বিশ্ব মা দিবসে তরুণীদের ভাবনা - সময় সংবাদ | Popular Bangla News Portal

Breaking

Post Top Ad

Responsive Ads Here

রবিবার, মে ০৯, ২০২১

বিশ্ব মা দিবসে তরুণীদের ভাবনা

 



মতামত//সময় সংবাদ ডটকমঃ

  বর্ণে শব্দে বাক্যে- 'মা'

১ম,

মাত্র একটি বর্ণ আর একটি স্বরে তৈরি শব্দটির নাম- 'মা'। শব্দটি খুব ছোট হলেও এর গভীরতা অপরিমেয়। 'মা' ডাকটা শুনলেই আমাদের দৃষ্টিপটে ভেসে ওঠে মায়া, মমতা, আদর, স্নেহ ও ভালোবাসায় ঘেরা এক প্রতিমার চিত্র; যার সংস্পর্শে এলে আমাদের সকল দুঃখ কষ্ট সব শূন্যে মিলিয়ে যায়। একজন সন্তানের জীবনে মা-বাবার অবদান কতটা তা কোনো কলমই বর্ণনা করে শেষ করতে পারবে না। কারণ সাগরের গভীরতা ছোঁয়া যায় তবে বাবা মায়ের ভালোবাসার গভীরতা ছোঁয়া যায় না।
"সব থেকে ভালোবেসেও যাকে একবারও মুখ ফুটে ভালোবাসি বলা হয় না,
সারাদিনের ক্লান্তি শেষে যার আঁচলের ছায়া ছাড়া শান্তি পাওয়া যায় না,
শত অবহেলা পেলেও যে হাত দুটি মোনাজাতে আমাদের নাম নিতে কখনও ভুলে না,
হাজার ভুল করলেও যার কাছে ক্ষমা চেয়ে খালি হাতে ফিরতে হয় না তিনিই মমতাময়ী মা।"

২য়,

প্রতিবার একটি বিশেষ দিন হিসেবে 'মা' দিবস আসে। কিন্তু গত বছরের ন্যায় এবারও কান্নার রোদন নিয়ে এসেছে,
মায়েদের বুকে শুধু সন্তানহারানোর আহাজারি,
কতশত মায়ের চোখ ভিজিয়ে যাচ্ছে মহামারি।
কীভাবে উদযাপিত হবে সন্তানহারা মায়ের মা হওয়ার দিবসটি? কেমন আছে সে মায়েরা যাদের বুকে এখন শুধুই স্মৃতি পোড়া গন্ধ?
বিনীত সুরে আবেদন জানাই বিধাতার তরে, মায়েদের এ কান্নার চির অবসরনামা লিখে দাও হে দয়াময়। পৃথিবীর অসুখটা সারিয়ে আবার প্রকৃতির স্বাভাবিকতা ফিরিয়ে দাও।

৩য়,

নবজাতকের আগমনে আমরা আনন্দ উৎসবে মেতে উঠি। কিন্তু আমরা অনেকেই ভুলে যাই এটি শুধু নবজাতকের জন্মতিথির আগমনী উৎসব নয় এটি একজন মায়ের মা হওয়ার দিবস। জন্মের পর একটি শিশু কেবলই একটা প্রাণশক্তিপূর্ণ মাংসপিণ্ড রূপে থাকে। একজন মা সেই শিশুটিকে কথা বলতে শেখায় এবং সমাজের আদব কায়দা শিখিয়ে মানুষের আকৃতিতে নিয়ে আসেন। মা হলো সেই পরশপাথর যার সঠিক স্পর্শে তার সন্তান প্রকৃত মানুষ হয়ে ওঠে। জীবনের প্রথম শিক্ষক এবং কারিগর হিসেবে আল্লাহ্ প্রতিটি শিশুকে মা দিয়ে থাকেন। কিন্তু যারা আল্লাহ্ প্রদত্ত এই নেয়ামত থেকে বঞ্চিত হন একমাত্র তারাই বুঝেন মা না থাকার যন্ত্রণা। তবে আমি সেদিক থেকে অতটা অভাগী নই। জন্মের পর থেকেই দয়াময়ের অশেষ রহমতে আমি আমার জীবনে সেই মহামূল্যবান নেয়ামতটি পেয়েছি।

৪র্থ,

আমার মা ভীষণ আদরে আমায় মানুষ করেছেন; কখনও আমার কষ্ট হয় তেমন কিছু ধারেকাছে ঘেষতে দেয়নি কোনদিন। বাসার কাজে মাকে সাহায্য করতে গেলে তাতেও তার ভীষণ আপত্তি; কারণ একটাই আমায় কাজ করতে দেখতে তার একদমই ভালো লাগে না। কথাটি যখন শুনি তখন গভীরভাবে উপলব্ধি করি নাড়ির টান কি জিনিস! মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে দেখি তার চোয়ালের ভাজে ভাজে লুকিয়ে থাকা ঘামগুলোর দিকে। তখন মুখে আমি বিশেষ কিছু বলতে পারি না তবে মনে মনে ভাবি এত অবুঝ হয়ে কি করে থাকি?
কেন শত পাগলামিতে ব্যস্ত করি তাকে,
পরক্ষণেই ভাবতে থাকি মা সে আমার তাকে ছাড়া আর জ্বালাবো কাকে? মন খারাপ হলেই মার কোলে লুটিয়ে পড়ি, তেলের বোতল হাতে এগিয়ে যাই তার কাছে। একটা/দুইটা করে চুলের ভাজে ভাজে মন খারাপগুলো মিলিয়ে যায় অনায়াসে।

৫ম,

স্মৃতির পাতায় আজও কিছু স্মৃতিকথা অমলিন। ছোটবেলায় রাস্তা দিয়ে যখন আইসক্রিমের গাড়ি ঘণ্টা বাজিয়ে ছুট লাগাতো মায়ের কাছে আবদার করতাম ২টাকার। হ্যাঁ তখন ২ টাকায় বেশ মজার আইসক্রিম পাওয়া যেত। মা তখন লাগিয়ে দিত কাজে, বলতো কাজ সেরে আয় ওসব খাবার বাজে। মায়ের এসব কথায় হাল ছাড়া যাবে না, আইসক্রিম তো খেতেই হবে। তখন মায়ের পদসেবা থেকে শুরু করে একদম বাধ্য মেয়ে হয়ে সব কথা শুনতাম টাকা না পাওয়া অবধি।
এখন বড় হয়েছি শূন্য তলিয়ে গেছে শৈশব, আজ আর মায়ের কাছে কিছু আবদার করি না। ছোটখাটো ইচ্ছেগুলো এখন ডালপালা মেলে অনেক উঁচুয়। কখনও কখনও অনিচ্ছাকৃত কষ্ট দিয়ে ফেলি মাকে। রেগে যাই কিছুতেই সামলাতে পারি না নিজেকে; তবে কিছু সময় পেরিয়ে যাবার পর আবার ঐ মানুষটার দিকে তাকিয়েই শান্ত হয়ে যাই। তবে কাছে গিয়ে সরি বলতে পারি না, কারণ অতটা আধুনিক হতে পারিনি আজও। কিন্ত মায়ের চারপাশে ঘুরঘুর করতে থাকি যদি মা ডেকে বলে - 'কি করছিস ঐ জিনিসটা এনে দে তো।' 

৬ষ্ঠ,

যদি আমায় বলা হতো একটি সময়ের কথা বল যা চিরন্তন এবং সবচেয়ে মূল্যবান তবে আমি বলতাম- "একজন মায়ের সাথে তার সন্তানের কাটানো প্রতিটি মুহূর্ত অমূল্য ও শাশ্বত।" মা ডাকের মতো এত মিষ্টি শব্দ অবিধানে আর একটিও খুঁজে পাওয়া যাবে না। সন্তানের অসময়ে সবার আগে যার কলিজা কেঁপে ওঠে তিনিই মা। বাবা মায়ের ঋণ কোনদিনই কোনো সন্তান শোধ করতে পারবে না। সন্তানের প্রতি তাদের আবেগ অনন্তকালীন। সকল দেশের সকল মায়ের সম্মান প্রতিটি ধর্মগ্রন্থ দিয়েছে। ইসলাম ধর্মে মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের জান্নাত নির্ধারণ করা হয়েছে। মায়ের মর্যাদা সর্বকালে সবার ঊর্ধ্বে। চাওয়া পাওয়ার এই পৃথিবীতে একমাত্র মায়ের ভালোবাসায় কোনো কলুষতা নেই। জীবন থেকে অনেকগুলো বছর চলে গেছে কখনও মাকে ভালোবাসার জন্য নির্দিষ্ট একটি দিনকে বেছে নিইনি আজও নেব না। ভালোবাসায় ভালো থাকুক মাতৃকুল; নিরাপদে থাকুক তাদের সন্তানেরা।


কলমেঃ মনিরা সুলতানা
প্রাক্তন শিক্ষার্থীঃ চরভদ্রাসন সরকারি কলেজ, চরভদ্রাসন, ফরিদপুর। 






Post Top Ad

Responsive Ads Here