ফরিদপুর :
আজ জানবো ফরিদপুরের এক বাবা ও মেয়ের চোখে ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক অতুল সরকার কেমন। “কোন উপায় ছিল না। ভর্তির
সময়ও খুব নেই। কিছু ভালো মানুষের কথা মতো আবেদন করি জেলা প্রশাসকের কাছে আমি আমার মেয়েকে নিয়ে গিয়ে। বিষয়টি জেলা প্রশাসক স্যার জানার সাথে সাথে উদ্যোগ গ্রহন করেন। ওর সেই স্বপ্নপূরণে ডিসি
স্যার যে সহযোগিতা করলেন, তার ঋণ কোন দিন শোধ হওয়ার নয়। ভবিষ্যতে ডাক্তার
হয়ে আমার মেয়েও এই রকম সহযোগিতায় এগিয়ে আসবে বলে তিনি প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।”
“মেয়ে মীনা বলেন, আমার স্বপ্নপূরণে সহযাত্রী হয়েছে ফরিদপুর জেলা প্রশাসন। অতুল স্যার (জেলা
প্রশাসক) যেভাবে আমাকে দ্রুততার সাথে সহায়তা করলেন আমি কোনদিন কল্পনাও করিনি কেউ এভাবে
সাহায্য করবে। তিনি বলেন, আমি ভর্তির হওয়ার চিন্তায় দুদিন যাবত অসুস্থ হয়ে পড়েছিলাম।
আজ থেকে আমার চিন্তা দূর হলো। আমি চেষ্টা করবো ডাক্তার হয়ে নিজেকে পরিপূর্ণ ভাবে মানুষের
সেবায় নিয়োজিত করতে। আর আমার পথ প্রদর্শক হয়ে থাকবেন আজকের ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক
অতুল সরকার স্যার।”
কি বিষয় নিয়ে ঘটনা-
সুরাইয়া
আক্তার মীনা [ছদ্মনাম]। ফরিদপুর জেলা শহরের এককোনে ক্ষুদ্র একখন্ড পৈত্রিক নিবাসে বসবাস।
পরিবারের অসুস্থ মা আর বাবা রয়েছে। দুবোনের মাঝে সে সবার ছোট। বড় বোনের বিয়ে হয়েছে
কয়েক বছর। পিতা কর্মহীন গত ৯ মাস যাবত। এছাড়া পিতার বয়সও হয়েছে। কর্মহীন পিতার পরিবারে
অন্যকোন উপার্জনক্ষম ব্যক্তি না থাকায় আত্নীয় স্বজনের সহায়তা আর এর ওর কাছ থেকে চেয়ে
চিন্তে কোন রকমে সংসার চলছিল। এরই মাঝে বহুকষ্টে মীনা তার পড়ালেখা টিকিয়ে রেখেছিল।
অসুস্থ মায়ের সেবা করতে করতে মীনার মনে একসময় একটা স্বপ্ন জাগে বড় হয়ে ডাক্তার হবে।
পরিবারের অর্থনৈতিক দুরাবস্থার কথা চিন্তা করে, মনের ভেতরেই সে স্বপ্ন রেখে দেয় মীনা।
ছাত্রী
হিসেবে মীনা খুব মেধাবী। গত বছর কৃতিত্বের সাথে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় পাশ করে। পাশ
করার পরেই পড়ে আরো বিড়ম্বনায়। সংসারই যেখানে চলছে না, সেখানে মীনার পড়ালেখা দুঃসাধ্য।
এরই মাঝে আবার ভাল কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে বা প্রতিষ্ঠানে পড়ালেখা চরম অসম্ভব কল্পনা মাত্র।
তবুও
থেকে থাকেনি মীনা। ভাল প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হওয়ার জন্য বাড়িতে বসেই প্রস্তুতি নিতে থাকে।
বহুকষ্টে কিছু অর্থ সংস্থান করে মেডিকেল কলেজে ভর্তি পরীক্ষা দেয়। মনের সুপ্ত স্বপ্ন
আর অর্থনৈতিক টানাপোড়েন এরই মাঝে অসম্ভব সম্ভাবনার স্বপ্ন বাস্তব হিসেবে দেখা দেয় মেডিকেল
কলেজে ভর্তি পরীক্ষার ফলাফলে। মীনা চান্স পায় মেডিকেলে ডাক্তারী পরীক্ষার। কিন্তু বিধি
বাম ভর্তি এবং বইপুস্তক কেনার মত টাকা তার পরিবারের দেয়ার উপায় নাই।
কারো নিকট থেকে সাহায্য
নিয়ে ভর্তি হবে, এটাও সম্ভব নয়, কেননা সাহয্যের জন্য একই ব্যক্তিদের নিকট কতবার যাওয়া
যায়?
চরম দুচিন্তায় সময় যাচ্ছিল মীনার পরিবারের। এরই মাঝে জেলা প্রশাসকের নিকট আবেদন করতে
বলে এক পরিচিত ব্যক্তি। তার কথামত ৯ মে, ২০২১ খ্রিস্টাব্দ বাবাকে নিয়ে জেলা প্রশাসকের
বাংলোতে আসে মীনা। ভর্তি ও বই কেনার জন্য আবেদন করে। ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক অতুল সরকার
তার কথা শুনে তাৎক্ষনিক ভর্তি বই কেনা ও প্রাথমিক খরচের জন্য নগদ অর্থ সহায়তা করেন।
একই সাথে তার ভবিষ্যতে নিজ পায়ে দাড়াতে সর্বাত্বক সহায়তার আশ্বাস দেন।
No comments:
Post a Comment