ফরিদপুরে এক প্রভাবশালীর শখ ফুলের বাগান করবেন ভিক্ষুকের থাকার জমিতে - সময় সংবাদ | Popular Bangla News Portal

Breaking

Post Top Ad

Responsive Ads Here

শনিবার, নভেম্বর ৩০, ২০১৯

ফরিদপুরে এক প্রভাবশালীর শখ ফুলের বাগান করবেন ভিক্ষুকের থাকার জমিতে

 

ফরিদপুর প্রতিনিধি :
এক সুরম্য অট্রালিকা বাড়ীর সামনে নদীর পাড়ে ফরিদপুর পাউবো এর জমি(খাস জমি)। সেখানে এক প্রভাবশালীর শখ হয়েছে গড়ে তুলবেন ফুলের মনোরম বাগান। আর এই বাগান নির্মানের জন্য ওই জমিতে থাকা দীর্ঘ ৩৫ বছর যাবত বসবাসকারী এক প্রতিবন্ধি ব্যক্তির পরিবারকে সড়িয়ে দিতে হবে। যথারীতি মিশন নিয়ে নেমে পড়লেন তিনি। 

 

বিভিন্ন দপ্তরকে ম্যানেজ করে গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত প্রশাসনকে ব্যবহার করে উচ্ছেদ অভিযান চালিয়ে সেখানে চাষাবাদ করে দেয়া হলো। আর এ অভিযান পরিচালনার করা হলো কোন রকম আগাম সরকারী নোটিশ ছাড়াই বলে জানালেন ক্ষতিগ্রস্থরা। অভিযান কালে প্রতিবন্ধি ব্যক্তিদের দেয়া হলো ওই খানে থাকাকালিন বিভিন্ন সময়ের অবৈধ কাজের অভিযোগ। তবে ওই প্রভাবশালী তাদেরকে এরই মধ্যে একটি সুন্দর ভালো প্রস্তাব দিয়ে দিয়েছেনও বটে। তার নিজের অন্য কোন জমিতে ৪ শতাংশ তাদেরকে থাকতে দেবেন। গত ৩৫ বছরের কতো না সৃতি জরিত ওই ভিটে মাটিতে পরিবারের সেটার মুল্য কে দেবে প্রশ্ন ক্ষতিগ্রস্থদের। 

 

এদিকে স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন ওই খানে থাকাকালিন সময়ে তারা যদি বিভিন্ন অবৈধ কাজ করেই থাকে তবে কেন জমির অফার দেয়া হচ্ছে তাদের। এদিকে যাদের জমি সেই ফরিদপুর পাউবো অফিস এ ব্যাপারে জানে না কিছুই।  উল্টো তারাই শাররীক প্রতিবন্ধি ভিক্ষুক পরিবারকে থাকতে দিয়েছে। এমন উচ্ছেদের ব্যাপারে তারাও হতবাক।  
 

আর এমনই হৃদয়বিদারক ঘটনাটি ঘটেছে ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার তালমা ইউনিয়নের শাকপালদিয়া এলাকায়। পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া কুমার নদীর খালের পাশে দীর্ঘ ৩২ বছর যাবত বসবাসকারী এক শাররীক প্রতিবন্ধি ভিক্ষুক ব্যক্তির পরিবারকে ঘড়বাড়ি ভেঙ্গে উচ্ছেদ করলো উপজেলা প্রশাসন। 
 

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত এই উচ্ছেদ অভিযান চালায় তারা। এসময় কোন রকম নোটিশ ছাড়াই তারা এ অভিযান চালায় বলে জানান ক্ষতিগ্রস্থরা।
 

শাররীক প্রতিবন্ধি মোজাহার সরদার জানান, আমাদের বাড়ীর সামনে ধনী প্রতিবেশী আশরাফ আলী মুন্সির বাড়ী। তিনি আমাদের সাথে ষড়যন্ত্র করে এই ঘটনা ঘটিয়েছে। তার প্রভাবে পড়ে প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা এই কাজ করেছে। তিনি বলেন, আমরা মাননীয় সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর কাছ থেকে চিঠি দিয়ে তার লিখিত অনুমতি নিয়ে বাপাউবো শাকপালদিয়া ১৩৮ নং মৌজার ১৬২৪ নং খতিয়ানের এস এ ৩৬৭২ ও ৩৬৬৭ দাগের মোট ৬ শতাংশ জমি বাড়ীঘর নিয়ে রয়েছি। হঠাৎ করে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে এই ঘটনা ঘটালো তারা। এখন আমার স্ত্রী, দুই পুত্র, তাদের স্ত্রী, নাতি নাতনি নিয়ে কোথায় গিয়ে দাড়ঁবো। খোলা আকাশে কাল থেকে অবস্থান করছি পোলাপান নিয়ে। তিনি আক্ষেপ করে বলেন নদীর পাড়ে শত বাড়িঘর, প্রভাবশালী আশরাফ আলী মুন্সির কথায় তারা শুধু আমার উপর বাড়িঘর ভাঙ্গলো। তিনি নিজেও তো আমার পাশের জমি দখল করে বাগান করেছে। এছাড়া আমাদের পাউবো ফরিদপুর গত ১৬ মার্চ ২০১৫ সালে অনুমতি প্রদান করে বসবাসের জন্য। 
 

মোজাহারের সন্তান ফারুক বলেন, আমার বাবা একজন শাররীক প্রতিবন্ধি ও ভিক্ষা করে। আমি একজন ইলেকট্রনিক্স মিস্ত্রির কাজ করে কোনমতে চলি। আমাদের নামে বিভিন্ন অভিযোগ আনা হয়েছে। কোন অভিযোগ যদি থাকতো তবে আমার নামে দুএকটি মামলা হতো। শত বাড়ি রয়েছে নদীর জমিতে কোন জমি তারা দেখলেন না শুধু টার্গেট হলাম আমরা। তিনি এসময় কান্না জরিত কন্ঠে বলেন ৩৫ বছর যাবত থাকি জমিতে কতো সৃতি রয়েছে এখানে আমাদের। এক বড়লোকের শখের কাছে আমাদের বাড়িঘর ধংস করা হলো। এখন খোলা মাঠের আমাদের ঠাঁই। তিনি বলেন, আশফাক সাহেব ফুল বাগান করবেন আমাদের থাকার জমিতে যে কারনে আমাদের ষড়যন্ত্র করে উঠিয়ে দিলো।
 

তার স্ত্রী সাকির বেগম বলেন, কুদ্দস মেম্বার আমাদের এলাকা হতে ঘড়বাড়ি দিবে বলে সাক্ষর নেই এই গ্রামের লোকজনের কাছ থেকে। পরে জানতে পারলাম সে ওই সাক্ষর ব্যবহার করেছে আমাদের এখান থেকে সরানোর জন্য।    
 

জাকির নামে একজন জানান, এরা কোন মতে ভিক্ষা করে জীবিকা নির্বাহ করে। এদের মাথার উপরে থাকা ঘরটি জোর করে এই ঘর ভেঙ্গে দেয়া হলো। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানাই। সরকার যেন দ্রæত সময়ে এ ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহন করে। এছাড়া এর পিছনে যারা থেকে এই কাজ করলো তাদের বিচার চাই।  
 

আশরাফ আলী মুন্সির মোবাইলে যোগযোগ করলে তিনি সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, সরকার ব্যবস্থা গ্রহন করেছে এটা আমার কিছু করার নেই। আমি তদেরকে উপকার করতে চাইছি সব সময় কিন্তু তারা আমার কোন কথা শুনেনি। তিনি বলেন, আমি গত রমজানের ঈদে স্থানীয়দের কথা মতো তাদেরকে এক লাখ টাকাও দিতে চেয়েছি অন্যত্র জমি কেনার জন্য। আমি সব সময় চাই তারা ভালো জায়গায় বসবাস করুক। এর জন্য সিমেন্টর খুটি কিনে দিতে চেয়েছি। কিন্তু তারা আমাদের কথা শুনেনি। তারা আরো উল্টো আমার বাবা-মা তুলে গালি দিয়েছে। তিনি কেন খাস জমিতে বাগান করলেন এমন প্রশ্নের উত্তরে বলেন পাউবো চাইলে ভেঙ্গে দেব। আমার অনেক কিছু আছে এগুলোর প্রতি আমার কোন লোভ লালসা নেই। তারা যেসব কথা বলেছে সব মিথ্যা। সব কিছু করেছে উপজেলা প্রশাসন। এখানে আমার নাম আসছে কেন বুঝলাম না।   
 

তালমা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান দেলোয়ারা বেগম জানান, আমি এই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আমাকে তারা একবার বলতে পারতো। কোন রকম পূর্ব ঘোষনা ছাড়াই এমন কাজটি ইউনিয়নে করা হলো এটা দুঃখজনক। ইউনিয়ন পরিষদ একটি লোকাল প্রশাসন তাদের সাথে একটু কথা বলতে পারতো। এটা মনে হয় অন্য কোন বিষয় রয়েছে বলে তিনি জানান।  

 

এ ব্যাপারে নগরকান্দা উপজেলা নির্বাহী(ভারপ্রাপ্ত) মো: আহসান মাহমুদ রাসেল জানান, সরকারী নির্দেশে উচ্ছেদ অভিযান চলছে। আর ওই জমিটি নিয়ে সরকারী একটি নির্দেশনা রয়েছে যার কারনে তাদের উচ্ছেদে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। অন্য কোন কারনে নয় বলে তিনি জানান। নদী পাড়ের সকল স্থাপনা ভাঙ্গতে সরকারের কঠোর নির্দেশনা রয়েছে। আমরা এ কারনে এক এক করে সকল স্থাপনা ভেঙ্গে দেব।
 

ফরিদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সুলতান মামমুদ বলেন, ওই স্থানটি আমাদের পাউবো এর জায়গা। আমাদের দপ্তর থেকে তাদের থাকার অনুমতিও দিয়েছি কয়েক বছর আগে।


আমি নিজেও ওখানে পরিদর্শনে গিয়েছি। সেখানে থেকে এসে আমি নিজে জেলা প্রশাসনের কাছে শাররীক প্রতিবন্ধি ভিক্ষুক বসবাস করে এমন একটি প্রতিবেদন দিয়েছিলাম। কারন তারা অসহায় একটি পরিবার বলে লিখিত দিয়েছি। হঠাৎ করে আমাদের না জানিয়ে কি কারনে তাদের বাড়িঘর ভাংচুর করা হলো তা জানিনা। আমরা উচ্ছেদ করলে আগে নোটিশ দেবো তারপর পুলিশ ও ম্যাজিষ্ট্রেট চাইবো। এগুলো সব পেলে আমরা অবৈধ স্থাপনা সরানোর কাজে হাত দিবো। এক্ষেত্রে এমন কোন কিছুই হয়নি। তিনি বলেন ওখানকার এক প্রভাবশালী ঢাকাসহ বিভিন্ন জায়গায় অভিযোগ দেয়। তিনি স্পষ্ট করে বলেন আমাদের কোন নির্দেশনা নেই এই শাররীক প্রতিবন্ধি ভিক্ষুকের বাড়ি ভাংচুরের ব্যাপারে। এটা কিভাবে ঘটলো সেটা বুঝতে পারছিনা। পরে আমি বিষয়টি জানতে পেরে আমাদের অফিসের একজন ষ্টার্ফকে পাঠায় সেখানে দেখার জন্য।

Post Top Ad

Responsive Ads Here