সময় সংবাদ ডেস্কঃ
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে গিয়ে ঘোড়ার পিঠে চড়েননি এমন মানুষ কমই পাওয়া যাবে। ঈদে কিংবা বিভিন্ন মৌসুমে দীর্ঘতম এ সৈকতে ঘুরতে যান লাখো পর্যটক। আর পর্যটকরাই ঘোড়া মালিকদের একমাত্র ভরসা। কিন্তু চলমান টানা লকডাউনে দুর্দিন চলছে তাদের। খাদ্য সংকটে পড়েছে ঘোড়াগুলো। আর খাদ্যের অভাবে ৫৯টি ঘোড়া মৃত্যুঝুঁকিতে রয়েছে।
ঘোড়াগুলোর খাবার জোগাড় করার কথা মালিকপক্ষের। অথচ তারাই রাস্তায় ছেড়ে দিয়েছেন এসব ঘোড়া। তাই পথের ধারে খেয়ে না খেয়ে ঘোড়াগুলোর বাড়ছে মৃত্যুঝুঁকি। খাদ্যের অভাবে ঘোড়ার মৃত্যুর খবর লোকমুখে শোনা গেলেও বিষয়টি এড়িয়ে যাচ্ছেন সংশ্লিষ্ট দফতরের লোকজন।
করোনা সংক্রমণ রোধে লকডাউনে সৈকতে পর্যটক নিষিদ্ধ থাকায় আয়-রোজগারের সংকটে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। মালিকদের পক্ষে ঘোড়াগুলোকে পর্যাপ্ত খাবার দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। ফলে চলতি বছর মারা গেছে ছয়টি ঘোড়া। অবশ্য, এসব ঘোড়ার বেশিরভাগ রোগে ও সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কক্সবাজার সৈকতে বেড়াতে আসা পর্যটকদের বিনোদন দেয়ার জন্য দীর্ঘদিন ব্যবহার হয়ে আসছে ৫৫টি ঘোড়া। ঘোড়া মালিকদের ২২ সদস্যের ‘কক্সবাজার ঘোড়া মালিক সমিতি’ রয়েছে। সমিতির বাইরে আরো ১০টিসহ ৬৫টি ঘোড়া রয়েছে। এসব ঘোড়ার পিঠে চড়ে, ছবি তুলে নানাভাবে বিনোদন উপভোগ করেন পর্যটকরা।
এর বাইরে ঘোড়ার গাড়ি, বিয়ে ও বিভিন্ন উৎসবে ঘোড়াগুলোর ব্যবহার হয়। যার বিনিময়ে ঘোড়া মালিকরা টাকা পান। এসব টাকা নিজেদের সংসারের পাশাপাশি ঘোড়াগুলো লালন-পালনে ব্যয় করেন। কিন্তু চলতি বছরের ১ এপ্রিল থেকে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ ঠেকাতে লকডাউন ঘোষণা করে সৈকতসহ বিনোদন কেন্দ্রগুলো বন্ধ করে দেয় জেলা প্রশাসন। ফলে পর্যটকশূন্য হয়ে পড়ে কক্সবাজার। এতে অন্যান্য পর্যটন ব্যবসায়ীদের মতো বেকায়দায় পড়েন ঘোড়া মালিকরা।
কক্সবাজার শহরের ঘোনারপাড়া এলাকার ঘোড়ার মালিক জসিম উদ্দিন বলেন, আমার ছয়টি ঘোড়া রয়েছে। করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে সৈকতে পর্যটক নিষিদ্ধ করার পর চরম খাদ্য সংকটে পড়ে ঘোড়াগুলো। আমার মতো অন্য ঘোড়ার মালিকরাও একই অবস্থায় পড়েন। ফলে সদর উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমাকে ১৫ বস্তা ভুসি দেয়। কিন্তু ১৫ বস্তা ১৫ দিনের মধ্যে শেষ হয়ে যায়।
তিনি আরো বলেন, অবশ্য আমার ঘোড়াগুলো এখন সুস্থ রয়েছে। তবে চেষ্টা করছি প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট দফতরে ঘুরে যদি আরো কিছু সহযোগিতা পাওয়ার। না হলে ঘোড়া বাঁচিয়ে রাখা কঠিন হবে।
ঘোড়ার শ্রমিক নেজাম উদ্দিন বলেন, আগের মতোই সকালে বের হই। কিন্তু কেউ নেই সৈকতে। তাই আয়ও নেই। মালিক অনেক চেষ্টা করেন। কিন্তু ঘোড়ার অনেক খাবার লাগে। টাকা না থাকায় খেয়ে না খেয়ে আছে ঘোড়া।
কক্সবাজার ঘোড়া মালিক সমিতির সভাপতি আহসান উদ্দিন নিশান বলেন, লকডাউনে ঘোড়া মালিকরা খুবই বেকায়দায় রয়েছেন। খাদ্যের অভাব ও নানা কারণে চলতি বছর ছয়টি ঘোড়া মারা গেছে।
কক্সবাজার জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত কর্মকতা ডা. অসিম বরণ সেন বলেন, খাদ্যের অভাবে ঘোড়া মারা যাওয়ার বিষয়টি সত্য নয়। এটি মিথ্যা। এক বছরে তিনটি ঘোড়া মারা গেছে। তাও বার্ধক্যজনিত ও নানা অসুস্থতার কারণে।
এডিসি (সার্বিক) আমিন আল পারভেজ বলেন, করোনার ভয়াবহতা থেকে রক্ষা পেতে সৈকত ও বিনোদন কেন্দ্রগুলো বন্ধ রাখা হয়েছে। এতে ঘোড়া মালিকদের আয় বন্ধ এবং ঘোড়াগুলো খাদ্য সংকটে পড়ে। এজন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ভুসি ও ছোলা বিতরণ করা হয়।