সময় সংবাদ ডেস্কঃ
দেশের একমাত্র প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিন ঘূর্ণিঝড় ‘যশ’র প্রভাবে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ২৬ মে ঘূর্ণিঝড়ের সামান্য আঘাতে দ্বীপটির ১২টি স্থানে ১০০-২০০ ফুট অংশ ভেঙে সাগরে তলিয়ে গেছে। এছাড়া জোয়ারের পানিতে ডুবে আছে চারটি গ্রামের দুইশ ঘর। এরই মধ্যে দ্বীপে দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানির সংকট।
আন্তর্জাতিক ওশান সায়েন্স জার্নালে প্রকাশিত এক নিবন্ধে বলা হয়েছে- ২০৪৫ সালের মধ্যে দ্বীপটি পুরোপুরি প্রবালশূন্য হতে পারে। দ্বীপে প্রবাল ছাড়াও রয়েছে বিলুপ্তপ্রায় জলপাই রঙের কাছিম, চার প্রজাতির ডলফিন, বিপন্ন প্রজাতির পাখিসহ নানা ধরনের প্রাণীর বাস।
পরিবেশবাদী সংগঠন ও নাগরিক সমাজ বলছে, দ্বীপে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা দেড় শতাধিক হোটেল-মোটেল সরিয়ে নেয়ার জন্য উচ্চ আদালতের নির্দেশনা থাকলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। সর্বশেষ চলতি বছরে ২ জানুয়ারি পরিবেশ অধিদফতর সেন্টমার্টিন দ্বীপের প্রতিবেশ সুরক্ষায় একটি গণবিজ্ঞপ্তি জারি করে। সেই বিজ্ঞপ্তিতে অবশ্য পালনীয় ১৪ রকমের নির্দেশনা থাকলেও তার কিছুই মানা হচ্ছে না।
কক্সবাজারের পরিবেশবিষয়ক সংস্থা ইয়ুথ এনভায়রনমেন্ট সোসাইটির (ইয়েস) প্রধান নির্বাহী এম ইব্রাহিম খলিল মামুন বলেন, সেন্টমার্টিন মূলত পানির ওপর ভাসমান একটি দ্বীপ। দ্বীপটির নির্দিষ্ট একটা ধারণক্ষমতা আছে। কয়েক বছর ধরে বহুতল ভবনসহ অপরিকল্পিত স্থাপনা নির্মাণ এবং অনিয়ন্ত্রিত পর্যটক যাতায়াতের কারণে দ্বীপটি এখন অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। ঘূর্ণিঝড় ‘যশ’র প্রভাবে দ্বীপে ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে যেকোনো সময় এটি সাগরে তলিয়ে যাবে।
জানা গেছে, সেন্টমার্টিনে প্রায় ১০ হাজার মানুষের বাস। ২৬ মে ঘূর্ণিঝড় ‘যশ’র প্রভাবে যেভাবে ভাঙন ধরেছে, তাতে প্রবালদ্বীপ অনেক ছোট হয়ে আসছে। এখন সাগরে জোয়ারের সামান্য উচ্চতা বাড়লে তলিয়ে যাচ্ছে দ্বীপের চারদিক। এতে সাগরের বুকে হারিয়ে যাচ্ছে কেয়া বাগান, নারিকেল বাগান, নিশিন্দা বাগানসহ বিচিত্র সব বৃক্ষ ও প্রাণী।
সেন্টমার্টিন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নূর আহমদ বলেন, প্রবালদ্বীপ রক্ষায় কেউ এগিয়ে আসছে না। ঘূর্ণিঝড় ‘যশ’র প্রভাবে দ্বীপে যেভাবে ভাঙন ধরেছে, গত পঞ্চাশ বছরেও এমনটা দেখা যায়নি। প্রভাবশালী মহল দ্বীপে নতুন নতুন ভবন নির্মাণ অব্যাহত রাখলেও এদিকে প্রশাসনের কোনো নজর নেই।
তিনি আরো বলেন, ‘যশ’র প্রভাবে দ্বীপের একমাত্র জেটি ভেঙে অকেজো হয়ে আছে। সেটি সংস্কারের কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। এছাড়া সামনে বর্ষা মৌসুমে দ্বীপকে কীভাবে রক্ষা করা যাবে, সেটিও চিন্তা করা দরকার।
টেকনাফের ইউএনও পারভেজ চৌধুরী বলেন, সেন্টমার্টিনে কোনোভাবেই নতুন করে ভবন নির্মাণ করতে দেয়া হবে না। এরই মধ্য নির্মাণাধীন ভবনের কাজ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। সাম্প্রতিক ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে দ্বীপের চারদিকে ব্যাপক ভাঙন ধরেছে। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে একটি প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। দ্বীপ রক্ষায় এখন থেকে পরিবেশ অধিদফতর এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ আমরা যৌথভাবে কাজ করব।
No comments:
Post a Comment