সঞ্জিব দাস, ফরিদপুর থেকে :
করোনা ভাইরাস নামক এক ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব এর মহামারি রুখতে দেশের কোন দলের আন্দোলনের বাইরে এসে নিজ দেশকে মহামারির হাত থেকে বাচাঁতে ফরিদপুর এতটা ফাঁকা হতে দেখেনি এর আগে কেউ।
আশিউর্ধ্ব এক বৃদ্ধ মুনছুর শেখ বলেন, এতটা ফাঁকা এর আগে কখনোই হতে দেখেনি আমরা ফরিদপুর বাসি, শুধু শহর নয় পুড়ো জেলা। দেশের বড় বড় আন্দোলনের সময় গুলোতেই এতটা ফাঁকা হয়নি শহর বা জেলা। তিনি বলেন, আমার জীবনে অনেক আন্দোলনেও জেলার রাস্তা-ঘাট এতটা ফাঁকা হয়নি, যা এখন আমি দেখতে পাচ্ছি। এটা দেখলে সেই মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়ের কথা মনে পড়ে যায়। তবে সে সময়ও নিজ থেকে এত নিরব ছিলো না জনজীবন। তিনি বলেন, আমি বলবো এটাকে এই মহামারি প্রাদুর্ভাব থেকে ভালো থাকার এ এক নিরব আন্দোলন ঘড়ে থাকার।
নিজের ভালো রাখতে, পরিবার, সমাজ ও দেশের কথা ভেবে নিজ থেকে এমন নিরব ঘড়ে থাকার উদাহরন খুব কম দেখা যায় ইতিহাসে। একুবিংশ শতাব্দি যখন মাথা তুলে নতুন এক বিশ্ব গড়ার প্রত্যয়ে ঠিক সেই মূর্হতে এলো এই ঝড়। যাতে ১৯৮টি দেশ মোকবেলায় ব্যস্ত শুধু বললে ভুল হবে, অনেক রাষ্ট্র সংকট এই মহামারি মোকাবেলার খেই হারিয়ে এখন উপরের দিকে চেয়ে রয়েছে।
এদিকে দেশে চলছে টানা দশ দিনের ছুটি। এর উপর জরুরী প্রয়োজনীয় যানবাহন ছাড়া নিষেধাজ্ঞা রয়েছে বাইরে বের হতে। যে কারনে দেশের গুরুত্বপূর্ণ জনতা ব্যাংক মোড়ে আজ নেই কোন যানজট।
বৃহস্পতিবার বিকেলে জনতা ব্যাংক মোড় জিরো পয়েন্ট এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সড়কে একটিও যানবাহন নেই একেবারেই ফাঁকা। অপর দিকে মার্কেট, বাজার কোথাও নেই ভীড়। কিছু ঔষধের দোকানে দুএকজন থাকলেও অনেকের চাহিদার ঔষধ না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন। এদিকে জেলার মহাসড়কের গন পরিবহন চলাচল বন্ধ থাকায় সেখানেও ফাঁকা। এর প্রভাবে ফরিদপুর জেলা জুড়ে কর্মহীন হয়ে পড়েছে কম আয়ের শ্রমিক ও দিন মজুরা। গত তিন দিন জেলার সদর থেকে শুরু করে উপজেলার সদরের অধিকাংশ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। শহর গুলোতে জনসাধারনে চলাচলও সীমিত করা হয়েছে।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানাগেছে ফরিদপুরে সর্বাধিক সংখ্যক বিদেশী আসার কথা বিচেনা করে করোনার বিস্তার রোধে প্রশাসনের তৎপরতা রয়েছে সর্বোচ্চ। জেলা শহরের গুরুত্বপূর্ন সড়ক গুলোতে সেনাবাহিনীর টহল ছাড়াও জেলা পুলিশ মহসড়ক গুলোতে অবস্থান নিয়েছে। এসময় তারা প্রধান সড়কে নেমে চেষ্টা করেছেন যাতে একাধিক ব্যক্তি একসাথে চলাচল না করে এবং প্রয়োজন ছাড়া কেউ বাইরে না আসে। একই সাথে মাদারীপুর জেলার সাথে ফরিদপুরের সড়ক যোগযোগ বন্ধ রাখতে চারটি পয়েন্টে পুলিশের চেকপোষ্ট বসানো হয়েছে। জরুরী খোলা রাখা দোকান গুলোর সামনে গোল চিহৃ দিয়ে দেয়া হয়েছে যাতে ক্রেতারা দোকান গুলোতে এসে নিরাপদ দুরত্ব বজায় রাখে।
ফরিদপুরের পুলিশ সুপার মোঃ আলিমুজ্জামান বলেন, করোনা ঠেকাতে বিনা প্রয়োজনে কেউ যাতে বাইরে না আসে সে লক্ষ্যে বিভিন্ন স্থানে চেকপোষ্ট বসানো হয়েছে। বৃদ্ধি করা হয়েছে পুলিশি টহল। একই সাথে মাদারীপুর জেলার সাথে ফরিদপুরের সড়ক যোগযোগ বন্ধ রাখতে তিনটি ইউনিয়নের চারটি পয়েন্টে পুলিশের চেকপোষ্ট অব্যহত রয়েছে। এছাড়া গত তিন ধরে ঢাকা থেকে আসা মানুষকে হোম কোয়ারেন্টাইন করার প্রচেষ্ট চলছে। তিনি বলেন আমি সবাইকে বলবো হোম কোরেন্টটাইন মেনে ঘড়ে থাকার জন্য।
ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক অতুল সরকার বলেন, সরকারের সিদ্ধান্ত রয়েছে এই দূযোর্গের সময়ে অতি দরিদ্রদের তালিকা করে খাদ্য সহায়তা দেওয়ার। আমরা স্থানীয় প্রশাসনকে নির্দেশনা দিয়েছি এরই মধ্যে তাদেরকে খাদ্য সহায়তা প্রদান করার জন্য। অনেক জায়গায় সেটা শুরু হয়ে গেছে বলে তিনি জানান। তিনি আরো বলেন, আমি জেলা বাসিকে অনুরোধ করে বলবো আপনারা সরকারের যে নির্দেশনা রয়েছে সেটি মেনে ঘড়ে থাকুন। আমরা জেলা প্রশাসন আপনাদের পাশে রয়েছি সব সময়। একই সাথে বলবো কোন গুজবে কেউ কান দিবেন না। তিনি আরো বলেন, জেলার দুটি সরকারী হাসপাতাল ৮৫টি বেড প্রস্তুত রয়েছে। একই সাথে ২টি এ্যাম্বুলেন্স ও ৩৫টি আইসোলেশন ব্যবস্থা করা হয়েছে। তিনি বলেন, ৯টি উপজেলার খাদ্য সহয়তা বিতরন কর্মসূচিতে ৩১শত ০৬টি পরিবারের জন্য ১১৫ মেঃ টন খাদ্য ও নগদ ১৮ লক্ষ ১০হাজার টাকা বরাদ্ধ দেয়া হয়েছে। একই সাথে মজুদ রয়েছে ১৯২ মেঃ টন খাদ্য ও ২ লক্ষ ৫৪ হাজার টাকা। প্রতিটি উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা স্বাস্থ্য কার্যালয়ে কন্টোল রুম খোলা হয়েছে।এরপরেও আরো কিছু জায়গা নির্ধারন করে রাখা হচ্ছে আইসোলশনের জন্য বলে তিনি জানান।
জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ শুক্রবার জানিয়েছে, গত ২৪ ঘন্টায় জেলায় নতুন করে ৯১ জনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে নেয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে এ পর্যন্ত ১৫৬৭ জনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে নেয়া হয়। এর ভিতর ছুটি দেয়া হয়েছে ৫৩৪ জনকে।
No comments:
Post a Comment