মুখ দিয়ে লিখে গ্র্যাজুয়েট, হাফিজুরকে চাকরি দিলো জবি - সময় সংবাদ | Popular Bangla News Portal

Breaking

Post Top Ad

Responsive Ads Here

রবিবার, মার্চ ১৫, ২০২০

মুখ দিয়ে লিখে গ্র্যাজুয়েট, হাফিজুরকে চাকরি দিলো জবি


মোঃ মাসুদ আলম, জগন্নাথ প্রতিনিধি:

বিকলাঙ্গ হাত-পা, হাজারো প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও মুখ দিয়ে লেখেই স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পাস করেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হাফিজুর রহমান। 

গত ১১ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সমাবর্তনে অংশগ্রহণ করে তিনি স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রির সনদ লাভ করেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অষ্টম ব্যাচের (মাস্টার্স ১৬-১৭) ছাত্র। গ্র্যাজুয়েশনের পরে হাফিজের সঙ্গে তার শুভাকাঙ্ক্ষীদেরও ইচ্ছে ছিল জবি প্রশাসন যেনো তাকে একটা চাকরির ব্যবস্থা করে দেয়।

হয়েছেও তাই। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ভাসমান স্টলে বসিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের লোগো সম্বলিত বিভিন্ন ব্যাগ, টি-শার্ট বিক্রি করা ‘হাফিজ ভাই’কে ছাত্রকল্যাণ দফতরের অফিস সেক্রেটারি কাম কম্পিউটার অপারেটরের চাকরি দিয়েছে প্রশাসন। ডেইলি ব্যাসিস পেমেন্টে আপাতত চাকরি দেয়া হয়েছে তাকে। গত ১ ফেব্রুয়ারি তারিখ থেকে হাফিজ চাকরিতে যোগ দিয়েছেন। তার চাকরি বর্তমানে অস্থায়ী হিসেবে রয়েছে।


জানা যায়, জন্মগতভাবেই বিকল দুই হাত ও দুই পা। অন্যের সাহায্য ছাড়া যে ছেলেটি এক স্থান থেকে অন্য স্থানেই যেতে পারে না, সেই কিনা মুখে কলম ধরেই সম্মানের সহিত অতিক্রম করেছে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর। বিকল দুই হাত ও দুই পা নিয়ে ১৯৯৩ সালে বগুড়ার ধুনট উপজেলার বেলকুচি গ্রামের এক দরিদ্র কৃষক পরিবারে জন্ম নেন হাফিজুর রহমান। বাবা পক্ষাঘাতের রোগী মো. মফিজ উদ্দিন পেশায় সাধারণ কৃষক, মা ফিরোজা বেগম গৃহিণী।

ছোটবেলায় বাবার কাছেই ‘বর্ণ পরিচয়’ শেখা হাফিজুরের। মূলত সুশিক্ষিত হবার প্রয়াস সেখান থেকেই। বাড়ি থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে ব্র্যাক স্কুলে শুরু প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাজীবন। সে সময় বেয়ারিংয়ের গাড়িতে করে সহপাঠীরা স্কুলে নিয়ে যেত তাকে। এভাবেই স্কুলে যাওয়া-আসার মধ্যে ২০০৯ সালে মানবিক বিভাগ থেকে এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ ৪.১৯ পেয়ে উত্তীর্ণ হন জ্ঞানপিপাসু হাফিজুর। তারপর অত্র উপজেলার ধুনট ডিগ্রি কলেজ থেকে ২০১১ সালে এইচএসসিতে জিপিএ ৩.৬০ পেয়ে উত্তীর্ণ হন তিনি।

২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষে কোনও ভর্তি কোচিং না করেই জবির ভর্তি পরীক্ষায় মেধাতালিকায় স্থান করে নেন হাফিজুর। ভর্তি হন ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগে। তখন থেকেই অচেনা এই নগরীতে একাকী সংগ্রাম করে যাচ্ছেন তিনি। পরীক্ষার হলে মেঝেতে পাটিতে বসে ছোটো টুলে খাতা রেখে মুখ দিয়ে লিখে পরীক্ষা দিয়ে গেছেন এই শিক্ষার্থী।

চাকরি পাওয়ার বিষয়ে হাফিজুর রহমান বলেন, সর্বপ্রথম আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করছি। কৃতজ্ঞতা জানায় মাননীয় উপাচার্য ড. মিজানুর রহমান স্যারের প্রতি। প্রশাসনের পক্ষ থেকে তিনি আমাকে মানবিক দিক বিবেচনা করে এই চাকরি দিয়েছেন। আমার অনেক খুশি লাগছে এই চাকরি পেয়ে। যদিও এটি অস্থায়ী, কিন্তু আশা করছি অদূর ভবিষ্যতে এটি স্থায়ী হয়ে যাবে।

ছোটোবেলা থেকেই নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম নেয়া হাফিজুরের পড়ালেখা ও যাবতীয় ভরণপোষণ হয়েছে পরনির্ভরশীলতায়। মাঝে সরকারের দেওয়া প্রতিবন্ধী ভাতা, গ্রামের লোকজনের সাহায্য সহযোগিতা ও ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের টিউশনি করিয়ে নামমাত্র অর্থ উপার্জন করেছেন। চার ভাইয়ের মধ্যে সবার ছোট তিনি। বিয়ে করে সংসার নিয়ে ব্যস্ত হাফিজের তিন ভাই। তারাও কৃষি কাজ করেই নিজ নিজ সংসার চালাচ্ছেন।

Post Top Ad

Responsive Ads Here