জীবন সংগ্রামী এক নারীর নাম শশী, চালিয়ে যাচ্ছেন জীবন সংগ্রাম - সময় সংবাদ | Popular Bangla News Portal

শিরোনাম

Saturday, January 26, 2019

জীবন সংগ্রামী এক নারীর নাম শশী, চালিয়ে যাচ্ছেন জীবন সংগ্রাম


সঞ্জিব দাস, ফরিদপুর থেকে :
পৃথিবীতে ভূমিষ্ট হওয়ার পর থেকে চোখে দেখেন না, এরপর আবার দুটি কিডনী অকেজা। সপ্তাহে দুটি কখনো কখনো তিনটি ডাইলোসিস নিয়ে খুড়িয়ে খুড়িয়ে চলছে তার জীবন। এতো প্রতিকূলতার মধ্যে দিয়ে তিনি পাশ করেছেন আইন বিদ্যা। এখন চালিয়ে যাচ্ছেন অন্য দশটা আইনজীবির মতো আইন পেশা। আমরা এমন একজন আইনজীবি ফরিদপুরের মারজিয়া রব্বানী শশীর কথা বলছি। 
 
ফরিদপুরের আইনজীবি এ্যাডঃ গোলাম রব্বানী বাবু মৃধা ও মাতা আফরোজা রব্বানীর তিন কন্যার ভিতর মারজিয়া রব্বানী শশী দ্বিতীয়। ছোট বেলা থেকে শশী চোখে দেখেন না। এরপর আবার তার দুটি কিডনী নষ্ট হয়ে যায়। প্রতি সপ্তাহে তাকে দুই বার কখনো কখনো তিনবার হাসপাতালে গিয়ে ডাইলোসিস নিয়ে জীবন চালাতে হচ্ছে। এর ভিতর সে পড়াশুনা করে ঢাকার সাইথইষ্ট ইউনিভার্সিটি থেকে এলএলবি(অর্নাস) পাশ করেন। পড়াশোনায় তার মা ও ছোট বোন তাবিদা রব্বানী প্রচুর সাহায্য সহযোগিতা করেছেন। মা বই পড়তেন আর এই পড়া শুনে সে মুখস্থ করতেন পড়া। অন্যদিকে তার ছোট বোন পরীক্ষার হলে তার রাইটার হিসেবে কাজ করতেন। প্রচন্ড মেধা শক্তির শশী যা একবার শোনেন তা দিব্যি একই ভাবে বলেন এ কথা জানান তার শিক্ষক ও বাবা-মা।
 
শশী এখন বার কাউন্সিল পরীক্ষায় পাশ করে ফরিদপুর জজ কোর্টে বাবার সাথে চালিয়ে যাচ্ছেন আইন পেশা। এদিকে মেয়ের পিছনে প্রতি মাসে এতো টাকা ব্যায়ে রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে বাবা-মাকে। কিছুুদিন আগে প্রধানমন্ত্রী শশীর কথা শুনে তার বাবাকে দুই লক্ষ টাকা দেয়। সে টাকাও খরচ হয়েগেছে অনেক আগেই। এখন মেয়ের একটি কিডনি জোগার করার জন্য বিভিন্ন চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন কিন্তু পাচ্ছেন না। মেয়েকে বাচাঁতে হলে একটি কিডনি যে খুবই দরকার এ কথা বার বার তার বাবা-মা বলছেন বিভিন্ন জনের কাছে। এ ব্যাপারে সাহায্য প্রার্থনা করেছেন বিভিন্ন স্থানে গিয়ে।     
 
তার বাবা এ্যাডঃ গোলাম রব্বানী বাবু মৃধা বলেন, শশী আমাদের গর্বের সন্তান, তবে তার শাররীক কারনে এখন প্রচুর সমস্যা হচ্ছে। একটি কিডনি যদি পেতাম তাহলে হয়তো তাকে স্বভাবিক একটি জীবন উপহার দিতে পারতাম। তিনি বলেন ২০১৩ সালে আমার মেয়ের কথা শুনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দুই লক্ষ টাকা দেয়। আমরা পুরো পরিবার তার কাছে চির কৃতজ্ঞ।
 
তার মাতা আফরোজা রব্বানী বলেন, আমার মেয়েটি এতো মেধাবী যা বলার নয়। ও একবার যা শোনে তাই বলতে পারে। আমরা ওকে কোন কিছুতে অপূর্ন রাখিনি। কিন্তু হলে কি হবে ওর এতো কষ্ঠ যা বলার নয়। মাসে ৯/১০ ডাইলোসিস নিতে হয়। তারপর আবার কোর্টে প্যাকটিস করে। কতো আমা ওর, সেই আশার কি হবে কে জানে।
 
ফরিদপুর জজকোর্টের সিনিয়র আইনজীবি ও শশীর সহকর্মি এ্যাডভোকেট এম. এ ছামাদ বলেন, আমাদের কোর্টের খুব মেধাবী মেয়ে শশী। আমরা তার মতো একজন ভালো সহকর্মি পেয়ে আমরা গর্বিত। তার উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করি। তবে ওর অসুখের কারনে অনেক সমস্যা হচ্ছে ওর জীবনের। আমরা সকলে চাই ও ভালো হয়ে আমাদের মাঝে ফিরে আসুক।
 
ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ও শশীর চিকিৎসক ডাঃ স্বপন কুমার মন্ডল বলেন, এখন শশীর সামনে একটাই পথ আছে সেটা একটি কিডনী ওর দেহে প্রতিস্থাপন। এছাড়া আর কোন পথ নেই। তবে ডায়লোসিস দিয়ে রাখা যাবে তবে সেটা তো একটা সময় পর্যন্ত গিয়ে সবার থামতেই হবে। এখন একটি কিডনী পেলে ও স্বভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারবে। 
 
এদিকে সহকর্মি ও পরিবারের আশা শশী আরো অনেকদিন তাদের মাঝে বেচেঁ থাকবে। চোখ ও কিডনী ভালো হবে চালিয়ে যাবে তার আইন পেশা।

No comments: