রাজশাহীর ৮৬% সরকারি অফিসে লঙ্ঘিত হচ্ছে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন - সময় সংবাদ | Popular Bangla News Portal

Breaking

Post Top Ad

Responsive Ads Here

বৃহস্পতিবার, ফেব্রুয়ারী ১৩, ২০২০

রাজশাহীর ৮৬% সরকারি অফিসে লঙ্ঘিত হচ্ছে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন


ওবায়দুল ইসলামর রবি, রাজশাহী:

রাজশাহী শহরের ৮৬% সরকারি অফিসে সরকারের ‘ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন-২০০৫ (সংশোধিত আইন-২০১৩)’ লঙ্ঘন করা হচ্ছে। এছাড়া ৮০% শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ৫১% স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে এবং ৭৪% রেস্টুরেন্টে দেদারছে লঙ্ঘিত হচ্ছে এই আইন। গতকাল বৃহস্পতিবার (১৩ ফেব্রæয়ারি) সকালে উন্নয়ন সংস্থা ‘এ্যাসোসিয়েশন ফর কম্যুনিটি ডেভেলপমেন্ট-এসিডি’র সম্মেলন কক্ষে ‘রাজশাহী শহরের পাবলিক প্লেসে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়নের বর্তমান অবস্থা’ শীর্ষক এক জরিপের ফলাফল উপস্থাপনের জন্য সংবাদ সম্মেলন অনুুষ্ঠিত হয়। সেই সংবাদ সম্মেলনে রাজশাহীর গুরুত্বপূর্ণ এই চার পাবলিক প্লেসে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন লঙ্ঘনের ভয়াবহ এ চিত্র তুলে ধরা হয়। 

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়Ñ গত বছর (জুলাই-সেপ্টেম্বর ২০১৯ খ্রি.)‘এসিডি’র তত্ত¡াবধানে এবং ‘ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিড্স-সিটিএফকে’র সহযোগিতায় ‘রাজশাহী শহরের পাবলিক প্লেসে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়নের বর্তমান অবস্থা’ যাচাইয়ের জন্য ‘ক্রস সেকশনাল’ পদ্ধতিতে একটি বেসলাইন জরিপ পরিচালিত হয়। রাজশাহী শহরের মোট ৭০২টি পাবলিক প্লেসে (১৫৪টি সরকারি অফিস, ১০৫টি স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র, ১২৭টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং ৩১৬টি রেস্টুরেন্টে) পরিচালিত হয় এই জরিপ। 

‘এসিডি’র নির্বাহী পরিচালক সালীমা সারোয়ারের সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেনÑ স্থানীয় দৈনিক ‘সোনার দেশ’ এর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক আকবারুল হাসান মিল্লাত। সংস্থাটির মিডিয়া ম্যানেজার আমজাদ হোসেন শিমুলের উপস্থাপনায় এসময় বিশেষ অতিথি ছিলেনÑ ‘রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়ন’র সভাপতি কাজী শাহেদ,  ইংরেজি দৈনিক ‘বাংলাদেশ পোস্ট’ এর রিজিওনাল করেসপন্ডেন্ট ও সিনিয়র সাংবাদিক সরকার শরিফুল ইসলাম ও ‘এন্টি টোব্যাকো মিডিয়া এলায়েন্স-আত্মা’র রাজশাহী বিভাগীয় সমন্বয়ক শরীফ সুমন। সংবাদ সম্মেলনের শুরুতেই গবেষণার উদ্দেশ্য তুলে ধরেন এসিডির তামাক নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পের প্রোগ্রাম ম্যানেজার মোস্তফা কামাল। এসময় পাওয়ার পয়েন্টে জরিপের ফলাফল উপস্থাপন করে বিস্তারিত তুলে ধরেনÑ ‘এসিডি’র এডভোকেসি অফিসার মো. শরিফুল ইসলাম শামীম। 

জরিপের ফলাফল অনুযায়ীÑ ৭৭% সরকারি অফিসে ধূমপানের নিদর্শন পাওয়া গেছে, ৪৭% অফিসে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন অনুযায়ী সতর্কতামূলক নোটিশ পাওয়া যায়নি এবং ৪৯% সরকারি অফিসে পানের পিক দেখা গেছে। সরাসরি ধূমপান হচ্ছে ১৮%, সিগারেট/বিড়ির বাট ৭২%, ছাঁইদানি ৩% এবং ৪৩% সরকারি অফিসে সিগারেট/বিড়ির গন্ধ পাওয়া গেছে। আইন অনুযায়ী ৪৭% অফিসে সতর্কতামূলক নোটিশ পাওয়া যায়নি। এমনকি ৪০%তে কোন ধরনের সতর্কতামূলক নোটিশও দেখা যায়নি। এছাড়া ৭০% অফিসের সীমানা থেকে ১০০ মিটারের মধ্যে তামাকজাত দ্রব্যের বিক্রয়কেন্দ্র পাওয়া গেছে। 

জরিপে দেখানো হয়Ñ ৩৪% স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রের ভবনের ভেতরে ধূমপানের নিদর্শন ও ১০% কেন্দ্রে ভবনের বাহিরে কিন্তু সীমানার মধ্যে ধূমপান, ২৩%-তে আইন অনুযায়ী সতর্কতামূলক নোটিশ পাওয়া যায়নি এবং ২৬% সেবাকেন্দ্রে পানের পিক দেখা গেছে। সামগ্রিকভাবে ধূমপান হয়েছে ৩৪% সেবাকেন্দ্রে, ৪%-তে সরাসরি ধূমপান, ২৮%-তে সিগারেট/বিড়ির বাট এবং ১১% সেবাকেন্দ্রে সিগারেটের গন্ধ পাওয়া গেছে। ৯৪% কেন্দ্রে আইন অনুযায়ী সতর্কতামূলক নোটিশ পাওয়া যায়নি। এমনকি ৬৯% সেবাকেন্দ্রে সতর্কতামূলক কোনো ধরনের নোটিশই নেই। ২% সেবাকেন্দ্রে ভবনের ভেতরে তামাকজাত দ্রব্যের বিক্রয়কেন্দ্র, ৭% কেন্দ্রে ভবনের বাহিরে কিন্তু সীমানার মধ্যে তামাকের বিক্রয়কেন্দ্র, ১% কেন্দ্রের সীমানার মধ্যে ভ্রাম্যমাণ তামাক বিক্রেতা এবং ৬৫% স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রের সীমানা থেকে ১০০ মিটারের মধ্যে তামাকজাত দ্রব্যের বিক্রয়কেন্দ্র পাওয়া গেছে। এছাড়া ৩% স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে তামাকের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে বার্তা (ভর্তি ফরম, ছাড়পত্র এবং লিফলেটের মাধ্যমে) দেয়া হচ্ছে জরিপে উঠে এসেছে। 

জরিপের প্রতিবেদনে আরও দেখা গেছেÑ ৪৭% শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ধূমপানের নিদর্শন, পানের পিক দেখা গেছে ২৯% প্রতিষ্ঠানে। ৪% প্রতিষ্ঠানে সরাসরি ধূমপান, ৪৩% প্রতিষ্ঠানে সিগারেট/বিড়ির বাট পাওয়া গেছে। ৬০% প্রতিষ্ঠানে আইন অনুযায়ী সতর্কতামূলক নোটিশ পাওয়া যায়নি। এমনকি ৪৯% প্রতিষ্ঠানে কোন ধরনের সতর্কতামূলক নোটিশই নেই। এছাড়া ৭৮% শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সীমানা থেকে ১০০ মিটারের মধ্যে তামাকজাত দ্রব্যের বিক্রয়কেন্দ্র পাওয়া গেছে।  

এছাড়া জরিপে দেখানো হয়Ñ ৪৮% রেস্টুরেন্টে ধূমপানের নিদর্শন এবং ৩৯% রেস্টুরেন্টে পানের পিক দেখা গেছে। সরাসরি ধূমপান করতে দেখা গেছে ২৫% রেস্টুরেন্টে, ৪৩% এ সিগারেট/বিড়ির বাট এবং ১১% এ ধূমপানের গন্ধ পাওয়া গেছে। ৬৯% রেস্টুরেন্টে আইন অনুযায়ী সতর্কতামূলক নোটিশ পাওয়া যায়নি। এমনকি ৫৯% রেস্টুরেন্টে কোন ধরনের সতর্কতামূলক নোটিশই নেই। ৭% রেস্টুরেন্টে তামাকজাত দ্রব্যের বিজ্ঞাপন ও ১০% রেস্টুরেন্ট এর ভেতরে তামাকজাত দ্রব্য বিক্রয় করতে দেখা গেছে। জরিপকৃত ৬৯টি বা ২১.৮% রেস্টুরেন্টের ট্রেডলাইসেন্স নেই এবং জরিপের আওতায় ৩১৬টি রেস্টুরেন্টের মধ্যে ২০২টি অর্থাত ৬৩.৯% রেস্টুরেন্ট মালিক সমিতির সদস্য নয় বলে জরিপে উঠে এসেছে। সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে এসিডির প্রোগ্রাম অফিসার কৃষ্ণা রাণী বিশ্বাস ও আনোয়ার হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। 

উল্লেখ্য, গত ১০ ফেব্রæয়ারি সকালে রাজশাহী জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে জরিপের ফলাফল উপস্থাপন নিয়ে এক মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়েছিল। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থেকে জেলা প্রশাসক মো. হামিদুল হক বেসলাইন এই জরিপের তথ্যচিত্রের মোড়ক উন্মোচন করেন। অনুষ্ঠানে তিনি পাবলিক প্লেসে ধূমপান করতে দেয়া হবে না বলে ঘোষণা দেন। সেই সাথে তিনি স্কুলের পাশে তামাকপণ্য বিক্রি বন্ধে প্রয়োজনীয় উদ্যোগের কথাও জানান। পাশাপাশি রাজশাহী সিটিকে ধূমপানমুক্ত করতে তা তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও আশ্বাস দেন।

Post Top Ad

Responsive Ads Here