চরভদ্রাসনের মানুষের ভালোবাসার পাগল ‘মুঞ্জু মামা’ না ফেরার দেশে চলে গেলেন ! - সময় সংবাদ | Popular Bangla News Portal

Breaking

Post Top Ad

Responsive Ads Here

মঙ্গলবার, জুলাই ৩১, ২০১৮

চরভদ্রাসনের মানুষের ভালোবাসার পাগল ‘মুঞ্জু মামা’ না ফেরার দেশে চলে গেলেন !




নাজমুল হাসান নিরব,স্টাফ রিপোর্টার- 
ফরিদপুর চরভদ্রাসন উপজেলার একমাত্র জনপ্রীয়,ভালোবাসার পাগল ছিলেন ‘মুঞ্জু মামা’(মাসনিক ভারসাম্যহীন)।আমার যতটুকু মনে পড়ে আমি যখন ছোট তখন মা খাওয়ানোর জন্য ভয় দেখাত ঐ যে মুঞ্জু আসতেছে ,নিয়ে যাবে।মুঞ্জু আসত দেখতাম,প্রচুর ভয় পেতাম ,কিন্তু কখনও নিয়ে যেত না।বড় হওয়ার সাথে সাথে ভয় কেটেছে বেড়েছে ভালোবাসা।ছোট-বড় সকল শ্রেনীর মানুষ তাকে মামা বলে ডাকত।একসময় ২ টাকায় হালকা খাবার(চা,বিস্কেট,ঝাল মুড়ি ইত্যাদি) পাওয়া যেত।তখন মুঞ্জুর চাহিদা ছিল দুই টাকা ,কারন দুই টাকায় এসব পাওয়া যায়।পরিচিত যারা ওকে ভালোবেসে টাকা দিত আর ওর যারা চেনা ছিল তাদের কাছ থেকে যখন যার কাছে মনে হত তার কাছ থেকে দুই টাকা নিত।কখনও বলত“টাকা দে,কখনও মামা টাকা দে” আবার কখন ও পকেটে হাত দিয়ে টাকা নিত।সবচেয়ে মজার বিষয় হলো সে কখনও দুই টাকার বেশী নিত না,একশো টাকার নোট দিলে ছুড়ে ফেলে দিত।তার অসংখ্য পাগলামি যা চরভদ্রাসনের কেউ কোনদিন ভুলতে পারবে না।যখন খুব রেগে যেত বলত“তুই মর,কিল হিম আর নিজের ডান হাত কামড়াতে থাকত।

মুঞ্জু প্রায় আশির দশকের দিকে চরভদ্রাসনে আসে।এখানে ঐখানে ঘুড়ে বেড়িয়ে,রাস্তা বা কোন দালানের সামনে বা হাসপাতাল বা ইউনিয়ন পরিষদের সামনে রাত কাটাত।১৯৮৯ সালে চরভদ্রাসনের পরিচিত মুখ মারজুক জুয়েলদের বাড়িতে আশ্রয় নেয়। জুয়েলের মা চরভদ্রাসন হাসপাতালে কর্মরত মোসাঃ জাহানারা তাকে বুকে টেনে নেয়।নিজের সন্তানের মত পালতে থাকে সেখানে।আজ  মঙলবার বিকাল ৩টার দিকে সেখানে মু্ঞ্জু শেষ নিঃস্বাস ত্যাগ করে।

মুঞ্জুর মা মোসাঃ জাহানারা  জর্জরিত কন্ঠে জানান,আমি নিজের ছেলের মত মুঞ্জুকে পালতাম,নিজে গোসল করিয়ে দিতাম,খায়িয়ে দিতাম,নোংরা ময়লা জামা কাপড় পরিষ্কার করে দিতাম।ও আমাকে মা বলে ডাকত।ওর চলে যাওয়াটা খুব কষ্টের।

পরিবারের মারজুক জুয়েল জানান,সেই ছোট বেলা থেকে একসাথে থাকি,বাজারে দেখা হলে বলত কই যাস? ভাই বলে ডাকত।রাত্রে বাড়িতে যেয়ে বলত জুয়েল গেট খোল! খোল!।এভাবে আমাকে আর কেউ ডাকেনি আর ডাকবে ও না। ও আমার বড় ভাই ছিল।প্রায় ২৯ বছর যাবৎ আমাদের বাসায় থাকে।
চরভদ্রাসন প্রেসক্লাবের সহ-সভাপতি আঃ ওহাব মেল্যা জানান, পাগল হলেও খুব ভালো মানুষ ছিল মুঞ্জু,দুই টাকার বেশী নিত না,আজান দিলে মসজিদে যেয়ে নামাজে দাড়াত,সবাইকে নামাজে ডাকত,তার চাহিদা ছিল অল্প আর পছন্দের।
স্থানিয় আওয়ামলীগ নেতা মোতালেব মেল্যা জানান,আমরা ছাত্র রাজনীতির সময় থেকে ওকে ভালোবাসি,প্রথমে এক টাকা পড়ে দুই টাকা এবং সর্বশেষ পাঁচটাকা ওর চাহিদা ছিল।কাউকে জবরদস্ত বা হয়রানি ও কখনও করেনি।রক্তের কোন সম্পর্ক নাই কিন্তু ভালোবাসার টানে ওর জানাযায় চলে এসেছি।

মঙলবার বাদ মাগরিব প্রায় হাজার মানুষের উপস্থিতিতে মুঞ্জুর জানাযা সম্পন্ন হয়।পরে স্থানিয় হাজীডাংগি মাদ্রাসার গোরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।
  আওয়ামলীগ নেতা মোতালেব মেল্যা ও সাংবাদিক আব্দুস সবুর (কাজল), মারজুক জুয়েল ও তার পরিবারের প্রতি একজন পাগলকে আশ্রয় থেকে শুরু করে দাফন করা পর্যন্ত সাথে রাখায় সকলকে তাদের পরিবারের জন্য দোয়া করার অনুরোধ করেন।

Post Top Ad

Responsive Ads Here