এটা কি আমার সেই চিরচেনা রাতের শহর - সময় সংবাদ | Popular Bangla News Portal

শিরোনাম

Monday, April 06, 2020

এটা কি আমার সেই চিরচেনা রাতের শহর


সঞ্জিব দাস : :
গত কয়েক দিন হলো বলতে পারেন ঘর বন্দি হয়ে জীবন যাপন করছি। এসময় ঘরের মধ্যে থাকা ল্যাপটপ আমার তিন বছরের শিশু সন্তান সোহানকে নিয়ে খেলাধুলা করে সময় পার করা ছাড়া কোন উপায়ন্তর দেখতি পাচ্ছি না। আর এ কারনেই এসব যন্ত্রচালিত বস্তু ও আমার সন্তান এখন আমার কাজ অন্যটি আমার খেলার বড় নিয়ামক হয়ে উঠেছে।

তবে কোন ভাবেই এই সময় পার হতে চাচ্ছে না। তারপরেও নিজের জন্য, দেশের জন্য নিয়মটি মেনেই চলছি। নিজ সাংবাদিক পেশাকে কোন মতে হ্যান্ডেল করছি এটাও সত্যি। যদিও এই পেশা এভাবে ঘরে থেকে হয় না এটা বলতেই হবে কোন রকম রাখ ডাক ছাড়াই।

যাই হোক অনেদিন হলো ঘড়ের বাইরে আমি বের না হতে হতে বড়িং ফিল করার পর গত কয়েকদিন আগে রাত(সম্ভবত শুক্রবার) আটটার দিকে একটু হাটতে বের হয়েছিলাম শহরের দিকে। সত্যি বলতে আমি চিনতে পারিনি আমার নিজ শহরকে। কেমন যেন ঘুমোট এক প্রান্তর দিয়ে আলীপুর হয়ে শহরের প্রধান সড়কে উঠতেই সেখানেও যেন এর কোন পরিবর্তন দেখা গেলো না। নিজে ভাবলাম হয়তো সামনে কাউকে পাব, কিন্তু কাউকে পাইনি। এভাবে জনতা ব্যাংক মোড়ে গিয়ে দেখলাম কয়েকটি কুকুরের হাকডাক। তবে তাদের দেখে মনে হলো তারাও মনোব্রত পালন করে চলছেন। ইচ্ছে ছিলো থানার সামনে তরকারি বাজারে গিয়ে কিছু রসুন কিনবো। কিন্তু সেখানেও কোন দোকান খোলা নেই। ব্যস্ততম এই জায়গাটি মনে হলো কোন ভূতরে পরিবেশে বন্দি। এরপর ময়রা পট্রির এলাকায় গিয়ে নিজেকে আমি নিজেই চিনতে পারিনি সত্যি বলতে। একটা সময় মনে হলো কেউ হয়তো চোর চোর বলে আমাকে পিছন থেকে এসে মারবে। যাই হোক এই সময়ে সেটা হয়নি। কোলাহল মুক্ত রাস্তা-ঘাটের অবস্থা দেখে যত দ্রুত সম্ভব বাসায় ফেরা যায় ততটাই এরপর লক্ষ্য ছিলো।

বাসায় ফিরে এক এক করে সব কিছু যখন সাবান পানি দিয়ে ধৌত করছিলাম তখন একটি কথা মনে হয়েছে এটা আমার কোন শহর নয়। এটা কোন প্রচীন যুগের গ্রীক সভ্যতার কোন ভূতরে নগরী।

আমি রাত আটটার সময় ফরিদপুর শহরের এমন রুপ আমার জীবনে কখনো দেখিনি। তারপরও নিজ থেকে সকলে ঘড়ে থাকার এমন মহান কাজটি হয়তো সবাই দেশের কথা ভেবেই করছেন। এখানে হয়তো আমাদের সকল জাতিগোষ্ঠি দল মতের উর্দ্ধে উঠে এক হতে পেরেছি এর থেকে ভালো লাগা আর কিছইু নেই। 


নিজের ভালো রাখতে, পরিবার, সমাজ ও দেশের কথা ভেবে নিজ থেকে এমন নিরব ঘড়ে থাকার উদাহরন খুব কম দেখা যায় ইতিহাসে। একুবিংশ শতাব্দি যখন মাথা তুলে নতুন এক বিশ্ব গড়ার প্রত্যয়ে ঠিক সেই মূর্হতে এলো এই ঝড়। 


যাতে ২০৪টি দেশ এই মহামারি মোকবেলায় ব্যস্ত বললে শুধু ভুল হবে, অনেক রাষ্ট্র এই করোনা ভাইরাস সংকট মহামারি মোকাবেলার খেই হারিয়ে এখন উপরের দিকে চেয়ে রয়েছে। পৃথিবীর ক্ষমতার কেন্দ্র থাকা দেশটি যুক্তরাষ্ট্র এখন থমকে গেছে। তাদের দেশ শুধু করোনাকে হালকা ভাবে নেওয়ার কারনে আজ দেশটিতে সবচেয়ে বেশি মানুষ আক্রান্ত। ভাবা হচ্ছে সবচেয়ে বেশি ভয়াভহতা হতে পারে এই মার্কিন মুল্লুকে। এর ভিতর নিউইয়র্ক শহরতো রীতিমতো ভেঙ্গেই পড়েছে। সেখানে থাকা এ পর্যন্ত ৬৩ জন বাংলাদেশী মৃত্যুর খবর গনমাধ্যমে এসেছে। দেশটিতে প্রতিদিন গড়ে হাজারের উপরে মানুষের মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। এভাবে কতদিন আমেরিকা লড়াই করতে পারবে এটাই এখন বড় প্রশ্ন সাড়া বিশ্বের কাছে।

এদিকে দেশে চলছে টানা ছুটি। প্রথমদফা থেকে সরকার ছুটির মেয়াদ এরই ভিতর আরেকদফা বৃদ্ধি করেছে ৯ এপ্রিল পর্যন্ত। সব মিলিয়ে এ পর্যন্ত এ ভাইরাস সংক্রমণে সরকারী হিসেবে দেশের মৃত্যু সংখ্যা নয়জনে দাড়িয়েছে। আক্রান্ত ৮৮ জন বলে আইইডিসিআর থেকে জানানো হয়েছে। এখন সরকার সকলে তাদের যে নির্দেশনা মেনে ঘড়ে থাকতে বার বার অনুরোধ করছে। ঢাকা ও ঢাকার বাইরের শহরগুলোতে চলাচলে আরো বেশি কঠোরতা এসেছে।

ফরিদপুরের জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও সেনাবাহিনী দিনরাত কাজ করছে মানুষের সামাজিক দুরুত্ব বজায় রাখতে। জরুরী প্রয়োজনীয় যানবাহন ছাড়া নিষেধাজ্ঞা রয়েছে বাইরে বের হতে। যে কারনে জেলার গুরুত্বপূর্ণ জনতা ব্যাংক মোড়ে আজ নেই কোন কোলাহল। জেলার সদর থেকে শুরু করে উপজেলার সদরের অধিকাংশ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। শহর গুলোতে জনসাধারনে চলাচলও সীমিত করা হয়েছে। রাতের চোখে শহরের এমন ভূতরে পরিবশে আমার মেনে নিতে একটুও কষ্ট হয়নি। এটাই আমার ও আমাদের সকলের ভালো থাকার এক জয়গান।

শেষ করবো ফররুখ আহমেদ এর কবিতা “পাঞ্জেরি” এই কবিতার প্রথম কয়েকটা লাইন কিছুদিন আগে ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক তার ফেসবুক পোষ্টে দিয়েছেন। কবিতার শেষে তিনি স্রষ্টার কাছে অমানিশা কেটে যাওয়ার আকুতি দিয়েছেন সেই পোষ্টটি তুলে ধরা হলো-

‘রাত পোহাবার কত দেরি পাঞ্জেরি?
এখনো তোমার আসমান ভরা মেঘে?
সেতারা, হেলাল এখনো ওঠেনি জেগে?
তুমি মাস্তলে, আমি দাঁড় টানি ভুলে;
অসীম কুয়াশা জাগে শূন্যতা ঘেরি।’
-- এ ঘন ঘোর অমানিশা একদিন কেটে যাবেই।
পৃথিবীতে আবার ফিরে আসবে প্রাণ প্রাচুর্য;
বেঁচে থাকুক পৃথিবী, বেঁচে থাকুক এর সকল মানুষ!

No comments: