ফরিদপুরে ৩ বছরেও বিচার শুরু হয়নি হাফেজ শিমূল হত্যা মামলার বিচার কাজ - সময় সংবাদ | Popular Bangla News Portal

শিরোনাম

Wednesday, October 14, 2020

ফরিদপুরে ৩ বছরেও বিচার শুরু হয়নি হাফেজ শিমূল হত্যা মামলার বিচার কাজ


 

ফরিদপুর প্রতিনিধি :
ফরিদপুরের ৩০ পারার কোরআনে হাফেজ ও সরকারী রাজেন্দ্র কলেজের ইংরেজিতে অনার্সের ৩য় বর্ষের মেধাবী ছাত্র হাফেজ সোলায়মান মিয়া শিমূল (২৫) হত্যা মামলার বিচার তিন বছরেও শুরু হয়নি। ২০১৭ সালের ১৩ অক্টোবর শুক্রবার মাগরিবের নামাজের একটু আগে শোভারামপুরে এলাকায় একটি চায়ের দোকান হতে তুলে নিয়ে তাঁকে নির্মমভাবে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় নিহতের পিতা পশ্চিম খাবাসপুর মহল্লার বাসিন্দা ইসাহাক মিয়া বাদি হয়ে কোতয়ালী থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।


মোট তিন দফা তদন্তকারী কর্মকর্তা পরিবর্তনের পর গত বছরের ৪ সেপ্টেম্বর ফরিদপুরের সিআইডি পুলিশের পরিদর্শক মোঃ জাহাঙ্গির আলম ১১ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে একটি অভিযোগপত্র দাখিল করেন। অভিযোগপত্রে রঘুনন্দনপুরের মাসুদ শেখ (৩৮), হাবিবুর রহমান হবি শেখ (৪১) মনিরুল ইসলাম মিলন শেখ (৪৪), শিমুল শেখ (২২), রিপন মোল্যা (৩৫), টিপু পাট্টাদার (৩২), অমরেশ ওরফে অমলেশ মালো (২৫), জামাল পাট্টাদার (৫৫), সুশান্বত (২০), রবিউল ইসলাম রবি (১৯) এবং রাজু মোল্যা ওরফে রাজাকে (২২) হত্যাকান্ডে সম্পৃক্ত থাকার ব্যাপারে অভিযুক্ত করা হয়। 


মামলার বাদি ইসাহাক শেখ বলেন, এই হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত থাকার ব্যাপারে একাধিক সাক্ষির জবানবন্দিতে এজাহারে উল্লেখিত তিন আসামী কবির শেখ (৪৭) তার ভাই খবির শেখ (৫০) ও নুরুল ইসলাম শেখ ওরফে এহসান (৩৫) এর নাম আসলেও অভিযোগপত্র হতে রহস্যজনক কারণে তাদের নাম বাদ দেয়া হয়েছে। একারণে তিনি নারাজি দেন। জেলার সিনিয়র চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত গত ১৬ এপ্রিল নারাজি আবেদনের শুনানীর পর ১৫ সেপ্টেম্বর মামলাটি অধিকতর তদন্তের জন্য ফরিদপুরের পিবিআইকে নির্দেশ দেন।


ইসাহাক শেখ জানান, মামলাটি তুলে নেয়ার জন্য তাকে নানাভাবে প্রলোভন দেখানো হয়েছে। মোটা অংকের টাকা পয়সা খরচ করেছে ওরা। সম্প্রতি পতন হওয়া ফরিদপুরের এক বিতর্কিত রাজনীতিবীদ আসামীদের হয়ে নেপথ্যে কলকাঠি নেড়েছেন। তিনি বলেন, আমি টাকা চাইনা, ছেলে হত্যার বিচার চাই। অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র এই হাফেজ সোলায়মান শিমূলকে মধ্যযুগীয় বর্বর কায়দায় হত্যার ঘটনায় পরিবারের পাশাপাশি এলাকাবাসী ও সহপাঠীরা ন্যায় বিচার দাবি করেন।


জানা গেছে, হাফেজ শিমূল হত্যাকান্ডের পরেরদিন অন্যতম আসামী রিপনকে পুলিশ গ্রেফতার করে। এরপর আরেক আসামী মিলন র‌্যাবের হাতে আটক হয়। এরপর টিপু ও জামাল পাট্টাদার আদালদে আত্মসমর্পণ করে। চাঞ্চল্যকর এই মামলায় কোন আসামীরই স্বীকারেক্তিমুলক জবানবন্দি গ্রহণ করা হয়নি আদালতে। এরপর অভিযোগপত্র হতে নাম বাদ দেয়ার পর আরো তিন আসামী জামিন নিয়ে বেরিয়ে আসে। বর্তমানে মামলার সব আসামীই জামিনে রয়েছে। 


ফরিদপুরের পিবিআইয়ের সংশ্লিষ্ট তদন্তকারী কর্মকর্তা কর্মকর্তা গৌরাঙ্গ কুমার বসুর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, একটি নারাজি দেয়া হত্যা মামলার ফাইল তার কাছে এসেছে। তবে তিনি সেটি এখনও কাজ শুরু করতে পারেননি।


প্রসঙ্গত, ছাত্রজীবনে ফরিদপুরের সামসুল উলুম মাদ্রাসা হতে হাফেজী পরীক্ষায় প্রথম হন হয়ে এরপর রাজেন্দ্র কলেজের ইংরেজিতে অনার্সে ভর্তি হন হাফেজ শিমূল। হত্যাকারীরা তাঁকে বাড়ি সংলগ্ন ঈদগা মাঠে নিয়ে লোহার হাতুড়ি, লোহার রড, বাইশলা, কাঠের বাটামসহ নানারকম দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে প্রথমে পিটিয়ে ও কুপিয়ে মারাত্মক আহত করে। এরপর তাঁকে একটি বৈদ্যুতিক খুঁটির সাথে বেঁধে মধ্যযুগীয় বর্বরতায় উপযুপরী আঘাতের পর আঘাতের খেলায় মেতে ওঠে। আর মসজিদের মাইকে ডাকাত পরেছে বলে ঘোষণা দেয়। খবর পেয়ে পুলিশ তাঁকে মুমূর্ষ অবস্থায় উদ্ধার করে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তির পর রাতে ট্রমা সেন্টারে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়।


No comments: