ভ্রাম্যমান প্রতিনিধি -
আগামী ২২ আগস্ট মুসলমান সম্প্রদায়ের পবিত্র ঈদুল আজহা/কোরবানির ঈদ। ঈদকে সামনে এখন ব্যস্ত সময় পাড় করছেন টাঙ্গাইল-ধনবাড়ী ও জেলার সকল কামাররা।
দিন যতই ঘনিয়ে আসছে ততই বাড়ছে কামারদের ব্যস্ততা। কোরবানির পশু কাটাকুটিতে চাইÑ ধারালো দা, বঁটি ও ছুরি। তাই কয়লার চুলায় দগদগে আগুনে গরম লোহার পিটাপিটিতে টুং-টাং শব্দে মুখর হয়ে উঠেছে কামারশালাগুলোতে। আর সামনে আগুনের শিখায়-তাপদেয়া, হাতুড়ি পেটানোর টুং-টাং শব্দে তৈরি হচ্ছে দা-বটিঁ, চাপাতি ও ছুরি। পশু কোরবানিতে এসব অতিব প্রয়োজনীয়। তাই যেন দম ফেলারও সময় নেই কামারদের। নাওয়া-খাওয়া ভুলে কাজ করছেন কামাররা। কাক ডাকা ভোর থেকে রাত পর্যন্ত কাজ করে যাচ্ছেন তারা। সারা বছর তেমন কাজ না থাকলেও কোরবানির ঈদেকে কেন্দ্র করে কয়েকগুন ব্যস্ততা বেরে যায় কামারদের।
কামারদের সাথে আলাপ করে জানা যায়, পশুর চামড়া ছাড়ানো ছুরি ১০০ থেকে ২০০, দা ২০০ থেকে ৩৫০ টাকা, বঁটি ২৫০ থেকে ৫০০, পশু জবাইয়ের ছুরি ৩০০ থেকে ১ হাজার টাকা, চাপাতি ৫০০ থেকে ৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
সরেজমিনে টাঙ্গাইল সদর উপজেলার কলেজ গেট, গোডাউন ব্রিজ, সন্তোষ বাজার ও পার্ক বাজার ও ধনবাড়ী-মধুপুর সহ সকল উপজেলার কামারশলায় ঘুরে দেখা গেছে, আসন্ন কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে ব্যস্ত সময় পার করছেন কামাররা। পশু জবাইয়ের সরঞ্জামাদি কিনতেও লোকজন ভিড় করছেন তাদের দোকানে। আগে যে সমস্ত দোকানে দুই জন করে শ্রমিক কাজ করতো, এখন সেই সমস্ত দোকানে ৫-৬ করে শ্রমিক কাজ করছেন। কামার দোকানদারদের অভিযোগÑ কোরবানির ঈদ উপলক্ষে কয়লার দাম ও শ্রমিকের দাম বেড়ে গিয়েছে। অপর দিকে ক্রেতাদের অভিযোগ, ঈদ উপলক্ষে কামারদের মজুরি ও দা, চাপাতি এবং ছুরির দাম বেশি নেওয়া হচ্ছে।
এ ব্যাপারে টাঙ্গাইল শহরের পার্ক বাজরের কামার সত্য রঞ্জন দাশ বলেন, ‘সারা বছর কাজ কম থাকে। কোরবানি ঈদ এলে আমাদের কাজ বেড়ে যায় কয়েকগুণ। ছুরি শান দেওয়ার জন্য ৫০ টাকা থেকে শুরু করে কাজের গুণাগুণের উপর ভিত্তি করে ১৫০ টাকা পর্যন্ত নেওয়া হচ্ছে।
এ বিষয়ে অপর কামার প্রভাত চন্দ্র দাশ বলেন, ‘কোরবানির ঈদ উপলক্ষে আমাদের বেচাকিনি দ্বিগুণ বেড়ে গেছে। তবে ঈদের দুই দিন আগে থেকে রাতদিন ২৪ ঘন্টা বেচাকিনি হবে। তখন আমাদের খাওয়ার সময়ও থাকে না।’
এ ব্যাপারে কামার আনন্দ বলেন, ‘কোরবানির ঈদ উপলক্ষে কয়লা ও শ্রমিকের মূল্য বেড়ে গিয়েছে। দুই মাস আগেও প্রতি বস্তা কয়লার দাম ছিলো ৪০০-৪৫০ টাকা। সেই কয়লা এখন আমাদের ৮০০-৮৫০ টাকায় ক্রয় করতে হচ্ছে। তাই আমরা চাপাতি, ছুরি ও দায়ের দাম একটু বেশি নিচ্ছি। তা না হলে আমাদের লাভ হবে না।’
ধনবাড়ী উপজেলার পৌর শহর বাজার,কেন্দুয়া বাজার, বলদীআটা বাজার,বানিয়াজান বাবুল বাজার, বটতলা বাজার সহ ০১ নং বীরতারা ইউনিয়নের কদমতলী এলার “জয়বাংলা হাট” এর কামার শালার দোকানিদের সাথে কথা হলে তারা জানায়, ‘ঈদকে সামনে রেখে কাজের চাপ বেশি। কাজের চাপে কখন খাওয়ার সময় চলে যাচ্ছে আমরা টেরও পাই না। চাপাতি বিক্রি হচ্ছে ৫০০ থেকে ২ হাজার টাকায়। ঈদ যতই ঘনিয়ে আসছে আমাদের বিক্রি তত বাড়ছে।’
এ ব্যাপারে জয়বাংলা হাটে আসা বাজিতপুর শ্যামলারচর এলাকার ক্রেতা আবুল হোসেন, সৈয়দ আলী, লালচাঁন বাদশা সহ আরো অনেকে বলেন, একটি চাপাতি ৫০০ টাকা দরে ক্রয় করতে হচ্ছে। এছাড়াও ছুড়ি, দা, চাকু সহ কয়েকটি জিনিস রিপেয়ারিং করার জন্য এসেছি। ঈদ উপলক্ষে কামাররা মজুরি অনেক বেশি নিচ্ছে।
টাঙ্গাইল সদরের সাবালিয়া এলাকার ক্রেতা শফিকুল ইসলাম বলেন, ঈদ ঘনিয়ে আসার সাথে সাথে কামাররা তাদের মজুরি, ছুরি, দা, চাপাতির দামও বাড়িয়ে দিয়েছে। আমি একটি চাপাতি ৭০০ টাকা ও একটি ছুরি ২০০ টাকা দিয়ে ক্রয় করেছি। যা দুই মাস আগেও দাম ছিলো ছুরির দাম ১৫০ টাকা ও চাপাতির দাম ৫০০ টাকা।