বালু নেওয়া হচ্ছে অনুমোদনহীন ইটভাটায় ৬টি ড্রেজার বসিয়ে নদী থেকে - সময় সংবাদ | Popular Bangla News Portal

শিরোনাম

Monday, January 18, 2021

বালু নেওয়া হচ্ছে অনুমোদনহীন ইটভাটায় ৬টি ড্রেজার বসিয়ে নদী থেকে

 


ফরিদপুর প্রতিনিধি :
ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার বাগাট ইউনিয়নের মিটাইন গ্রাম এলাকার মধুমতি নদীতে একই স্থানে ৬টি ড্রেজার বসিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে স্থানীয় ইটভাটা এম এম কে বি ব্রিকসের মালিক মিটুল মোল্লা। নদী থেকে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করে রাখা হচ্ছে দুইটি জায়গায়, সেখান থেকে বেকু দিয়ে কেটে ট্রলিতে করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ইট ভাটায়।

এছাড়াও ওই এলাকার বিভিন্ন ফসলি জমি থেকেও বেকু দিয়ে মাটি কেটে ট্রলিতে করে নেওয়া হচ্ছে ওই ইটভাটায়। যে ইটভাটায় ওই বালু নেওয়া হচ্ছে সেই ইটভাটাটিরও কোনো অনুমোদন নেই বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

ওই ইটভাটা মালিক স্থানীয় প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় থাকায় ভয়ে কেউ তার বিরুদ্ধে কথা বলতে সাহস পায় না। এবিষয়ে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছে স্থানীয় এলাকাবাসী।

জানা যায়, মধুখালী উপজেলার বাগাট ইউনিয়নের মিটাইন গ্রামের মধুমতি নদী ঘাট সংলগ্ন এলাকায় একই স্থানে ৬টি ড্রেজার বসিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছেন ওই এলাকার এম এম কে বি ব্রিকসের মালিক মিটুল মোল্লা। ভাটা মালিক স্থানীয় প্রভাবশালীদের ম্যানেজ করে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছেন বলে অভিযোগ করেছেন এলাকাবাসী।

স্থানীয় বাসিন্দা আলফাজ হোসেন বলেন, গত এক সপ্তাহ যাবৎ মিটাইন ঘাট সংলগ্ন এলাকায় মধুমতি নদীতে ৬টি বড় ড্রেজার মেশিন বসিয়ে দিন রাত বালু উত্তোলন করছেন ইটভাটা মালিক মিটুল মোল্লা। বালু উত্তোলন করে পাইপের মাধ্যমে সামাদ ফকিরের বাড়ির বিপরীতে এবং ঘাট সংলগ্ন এলাকায় বালুর স্তুপ করে রাখা হচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, ইটভাটা মালিক মিটুল মোল্লা স্থানীয় প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় থাকায় তার এসকল অপকর্মের বিরুদ্ধে কেউ ভয়ে কথা বলতে সাহস পায়না।

সরোজমিনে সোমবার (১৮ জানুয়ারি) সকালে মিটাইন ঘাট সংলগ্ন এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, মধুমতি নদীতে একটি জায়গায় ৬টি ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। প্রায় ২৫ জন শ্রমিক কাজে নিয়োজিত রয়েছেন। বালু পাইপের মাধ্যমে ঘাট সংলগ্ন এলাকায় এবং কয়েকশ গজ দূরে সামাদ ফকিরের বাড়ির বিপরীত পাশের্^ রাখা হচ্ছে। মাঝিবাড়ি-রায়জাদাপুর সড়কের উপর বাধ দিয়ে পাইপ নেওয়া হয়েছে, সড়কের উপর বাধ দেওয়ায় সড়কের কিছু অংশ ধ্বসে গেছে। দেখা যায়, ওই বালু নেওয়ার জন্য কয়েকটি বেকু ও ট্রলি প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

এদিকে সরোজমিনে ইটভাটা এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, চারপাশে ফসলি জমি ও বাড়িঘর, তার মাঝেই নির্মাণ করা হয়েছে ইটভাটা। ফসলি ক্ষেতের মধ্যে ইট রাখা হয়েছে।

মিটাইন গ্রামের যেখানে বালু রাখা হচ্ছে তার পাশ্¦বর্তী বাসিন্দা সামাদ ফকিরের স্ত্রী গোলাপী বেগম বলেন, ইটভাটা মালিক মিটুল গত এক সপ্তাহ যাবৎ নদী থেকে বালু উত্তোলন করে এখানে রাখছে। এখান থেকে বালু তার ভাটায় নেবে বলে আমার শুনেছি।

মিটাইন গ্রামের বাসিন্দা আশরাফ হোসেন বলেন, ইটভাটা মালিক মিটুল মোল্লা গতবছরও স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তি ও প্রশাসনকে ম্যানেজ করে অবৈধভাবে মধুমতি নদী থেকে বালু উত্তোলন করেছে। এবছরও গত এক সপ্তাহ যাবৎ বালু উত্তোলন শুরু করেছে।

তিনি আরো বলেন, মিটুল মোল্লার ইটভাটা এম এম কে বি ব্রিকসেরও অনুমোদন এখনো পায়নি। সবকিছু ম্যানেজ করে অবৈধভাবে ইটভাটা চালাচ্ছে আবার অবৈধভাবে নদী থেকে বালুও উত্তোলন করছে। দেখার কেউ নেই। এবিষয়ে জরুরীভাবে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত কয়েকবছর যাবৎ মিটাইন গ্রামে কৃষি জমিতে এম এম কে বি নামে একটি ইটভাটা স্থাপন করেন মিটুল মোল্লা। ইটভাটা চালুর সময় থেকেই ওই এলাকার বাসিন্দারা ইটভাটা স্থাপনে বাধা দেয়। কিন্তু ওই সময় মিটুল মোল্লা স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তি ও প্রশাসনের ছত্রছায়ায় ইটভাটা নির্মাণ করেন। ইটভাটা চালু হওয়ার পর ট্রলিতে মাটি আনা নেওয়ার কারনে মাঝিবাড়ি-নওপাড়া সড়ক দিয়ে চলাচলকারীদের ভোগান্তি পোহাতে হয়। এবিষয়ে স্থানীয়দের নানা অভিযোগ থাকলেও কোনো কিছুর তোয়াক্কা না করেই তিনি ইটভাটা চালিয়ে যাচ্ছেন। এম এম কে বি ব্রিকসের নেই কোনো অনুমোদন। অনুমোদন ছাড়াই ইটভাটা চালিয়ে যাচ্ছেন মিটুল মোল্লা।

স্থানীয় বাসিন্দা রাশেদ বলেন, কৃষি জমিতে ইটভাটা করা হয়েছে। এরপর ধোয়া এবং ধুলার কারনে আমরা এলাকায় বসবাস করতে পারিনা। আমরা কিছু বললে মিটুল ও তার লোকজন আমাদের হুমকি ধামকি দেয়। একারনে আমরা চুপ করে থাকি।

বাগাট ইউনিয়ন পরিষদের ৪নং ওয়ার্ডের সদস্য (মিটাইন এলাকা) আব্দুর রব মুন্সি জানান, আমি তাবলিকে এসেছি প্রায় ২০দিন। এলাকায় না থাকায় কিছু বলতে পারছি না। এলাকায় এসে খোঁজ নিব।

এবিষয়ে মধুখালী উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) তানিয়া তাবাচ্ছুম জানান, বিষয়টি আপনার মাধ্যমে জানতে পারলাম। খুব দ্রæতই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

মধুখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মোস্তফা মনোয়ার বলেন, উপজেলাতে ড্রেজার দিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করার কোনো সুযোগ নেই। এখনই বন্ধ করার ব্যবস্থা গ্রহন করছি।

এম এম কে বি ব্রিকসের মালিক অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকারী মিটুল মোল্লা বালু উত্তোলনের বিষয়টির সত্যতা স্বীকার করে বলেন, বাড়ি করার জন্য নদীতে ৬টি ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলন করছি। কোনো অনুমোদন নেওয়া হয়নি। অবৈধভাবেই বালু উত্তোলন করছি। ইটভাটার অনুমোদনের বিষয়ে তিনি বলেন, সকল ধরনের অনুমোদনের কাগজপত্র আছে। কিন্তু তিনি কোনো কাগজপত্র দেখাতে পারেননি।

No comments: