শিতের অতিথি পাখি নিধনে ভোলায় জনমনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া - সময় সংবাদ | Popular Bangla News Portal

Breaking

Post Top Ad

Responsive Ads Here

রবিবার, ফেব্রুয়ারী ১৬, ২০২০

শিতের অতিথি পাখি নিধনে ভোলায় জনমনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া


এ,কে এম গিয়াসউদ্দিন ,ভোলা: শিতের অতিথি পাখি নিধনে জনমনে ভোলায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া বিরাজ করছে। সুত্র জানায় বিষ দিয়ে চলছে অতিথি পাখি নিধন, হারাচ্ছে পরিবেশের ভারসাম্য ও সৌন্দর্য্য। অথচ নানা কৌশলে শিকারীরা ফাঁদ পেতে বিশ প্রয়োগে নিধন করছে অতিথি পাখিদের।


উল্লেখ্য ভোলার মধ্য মেঘনার চার দিকে জলরাশি, শীতের উষ্ণে রোদেলা আলো ঝলমল করছে পানিতে। ভেসে আসছে কিচির মিচির শব্দ, চরের কাছাকাছি যেতেই চোখে পড়ে রং বেরঙের অতিথি পাখি। এক দল ডানা মেলে মুক্ত আকাশে উড়ছে। আর এক দল চরের পানিতে ডুব সাঁতার দিয়ে খাবার খাচ্ছে। নয়ন জুড়ানো এক অপরুপ মনো মুগ্ধ দৃশ্য। যা চোখ মন জুড়িয়ে যায়। কিন্তু এই অপরুপ দৃশ্য বেশী সময় স্থায়ী হয়নি। কিছু সময় পড়েই ভেসে আসতে থাকে অসংখ্য মৃত পাখি।

সরেজমিনে ভোলা ও লক্ষীপুরের মাঝামাঝি মেঘনা চোখে পড়ে এ দৃশ্য। সামান্য টাকার লোভে বিষ টোপ দিয়ে একটি পাখি ধরতে গিয়ে এরকম শত শত পাখি মারা গিয়ে নদীর চরে ভাসছে। এভাবে নির্বিচারে পাখি শিকার করার ফলে পাখিদের আগমন যেমন কমে যাচ্ছে। তেমনি নষ্ট হচ্ছে পরিবেশের ভারসম্য ও সৌন্দয্য হারাচ্ছে মনো-মুগ্ধকর চরগুলো। অতিথি পাখি শিকারীদের বিরুদ্ধে স্থানীয় প্রশাসনের কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহন না করায় শিকারীদের দৌরাতœ আরো বৃদ্ধি পাচ্ছে। 

শীত শুরুর সাথে সাথে ভোলার উপকূল ও দুরবর্তী বিভিন্ন চরে প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও সাইবেরিয়াসহ শীত প্রধান দেশ থেকে কুইন আই ল্যান্ড ভোলায় পাখি আসতে শুরু করেছে। এসব অতিথি পাখি উপকূলীয় দ্বীপ জেলা ভোলার মাঝের চর, মদনপুর, মেদুয়া, নেয়ামতপুর চরে, চরফ্যাসনের তারুয়া, কুকরী-মুকরী, সাগর কন্যা মনপুরার ঢালচর, চর পালিতাসহ অর্ধশতাধিক ছোট বড় চরে বিভিন্ন প্রজাতির লাখ লাখ অতিথি পাখির আবাস স্থলে পরিনত হয়েছে।

পাখিদের কলকাতনে মুখর হয়ে উঠেছে চরগুলো।কিন্তু এসব দুর্গম চরাঞ্চলে পাখির জন্য নিরাপদ আবাস স্থল হওয়ার কথা থাকলেও পাখি শিকারীদের কারনে তাদের কোন নিরাপত্তা নেই।

খাদ্যের সন্ধানে রং বেরংয়ের পাখা মেলা এসব পাখি উড়তে গিয়েই মারা পড়ছে শিকারীদের হাতে। ধানের সাথে বিষাক্ত রাসয়ানিক দ্রব্য,চেতনা নাশক দ্রব্য ও জাল ফেলে নির্বিচারে চলছে পাখি শিকার। স্থানীয় বাসিন্দা জামাল মাজি জানান, প্রতিদিন নদীতে মাছ ধরতে গেলে মেঘনায় অসংখ্য মরা অতিথি পাখি ভাসছে। এছাড়া চরাঞ্চলে অতিথি পাখি মরে পড়ে থাকে। কতিপয় অসাধু জেলে ভাটার সময় নদীতে কিটনাশন জাতীয় দ্রব্য ধানের সাথি মিশিয়ে ছিটিয়ে দেয়। ওই ধান খেয়ে পাখি গুড়ে পড়ে যায়। অনেক পাখি উড়ে অন্যত্র গিয়ে নদী মরে পড়ে যায়।

পাখি শিকারী দল অসুস্থ্য ও মৃত পাখি জবাই করে বাজারের ব্যাগে করে বিভিন্ন হোটেলে ও বাসা বাড়িতে ফেরি করে বিক্রি করে। এসব পাখি গোপনে প্রতি পিস বিক্রি হয় ৫’ শ থেকে ৬’ শ টাকা করে।

ভোলা প্রেস ক্লাবের সভাপতি সামস উল আলম মিঠু বলেন, পাখি শিকারে প্রশাসনের দুর্বল অভিযান ও নজরদারী না থাকায় এ বছর পাখির আগমন কমে গেছে। এতে নষ্ট হচ্ছে চরাঞ্চলের সৌন্দর্য্য। শিকারীদের হাত থেকে পাখি শিকার বন্ধ না করলে ভোলাতে কোন পাখির আগমন ঘটবে না বলে মনে করেন এলাকাবাসী । একই সাথে পাখি শিকার বন্ধে আরো সচেতনতা বাড়ানো উচিত বলে মনে করছেন স্থানীয় সচেতন মহল।

ভোলার সিভির সার্জন ডা: রথিন্দ্রনাথ মজুমদার বলেন,বিষাক্ত রাসায়নিক দ্রব্য খাইয়ে নিধন করা এসব অতিখি পাখি মানব দেহের খাদ্য নালিতে প্রদাহ হবে। বার বার এসব খাবার খেলে লিভার কিডরি আক্রান্তসহ ক্যান্সার হওয়ার আশংকা রয়েছে।

ভোলা কোস্টগার্ড দক্ষিন জোনের অপারেশন অফিসার লে: নাজিউর রহমান বলেন, শিকারীদের হাত থেকে পাখি রক্ষায় তারা নিয়মিত টহলের পাশাপাশি বিশেষ ভাবে তৎপর রয়েছে। অভিযানের জন্য তাদের সকল ষ্টেশনকে ইতোমধ্যেই জানিয়ে দেওয়া হয়েছে  বলে জানান কোস্টগার্ডের এ কর্মকর্তা।

স্থানীয়দের মতে, ভোলার জীব বৈচিত্র সংরক্ষণে এ সব পাখির লালন জরুরী। পাখির অভয়াশ্রম গড়ে তোলা সম্ভব না হলে শীঘ্রই এ অঞ্চলটি পাখি শুন্য হয়ে পরবে বলে মনে করছে এলাকাবাসী।

Post Top Ad

Responsive Ads Here