সালথা প্রতিনিধিঃ ফরিদপুরের সালথায় লকডাউনকে কেন্দ্রকরে গুজব ছড়িয়ে সহিংসতার পর থেকে বিভিন্ন এলাকায় পুলিশ, র্যাব ও ডিবি’র অভিযান অব্যাহত থাকায় গ্রেফতার আতঙ্কে উপজেলা সদরসহ ৮টি ইউনিয়নের প্রায় ৩০টি গ্রাম পুরুষ শূন্য। গ্রেফতার ভয়ে এখন পুরুষেরা রাতের বেলায় বাড়ীতে থাকতে পারছেন না। দিনের বেলায় হাতেগোনা কয়েকজন পুরুষকে দেখা গেলেও রাতে সে সংখ্যা নেমে আসে শূন্যের কোঠায়। এদিকে হাটবাজারের দোকানপাট বন্ধ কিছু দোকান খোলা থাকলেও সেখানে নারী-শিশু ছাড়া পুরুষের দেখা মিলছেনা।
সরেজমিনে এসব গ্রামগুলো ঘুরেও নারী-শিশু ছাড়া কাউকে দেখা যায়নী। তবে কোন কোন গ্রামে বয়স্ক ও বৃদ্ধদের দেখা গেলেও তা সামান্য। এদিকে বেশকিছু গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে কৃষিপণ্য পাটক্ষেত পরিচর্যার কাজ করছেন নারীরা। জানতে চাইলে তারা বলেন, আমরা পাট পেয়াজের উপর নির্ভরশীল এটি পাটের মৌসুম পাটের মধ্যে অনেক ঘাষ হয়ে গেছে এগুলা পরিষ্কার করতে হবে নাহলে পাট বড় হবেনা। এরপর ক্ষেতে পানি, সার, ঔষধ দিতে হবে, আমাদের পুরুষরা বাড়িতে থাকতে পারছেনা পুলিশ ঘোরাঘুরি করছে বাধ্যহয়ে এই কাজ আমাদের করতে হচ্ছে। তা নাহলেতো এই ফসল নষ্ঠ হয়ে যাবে আমরা কি খেয়ে বাচব?। পাট পেয়াজের রাজধানী খ্যাত সালথা উপজেলায় এ বছর পাটচাষিরা ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখিন হতে পারেন বলে ধারনা করা হচ্ছে। এটি পাটশিল্পের জন্য যে বড় ধরনের অশনিসংকেত তা বালার অপেক্ষা রাখেনা।
নাম ঠিকানা প্রকাশ না করা শর্তে কর্য়েক নারীর সাথে কথা হলে এক বৃদ্ধা নারী বলেন, বাবা আমার দুটি ছেলে ঢাকা থাকে স্বামী অসুস্থ আমরা সেদিনের ঘটনার কিছুই জানিনা তোবুও তাকে পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে কারন শুনেছি যাকে ধরছে সেই আসামী সেই ভয়ে পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে। আমাদের মসজিদে আজ ৫দিন ধরে কোন আজান হয়না মসজিদের দিকে তাকালে চোখের পানি চলে আসে। কাল রোজা ঘরে বাজার নেই এখন আল্লাহুই আমাদের ভরসা। তিনি বলেন, এইযে আমাদের ক্ষেত এখানে সার, পানি, ঔষধ,নির দিতে হবে তাই সরকারের কাছে আমার চাওয়া যারা অপরাধী তাদের বিচার করুক আর যারা নিরীহ তাদেরকে সুযোগ দেওয়া হোক যেন আমরা কাজকর্ম করে খেয়ে বেচেঁ থাকতে পাড়ি।
আরেক নারী বলেন, আমার স্বামী পঙ্গু সবসময় তার শরীর কাপে তাকে ধরলেই তার জীবন চলেযাবে তাই সে ভয়ে কোথায় চলে গেছে কোন খোজ নেই, যাওয়ার সময় বলেগেছে আমাকে এই মুহুর্তে একটি বারি দিলে আমি বাঁচবনা। তিনি আরো বলেন, তার কিডনি সমস্যা আছে শুনেছি তাকেও আসামী দেওয়া হয়েছে, অথচ সে এসবের কিছুই যানেনা। বাসায় চাউল নেই খেয়ে বাচার মত কোন ব্যাবস্থা নেই তাই ক্ষেতে কাজ করতে হচ্ছে। আমরা এখন প্রধান মন্ত্রীর কাছে ক্ষমা চাই। আমরা বাচতে চাই।
অপর আরেক নারী বলেন, যারা অপরাধ করেছে তাদের বিচার আমরা চাই। এতবড় ক্ষতি তারা করেছে এগুলাতো আমাদেরই সম্পদ, আমার এলাকা, আমাদের উপজেলা ক্ষতি করেছি আমরাই, তাই প্রধান মন্ত্রীর কাছে আমার অনুরোধ সরকারের কাছে অনেক যন্ত্র আছে সেগুলো ব্যাবহার করে যারা প্রকৃত দোষী তাদের বের করে কঠিন শাশিÍ দিক। কিন্তু আমরা যে নিরীহ মানুষ আমাদের মসজিদে আজান হচ্ছেনা রাত পোহালেই রোজা কিছুই কিনতে পারিনী কি খেয়ে রোজা থাকব? একদিকে আমাদের ধান মাইর গেছে আবার পাটও মাইর যাচ্ছে আমরা কিভাবে চলব? আমার স্বামী নসিমন চালায় কোথায় গেছে কোন খোজ পাচ্ছিনা। আমরা ভাতে মরছি আল্লাহর কাছে মাপ চাইলেও মাপ পাওয়া যায় আমরা অপরাধ না করেও প্রধানমন্ত্রীর কাছে ক্ষমা চাই কারন আমাদের প্রধানমন্ত্রী অনেক সহায়তা করছে, ধিববা,বয়স্ক থেকে সুরু করে ঘরদেওয়া সব ধরনের সুবিধা সে আমাদের দিচ্ছে তোবুও আমরা আমাদের সম্পদ নষ্ট করেছি। সেজন্য সবাই এখন দোষি তাই আমার দাবি নিরীহ মানুষদের নিরাপদে থাকারা সুযোগ করে দিয়ে দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তি দিক।
আরেক নারী বলেন, আমাদের উপজেলায় যারা ঘটনাটি ঘটিয়েছে তারা দূরে চলেগেছে, কিন্তু এ জন্য নিরীহ মানুষ গুলো পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে কারন যাকে ধরছে সেই আসামী, তাই এখন প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমার অনুরোধ আমরা গ্রামের মানুষ আমরা এসবের ভেতর যাইনী আমরা তার কাছে ক্ষমা চাই। তিনি বলেন রাত পোহালেই রোজা কিন্তু একটি মসজিদে আজান নেই আর মসজিদে আজান দিয়ে মানুষকে না ডাকলে আমরা কি ভাবে রোজা থাকব?
আরেকজন নারী বলেন, আমরা গরিব মানুষ অভাবের সংসার কিস্তি চালাতে হয়। পুরুষ মানুষ বাড়িতে নেই, কিস্তি নেওয়ার জন্য লোকেরা বাড়ীতে এসে বসে থাকে খারাপ ব্যাবহার করে।
সোনাপুর বাজারের এক মুদিখানা দোকানদার বলেন, গত ৬ তারিখ থেকে দোকান করতে পারছিনা রাতের বেলা ঘুমাতে গেলে ভয় লাগে কখন এসে ধরে নিয়ে যায়।
এছাড়া বিভিন্ন এলাকা ঘুরে জানা যায়, এখানকার মানুষরা গ্রেফতার আতঙ্কে আছে। বেশিভাগ যুবকেরা গ্রেফতার ভয়ে বাড়ীতে নেই। আতঙ্কে অনেক দোকানপাটও বন্ধ আছে।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি (৫ই এপ্রিল) সন্ধ্যায় করোনা মোকাবিলায় বিধিনিষেধ কার্যকর করতে লোকজনকে পেটানো হয়েছে- এমন গুজব ছড়িয়ে সালথা থানা ও উপজেলা কমপ্লেক্র ঘেরাও করে তান্ডব চালায় স্থানীয়রা। ওই তান্ডবের ঘটনায় ৫টি মামলা হয়েছে এতে ২৬১ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত প্রায় চার হাজার জনকে আসামী করা হয়েছে।