দোয়ারাবাজারে বানের পানি কমছে,সহস্রাধিক ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত | সময় সংবাদ - সময় সংবাদ | Popular Bangla News Portal

শিরোনাম

Wednesday, June 22, 2022

দোয়ারাবাজারে বানের পানি কমছে,সহস্রাধিক ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত | সময় সংবাদ

যোগাযোগ ব্যবস্থা ভয়ঙ্কর-খাদ্যসংকটে গবাদিপশু 

দোয়ারাবাজারে বানের পানি কমছে,সহস্রাধিক ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত  | সময় সংবাদ
দোয়ারাবাজারে বানের পানি কমছে,সহস্রাধিক ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত  | সময় সংবাদ


 


হারুন অর রশিদ , দোয়ারাবাজার থেকে:

সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলায় বানের পানি কমতে শুরু করেছে। পানি চলে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জনদুর্ভোগ এখন চরমে। ভয়ঙ্কর আকার ধারণ করেছে উপজেলার সবকটি যোগাযোগ সড়ক।


বিশুদ্ধ পানির অভাবে পানি বাহিত রোগবালাইয়ের প্রকোপ বেড়েছে। বন্যার কবল থেকে প্রাণ বাঁচাতে গিয়ে বজ্রপাতসহ এ পর্যন্ত ১৪ জনের সলিলসমাধি হয়েছে। বানভাসি মানুষের মধ্যে চরম খাদ্য সঙ্কটে উপজেলাজুড়ে হাহাকার শুরু হয়েছ। বানের তোড়ে সহস্রাধিক বসতঘর বিধ্বস্ত এবং অন্তত দেড় শতাধিক বসতঘর ভেসে গেছে। এছাড়াও খাদ্য সংকট ও বানের পানিতে ভেসে কয়েক শত গরুর মৃত্যু হয়েছে। 


বুধবার স্থানীয় সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিক দোয়ারাবাজার উপজেলার বন্যা কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেন। এসময় তিনি উপজেলা সদরে অবস্থান করলে হাজারো বানভাসি মানুষ ত্রাণের জন্য ভীড় জমায়। চারিদিকে যেন হাহাকার বিরাজ করছে। 


সরজমিন ক্ষতিগ্রস্ত বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখাগেছে, উপজেলার ৯ ইউনিয়নে এখনও অধিকাংশ মানুষ পানিবন্দী রয়েছন। বন্যার পানি ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেও বসতভিটায় মাথাগোঁজার মতো পরিস্থিতি নেই। বানের তোড়ে বসতভিটা ভেসে যাওয়া অসংখ্য মানুষ পরিবার পরিজন নিয়ে খোলা আকাশের নীচে বসবাস করছে। হাজার হাজার মানুষ এখনও আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে অবস্থান করছে। কোথাও ত্রাণের খবর পেলে অসহায় বানভাসি মানুষজন কোমর পানিতে সারি সারি লাইনবদ্ধ হয়ে অপেক্ষা করতে দেখাগেছে। রাত পোহালেই ত্রাণের জন্য শতশত নারী পুরুষ উপজেলা নির্বাহী অফিসার, পিআইও অফিস, চেয়ারম্যান মেম্বারদের বাড়িতে ভীড় জমাচ্ছে। 


সদর ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল হামিদ বলেন,বন্যায় কাবু হয়ে পড়েছন গ্রামের মানুষ৷ খাদ্য সঙ্কট চরম আকার ধারণ করেছে। রাস্তাঘাট, বাড়িঘরের বেহালবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। মাথাগোঁজার ঠাঁই নেই কোথাও। সদর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে অন্তত তিন শতাধিক বসতঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। বানের তোড়ে ভেসে গেছে বেশ কিছু বসতঘর। এ ইউনিয়নের ৯০  মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত। যা বরাদ্দ হয় তার চেয়ে তিনগুণ বেশি চাহিদা রয়েছে। মানুষ সামাল দেওয়া যাচ্ছে না।


উপজেলা সদরের কেচরি মালা কান্নায় ভেঙে পড়ে বলেন, বন্যায় বসতঘর তলিয়ে গেলে আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থান করছি। দুইদিন দুই বেলা খিচুড়ি এবং  এ পর্যন্ত চিরা মুড়ি ব্যতিত আর কিছুই পাইনি। ত্রাণ নিতে গিয়ে হয় মারামারি,  তাই কোথাও যেতেও পারছি না।


বোগলাবাজার ইউপি চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মিলন খাঁন বলেন, বোগলাবাজার ইউনিয়নের অন্তত তিনশ' বাড়িঘর বিধ্বস্ত এবং অর্ধশত ঘর পানির স্রোতে ভেসে গেছে। খাদ্য সঙ্কটে


ইদুকোনা-রামনগর পর্যন্ত চিলাই নদীর বেড়িবাঁধের ১৮ টি স্থানে ভেঙে গিয়ে ঢলের তোড়ে ভেসে গেছে বসতঘর। ওই ইউনিয়ন প্রাণ বাঁচাতে গিয়ে জাহানারা বেগম (৬০) নামর এক বৃদ্ধার সলিলসমাধি হয়েছে। সব-কটি যোগাযোগ সড়ক ভেঙে গিয়ে ভয়ংকর আকার ধারণ করেছ। উপজেলা সদরের বাজিতপু গ্রামের ব্রিজ পানির স্রোতে ভেসে যাওয়ায় কয়েকটি গ্রামের মানুষ চরম বিপাকে রয়েছেন।


দোহালিয়া ইউপি চেয়ারম্যান শামীমুল ইসলাম শামীম জানান, বন্যায় অন্তত দুই শতাধিক বসতঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্টের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি সাধিত হয়েছে। 


লক্ষ্মীপুর ইউপি সদস্য মোহাম্মদ আলী বলেন, খাসিয়ারা নদীর বেড়িবাঁধ একাধিক স্থানে বড় বড় ভাঙনের ফলে যোগাযোগ সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। বানের তোড়ে বিধ্বস্ত হয়েছে অসংখ্য বসতঘর। 


সুরমা ইউনিয়নের ভুজনা গ্রামের পানিবন্দী বাহার উদ্দিন ও সুলতান আহমদ কান্নায় ভেঙে পড়ে বলেন, বসতঘর বানের তোড়ে ভেসে গেছে। এখনও আশ্রয় কেন্দ্রে পরিবার পরিজন নিয়ে আছি। খাবারের কিছু নেই।



সুরমা ইউনিয়নের অন্তত দুই শতাধিক বসতঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। উপজেলা সদরের সাথে সংযুক্ত ভুজনা, কদমতলী, নুরপুর সড়কটি ভেঙে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। 


উপজেলা সদরের পশ্চিম মাছিমপুর গ্রামের আছমত আলী বলেন, আমার ঘর বানের তোড়ে ভেসে গেছে। ঘরে খাবার নেই।


উপজেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আম্বিয়া আহমদ বলেন,  উপজেলায় এ পর্যন্ত সরকারি বরাদ্দ দেওয়া হয় চালসহ শুকনো খাবার। ৯ সহস্রাধিক বন্যা কবলিত মানুষের মাঝে সরকারি বরাদ্দ বিতরণ করা হয়েছে। ত্রাণ কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। এছাড়া বন্যার পানি কমতে থাকায় পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট এবং ওরস্যালাইন বিতরণ করা হচ্ছে।



No comments: