টাঙ্গাইলে মারান্তক ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে বাঁশ বোঝাই ট্রাক - সময় সংবাদ | Popular Bangla News Portal

শিরোনাম

Thursday, December 12, 2019

টাঙ্গাইলে মারান্তক ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে বাঁশ বোঝাই ট্রাক



জাহাঙ্গীর আলম, টাঙ্গাইল//
টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলার বড়চওনা, কালিয়া, কচুয়া ও দেওদীঘি এলাকা থেকে নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে ঝুঁকি নিয়ে বাঁশ পরিবহন করা হচ্ছে বলে অভিযোগ ওঠেছে। স্পটে স্পটে পুলিশ ও বন বিভাগের কর্মীদের চাঁদা দিয়ে উপজেলার অভ্যন্তরীণ ছোট ছোট সড়ক ব্যবহার করে এক শ্রেণির ব্যবসায়ী অবাধে বাঁশ পরিবহন করলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ পর্যন্ত কোন ব্যবস্থাই গ্রহন করা হয়নি। 

জানাগেছে, পার্বত্য অঞ্চলগুলোই মূলত দেশের বাঁশের চাহিদা পুরণ করে থাকে। কাগজের মিলগুলোও পার্বত্য এলাকার বাঁশের উপরই অনেকাংশে নির্ভরশীল। দেশে ২৩ প্রকারের বাঁশ উৎপাদন হয়ে থাকে। এরমধ্যে মধ্যাঞ্চলের পাহাড়ি ও সমতল ভূমিতে উৎপাদিত বোয়রা ও তল্লা  বাঁশগুলো সাধারণত এতদাঞ্চলের প্রয়োজনেই ব্যবহৃত হয়ে থাকে। কিন্তু এক শ্রেণির ব্যবসায়ী অধিক মুনাফার লোভে সাধারণ পাঁচটনী ট্রাকে ২৫-২৮ফুট উঁচু করে সাজিয়ে অত্যন্ত ঝুঁকি নিয়ে বাঁশ পরিবহন করে থাকে। 

টাঙ্গাইলের ১২টি উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি বাঁশ উৎপাদিত হয় সখীপুর ও মধুপুর উপজেলায়। এসব বাঁশ স্থানীয় চাহিদা মেটাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। 

সরেজমিনে জানাগেছে, সখীপুর-গোড়াই, সখীপুর-কালিয়াকৈর, সখীপুর-সিস্টোর, সখীপুরের কচুয়া-ভালুকা সড়কে ট্রান্সপোর্ট পাস(টিপি) ছাড়াই  স্পটে স্পটে নির্ধারিত হারে পুলিশ ও বন বিভাগের কর্মীদের চাঁদা দিয়ে মারাতœক ঝুঁকি নিয়ে ট্রাকযোগে বাঁশ পরিবহন করা হচ্ছে। ওইসব এলাকায় পাঁচশ’ থেকে ১৫হাজার পিস ৩০-৫০ ফুট দীর্ঘ বাঁশ ২৫ ফুটের বেশি উঁচু করে প্রতি ট্রাকে সাজিয়ে প্রতিদিন ২৫-৩০টি পাঁচটনী ট্রাকে দেশের বিভিন্ন এলাকায় পরিবহন করা হচ্ছে। 

স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, সখীপুর উপজেলার বড়চওনা, পাথরঘাটা, কালিয়া, কচুয়া এলাকায় সাধারণত ট্রাকে বাঁশ লোড দেয়া হয়। সখীপুর থেকে উল্লেখিত এলাকাগুলোতে যেতে বিভিন্ন স্পটে প্রতি ট্রাকে পুলিশকে ২-৬ হাজার টাকা ও বন বিভাগের কর্মীদের দুই থেকে তিন হাজার টাকা করে চাঁদা দিয়ে বাঁশের ওভারলোডিং ট্রাক যাতায়াত করে থাকে। এর মধ্যে ট্রাফিক পুলিশকে আলাদাভাবে প্রতি ট্রাকে ২-৫হাজার টাকা চাঁদা দিতে হয়। বাঁশ পরিবহন খাত থেকে স্থানীয় পুলিশ, ট্রাফিক পুলিশ ও বন বিভাগের কর্মীরা প্রতিমাসে লাখ লাখ টাকা চাঁদা আদায় করছে। কেউ প্রতিবাদ করতে গেলে বন বিভাগের কর্মীরা বন আইনে মামলা দায়ের করার ভয় দেখায়। ঝুঁকি নিয়ে বাঁশ পরিবহনের সময় কিছুদিন আগে সখীপুর  উপজেলার শোলা প্রতিমা ও প্রতিমাবংকী এবং করটিয়া এলাকায় শরীরে বাঁশ ঢুকে দুই ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। 

বাঁশ ব্যবসায়ী শাজাহান, শফি, কালাম, আলতাফ, পাখি মিয়া, হামিদ সহ অনেকেই জানান, তারা স্থানীয় খুচরা বিক্রেতাদের কাছ থেকে প্রতি পিস বড়বাঁশ ১৮০-২৪০টাকা ও ছোটবাঁশ ৮০-১২০ টাকায় কিনে ট্রাকযোগে রাজধানী সহ বিভিন্ন জায়গায় সরবরাহ করেন। তারা জানান, পাঁচটনী ট্রাকে বাঁশ বহন করা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। কিন্তু লরিতে বহন করা সহজ হলেও খরচ বেশি হয়। তাছাড়া লড়ি সরু-আঁকাবাঁকা সড়কে চলাচল করতে পারেনা। তাই খরচ কমাতে ও বাগান থেকে বাঁশ আনতে তারা ট্রাক ব্যবহার করে থাকেন। ট্রাকে বাঁশ পরিবহনে রাস্তায় রাস্তায় পুলিশ, ট্রাফিক পুলিশ ও বন বিভাগের কর্মীদের চাঁদা দিতে হয়। তবে লরিতে বাঁশ নেয়া হলে কাউকে টাকা দিতে হয়না।

বাঁশ পরিবহনকারী ট্রাক চালক মিজান ও রনি জানান, ট্রাকে ২৫ ফুটের বেশি উচ্চতা ও দীর্ঘ বাঁশ পরিবহন নিষিদ্ধ হওয়ায় তারা স্পটে স্পটে চাঁদা দিয়েই দীর্ঘদিন যাবত ঝুঁকি নিয়ে বাঁশ পরিবহন করছেন। তারা জানান, নানা স্পটে চাঁদার টাকার অঙ্কও ভিন্ন ভিন্ন।

সখীপুর থানার অফিসার ইনচার্জ(ওসি) মো. আমির হোসেন জানান, বাঁশের ট্রাক থেকে চাঁদা নেয়ার বিষয়টি তিনি জানেন না। বাঁশের ওভারলোডিং ট্রাক যাতায়াত সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। খোঁজখবর নিয়ে তিনি দ্রæত পদক্ষেপ নেবেন। 

টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শফিকুল ইসলাম জানান, তিনি বিষয়টি প্রথম জানতে পারলেন। জনগণের জান-মালের নিরাপত্তার স্বার্থে বাঁশ পরিবহনে নিয়ম মানার বিষয়ে সখীপুর থানাকে নির্দেশনা দেয়া হবে। এ বিষয়ে দ্রæতই আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

টাঙ্গাইল বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ড. মোহাম্মদ জহিরুল হক জানান, বন বিভাগে লোকবলের অত্যন্ত সঙ্কট রয়েছে। ফলে বাঁশ পরিবহনে তদারকি করা সম্ভব হয়না। টাঙ্গাইলে তারা কোন ট্র্যান্সপোর্ট পাস(টিপি) ইস্যু করেন না। স্থানীয়ভাবে পুলিশকে ম্যানেজ করে ছোট ব্যবসায়ীরা ট্রাকভর্তি বাঁশ পরিবহন করে থাকে।

No comments: