জেদই মমতাকে সাফল্য দিয়েছে - সময় সংবাদ | Popular Bangla News Portal

Breaking

Post Top Ad

Responsive Ads Here

মঙ্গলবার, মে ০৪, ২০২১

জেদই মমতাকে সাফল্য দিয়েছে



সময় সংবাদ ডেক্সঃ


 আলতাফ পারভেজ। দক্ষিণ এশিয়ার রাজনৈতিক ইতিহাস বিষয়ক গবেষক। লিখছেন-গবেষণা করছেন আন্তর্জাতিক নানা বিষয় নিয়ে। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বিধানসভার নির্বাচন ও এর ফলাফল নিয়ে এক আলোনায় বলেন 


তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা ব্যানার্জির নিজের নেয়া চ্যালেঞ্জের কারণেই ফলাফল তার পক্ষে এসেছে বলে মত দেন আলতাফ পারভেজ। দুই পর্বের সাক্ষাৎকারের আজ থাকছে প্রথমটি।



ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনে তুমুল লড়াই হলেও বড় ব্যবধানে জয় পেল মমতা ব্যানার্জির দল তৃণমূল। আপনি এ নির্বাচনের সার্বিক খবর রেখেছেন। ফলাফল প্রত্যাশিত ছিল?


আলতাফ পারভেজ: ভারতে এখনো তুলনামূলকভাবে স্বচ্ছ, গ্রহণযোগ্য এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন হয়। তা পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভার এই নির্বাচনে প্রমাণিত হয়েছে। গত কয়েক মাস ধরে তুমুল লড়াই হয়েছে নির্বাচনী মাঠে। তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছে। কিন্তু মানুষ যা রায় দিয়েছে তাই প্রকাশ হয়েছে। এ কারণে আমি মনে করছি, পশ্চিমবঙ্গের মানুষের জন্য একটি গর্বের দিক যে, তারা একটি জীবন্ত নির্বাচনী রাজনীতিতে অংশ নিল। এ নির্বাচন পশ্চিমবঙ্গের মানুষের জন্য বড় একটি অর্জন।



 ‘জীবন্ত নির্বাচনী রাজনীতিতে অংশ নিল’—এ কথার ব্যাখ্যা কী?


আলতাফ পারভেজ: পশ্চিমবঙ্গে প্রথাগত একটি রাজনৈতিক ধারা ছিল। এই নির্বাচনে তাতে পরিবর্তন এসেছে। বিজেপি ঘোষণা দিয়েছিল, তারা বাংলা জয় করবে। ফলে ভারতের যে কোনো নির্বাচনের চেয়ে এখানে ভিন্ন পরিস্থিতি তৈরি করেছিল। এই অর্থেই আমি বলছি, এবারের নির্বাচনটি ছিল জীবন্ত।Top-Mamata.jpgভাঙা পা নিয়ে হুইলচেয়ারে বসেই সমাবেশ-প্রচারণা চালিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা ব্যানার্জি



 আলোচনা করছিলেন, নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে...


আলতাফ পারভেজ: এ নির্বাচনের ফলাফলে দ্বি-দলীয় রাজনীতি গুরুত্ব পেয়েছে। তৃতীয় ধারার রাজনীতি প্রায় ‘নাই’ হয়ে গেছে। পশ্চিমবঙ্গে বাম এবং কংগ্রেসের রাজনীতির ঐতিহ্যবাহী ঘাঁটি ছিল। এই দুই শক্তি প্রায় নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। বিজেপির আগমন ঘটলো। এর আগের বিধানসভা নির্বাচনে মাত্র তিনটি আসন পেয়েছিল তারা। এটি তুমুল লড়াইয়ের দিক নির্ধারণ করে। সংঘাতও হয়েছে। কেন্দ্রীয় দলের সঙ্গে আঞ্চলিক একটি দলের এমন লড়াই সত্যিই ভিন্নমাত্রা যোগ করে। এ নির্বাচনে নানা উপাদানও যোগ হয়েছে। তৃণমূল অনেক ব্যবধানে জয় পেয়েছে। কিন্তু নির্বাচন যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়েছে, তা তো বলার অপেক্ষা রাখে না।


বিজেপি ‘বাংলা দখল’ করবে বলে ঘোষণা দিয়েছিল। যে পরিমাণ ভোট পেয়েছে, তাতে এক প্রকার ‘দখল পর্যায়’ বলা যায় কি-না?


আলতাফ পারভেজ: বিজেপি বনাম তৃণমূল, এমন একটি যুদ্ধের সাজ হয়েছিল। বিজেপির প্রধান কৌশল ছিল তৃণমূলের সামনের সারির নেতাদের নিয়ে নেবে। তৃণমূলকে দুর্বল করে দেবে। সর্বভারতীয় একটি দলের এমন কৌশল সহজেই তৃণমূলকে পরাস্ত করার কথা। তৃণমূল, বামফ্রন্ট, কংগ্রেসের অনেক সংগঠককেই বাগিয়ে নিয়েছে বিজেপি। কিন্তু মমতা ব্যানার্জি বিজেপির সে কৌশলে পা দেননি। তিনি নিজেকে বিজেপির প্রতিপক্ষ বানিয়ে খেলছেন। বিজেপির ছকটা উড়িয়ে দিয়েছেন। মমতা স্লোগান দাঁড় করিয়েছেন যে, ‘বাংলা তার নিজের মেয়েকে চায়’। তার মানে মমতা যুদ্ধের ময়দানে একেবারে কেন্দ্রীয় চরিত্র রূপে দাঁড় করিয়েছেন নিজেকে।


খেলাটা বিজেপি বনাম তৃণমূল হয়নি। খেলা হয়েছে বিজেপি বনাম মমতা। বলা যায়, এক প্রকার গণভোটের মতো নির্বাচন হয়েছে। তৃণমূল ক্ষমতায়। অথচ দলের দুর্নীতি নিয়ে আলাপ হয়নি তেমন। আলাপ হয়েছে মমতার ব্যক্তিগত বৈশিষ্ট্য এবং বিজেপির রাজনীতি নিয়ে। হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির বিরুদ্ধে মমতা খেলেছেন একা একাই।jagonews24মমতা ব্যানার্জিকে হটাতে দিল্লি থেকে নিয়মিত প্লেনে চড়ে পশ্চিমবঙ্গে এসে সমাবেশ করেছেন নরেন্দ্র মোদি-অমিত শাহতার মানে বলতে চাইছেন, দলের চেয়ে ব্যক্তি মমতার জায়গাটি বেশি প্রসারিত?


আলতাফ পারভেজ: হ্যাঁ। অনেক বেশি প্রসারিত। আপনি যদি ব্যক্তি মমতার রাজনীতি নিয়ে স্টাডি করেন, তাহলে অনেকগুলো বৈশিষ্ট্য আপনি দেখতে পাবেন। এবারের নির্বাচনে তিনি সেই বৈশিষ্ট্যগুলোই ব্যবহার করেছেন। দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতি যদি লক্ষ্য করেন, দেখবেন অনেকের শক্তির জায়গা থাকে পরিবার, অনেকেরই শক্তির জায়গা থাকে অর্থ। মমতা এসব শক্তিতে ভর করে রাজনীতিতে আসেননি। তার বাবা কংগ্রেসের একজন সাধারণ নেতা ছিলেন। মমতার চরিত্রের প্রধানতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে মানসিক দৃঢ়তা। প্রচণ্ড সাহসী। একাই যুদ্ধ করতে পছন্দ করেন। তার দল থেকে যদি সবাইকেই নিয়ে যাওয়া হতো, তাহলেও তিনি যেভাবে লড়েছেন, সেভাবেই লড়তেন। মমতা জেদি এবং একরোখা মানুষ। মমতা কিন্তু তার দলে গণতন্ত্র অত সহ্য করেন না। জেদ-ই মমতাকে সাফল্য দিয়েছে।


তিনি নিজে চ্যালেঞ্জ নিতে পছন্দ করেন। চ্যালেঞ্জ নিয়েছেন। ভারতে নরেন্দ্র মোদি এবং অমিত শাহ জুটির সামনে প্রত্যেক বিরোধী দলের নেতারা নিরাপদ আসন খোঁজেন। অথচ মমতা তার পুরোনো নিরাপদ আসন বাদ দিয়ে নন্দীগ্রামে দাঁড়ালেন। বিজেপির প্রার্থী শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে লড়ে চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করলেন। মমতার স্লোগান ছিল ‘খেলা হবে’। অনেকেই মনে করেছেন এটি হাস্যকর একটি স্লোগান। কিন্তু আসলে তিনি রাজনীতিকে এভাবেই দেখেন। জনগণের মনের সঙ্গে মিলিয়েই রাজনীতির নকশা করেন।


 মমতা নিজে চ্যালেঞ্জ নিয়ে দলকে জেতালেন। আবার নন্দীগ্রামে নিজেই হেরে গেলেন। এর কী ব্যাখ্যা আছে?


আলতাফ পারভেজ: মমতার মারমুখী সাহসের কারণে পুরো পশ্চিমবঙ্গে জিতে গেছে। তিনি নন্দীগ্রামে হেরেছেন অল্প ভোটে। কিন্তু গোটা পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূলের প্রার্থীদের জয় হয়েছে বিপুল ভোটে। তৃণমূলের সম্বলই হচ্ছে মমতার মারমুখী চ্যালেঞ্জ নেয়ার মানসিকতা।jagonews24নির্বাচনী সমাবেশে মমতা ব্যানার্জির তৃণমূলের পক্ষে গণজোয়ার তৈরি হয়, যার প্রতিফল দেখা যায় ব্যালটবাক্সেও


 তার মানে নন্দীগ্রামে দাঁড়িয়ে মমতা তার দলের জন্য অবস্থান আরও পোক্ত করেছেন, যা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সহায়তা করেছে...


আলতাফ পারভেজ: দক্ষিণ এশিয়ার সাধারণ মানুষের মন বোঝার ব্যাপার আছে। পশ্চিমবঙ্গের সাধারণ মানুষ মমতার মধ্যে তাদের হারানো প্রতিচ্ছবি দেখেন। শাড়ি আর চপ্পল পরে মাঠে নেমে যাওয়া দেখে সাধারণ মানুষ মনে করেন, তিনি পাশের বাড়ির দিদি। এই চ্যালেঞ্জ নেয়ার মানসিকতাকে মানুষ গ্রহণ করেছে। চ্যালেঞ্জ নেয়া শুধু নন্দীগ্রামেই আটকে নয়, গোটা পশ্চিমবঙ্গের জন্য ছিল।


মমতা বলেছিলেন, সব আসনে আমিই দাঁড়াচ্ছি। এটিই সত্য জেনেছে মানুষ। ফলে নন্দীগ্রামে হেরে গেলেও মমতাই বিপুল ভোটে জিতেছেন রাজ্যজুড়ে।


 ক্ষমতায় না গেলেও বিজেপি প্রচুর ভোট পেয়েছে। এই হিসেবে পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির রাজনীতিতে অবস্থান নিয়ে কী বলবেন?


আলতাফ পারভেজ: পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতি খুব উত্তপ্ত থাকবে। প্রথমত, এটি দ্বি-দলীয় রাজ্য হয়ে গেছে। কংগ্রেস-বামফ্রন্ট প্রায় নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। বিজেপি এখন শক্তিশালী বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করবে। এই নির্বাচন আপাতত একটি স্বস্তি দিতে পেরেছে। কিন্তু আগামীতে অস্বস্তি বাড়তে পারে।


আমি মনে করি, হেরে গেলেও দায়িত্ব গ্রহণের বিরাট জায়গা আছে বামফ্রন্ট। পরাজয় আর সঙ্কট থেকে বামফ্রন্ট যদি শিক্ষা নিতে পারে তাহলে বিরোধী শক্তি হিসেবে অবশ্যই ভালো করবে।

Post Top Ad

Responsive Ads Here