ঝিনাইদহ প্রতিনিধিঃ
ঝিনাইদহ আদালতের ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনালের বিচারক (যুগ্ম জেলা জজ) মো. তাজুল ইসলাম গত এগার মাসে ১৫ শতাধিক দেওয়ানি প্রকৃতির ল্যান্ড সার্ভে মামলা নিষ্পত্তি করে বিচার বিভাগে ইতিবাচক সাড়া ফেলেছেন। অল্প সময়ে তার এ কার্যক্রম ইতোমধ্যে বিভিন্ন মহলে প্রশংসিত হয়েছে। অনেকে মনে করছেন, অন্য বিচারকরা এই রেকর্ড অনুসরণ করলে বিচার বিভাগ থেকে মামলার জট কেটে যাবে।
সাতক্ষীরা কলারোয়া উপজেলার বাসিন্দা মো. তাজুল ইসলাম ২০১৮ সালের ২৫ নভেম্বরে ঝিনাইদহ আদালতে ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনালের বিচারক হিসেবে যোগদান করেন। যোগদানের পর ৩ হাজার ল্যান্ড সার্ভে মামলার বিচার প্রক্রিয়ায় যুক্ত হন তিনি। দায়িত্ব নেয়ার সময় তার এখতিয়ারে বিচারাধীন ল্যান্ড সার্ভে মামলাসহ মিস কেস ছিল ২৯৫৪টিরও বেশি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিচারক মো. তাজুল ইসলাম দায়িত্ব নেয়ার পর মাত্র দশ মাসে ১৪ শতাধিক মামলা নিষ্পত্তি করেন। যার মধ্যে ৬৮০টি মামলা ছিল পুরনো। যেগুলো ২০১৪ সাল থেকে ২০১৬ সালে দায়ের হওয়া। এগুলোকে তিনি অগ্রাধিকার দিয়ে নিষ্পত্তি করেন।
এ সময় তাকে প্রায় এক হাজার সাক্ষীর সাক্ষ্য নিতে হয়। মিস মামলাতেও ২ শতাধিক সাক্ষী তাদের সাক্ষ্য দেন। এছাড়া প্রায় ২০০টি নতুন মামলা ট্রাইব্যুনালে ইস্যু গঠন করে বিচারিক কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। অনেক গুরুত্বপূর্ণ মামলা রয়েছে, যা তিনি দায়েরের মাত্র ৬ মাসের মধ্যে নিষ্পত্তি করেছেন। তাজুল ইসলাম ইতোপূর্বে খুলনা, ঢাকা, মেহেরপুর ও ঠাকুরগাঁওয়ে বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
সারাদেশের ৪২টি জেলার ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন রয়েছে মোট তিন লাখ তিন হাজার ৩৫টি মামলা। উক্ত ৪২টি ট্রাইব্যুনালের মধ্যে ঝিনাইদহে ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনালের মাস ওয়ারি নিস্পত্তির হিসাব গড়ে প্রায় শতাধিক। যেমন, জানুয়ারি মাসে ১৩২টি, ফেব্রুয়ারি মাসে ৭৫টি, মার্চ মাসে ৮৬টি, এপ্রিলে ১১৭টি, মে মাসে ১১৫টি, জুন মাসে ৯৫টি, জুলাই মাসে ১২৭টি, আগস্ট মাসে ১০৪টি, সেপ্টেম্বর মাসে ১২৩টি, অক্টোবর মাসে ১৪৩টি এবং নভেম্বর মাসে ১১৩টি এবং মিস কেসসহ মোট প্রায় ১৩০০ টিএলএসটি কেস নিস্পত্তি করেছেন তাজুল ইসলাম। যা দেশের অন্যান্য জেলার ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনাল সমূহের চেয়ে ঝিনাইদহ ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনালের নিস্পত্তির হার তুলনামূলক বেশি। বর্তমানে ১৭৪১ টিএলএসটি কেস আছে।
ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তির লক্ষ্যে ভূমি মন্ত্রণালয়ের সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৪ সালে প্রতিটি জেলায় ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়। এ ক্ষেত্রে ৪২টি জেলায় এই ট্রাইব্যুনাল গঠন করে আইন মন্ত্রণালয়। বাকি ২২টি জেলাকে ভাগ করে সেগুলো ট্রাইব্যুনালের সঙ্গে একীভূত করা হয়। তবে একীভূত জেলাগুলোর অধিবাসীরা দূরত্বের কারণে ৪২ জেলার সংশ্নিষ্ট ট্রাইব্যুনালে মামলা করতে আগ্রহী হননি। তারা নিজ জেলার আদালত ও সংশ্নিষ্ট এসিল্যান্ড অফিসগুলোতে ভূমি বিরোধ-সংক্রান্ত মামলা করেছে।
উচ্চ আদালতের এক প্রতিবেদনে, এই ২২ জেলায় সার্ভে ট্রাইব্যুনালের কোনো মামলা পাওয়া যায়নি। ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনাল উঠিয়ে দিলে মামলা নিস্পত্তির হার কমবে এবং মামলা জট বাড়বে। ল্যান্ড সার্ভে মামলা, যা দায়ের হচ্ছে বা হবে তা নিস্পত্তি কালতক ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনাল বিলুপ্ত না করে বরং কর্মচারি ও কর্মকর্তা নিয়োগ দিতে হবে। তা নাহলে দেওয়ানি বিচার ব্যবস্থার মুখ থুবড়ে পড়বে।
ঝিনাইদহ আদালতের জিপি (সরকারি কৌশলী) বিকাশ কুমার ঘোষ সাংবাদিদের জানান, ‘ঝিনাইদহ আদালতে সাক্ষীদের উপস্থিতি ভালো। তাছাড়া আদালতের বিচারকরাও বিচার কাজে আন্তরিক এবং সাক্ষী এলে ফেরত দেন না।
তিনি জানান, বিশেষ করে ঝিনাইদহ আদালতের ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনালের বিচারক (যুগ্ম জেলা জজ) মো. তাজুল ইসলাম অত্যন্ত দক্ষ একজন বিচারক। যে কারণে অল্প সময়ে এতো বেশি মামলা নিষ্পত্তি করা সম্ভব হয়েছে। এ বিষয়ে বিচারক মো. তাজুল ইসলাম জানান, সময়মতো অফিস করলে এবং সময়ের কাজ সময়ে করলে, মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করা সম্ভব। যা তিনি করতে পেরেছেন।
তিনি বলেন, ‘আমার আদালতে সাক্ষী এলে ফেরত যায় না। আদালতের সময় শেষ হলেও সাক্ষীর সাক্ষ্য নিয়ে তাকে বিদায় দিই। এ ব্যাপারে আদালতের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের এবং আইনজীবীদের সহযোগিতার কথা উল্লেখ করেন তিনি।
No comments:
Post a Comment