুতের এইচপিসি পোল, কাঠের খুঁটি, ইস্পাত টাওয়ার ইত্যাদিতে আর্থিং করার সময় অবশ্যই ডাউন কন্ডাক্টর/ আর্থ কন্টিনিউটি ওয়্যার ব্যবহার করা, বজ্রপাত সম্পর্কিত ক্ষয়ক্ষতির বিষয়টি পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করা।

Post Top Ad

Responsive Ads Here