করোনায় কেমন আছে ফরিদপুরের শিক্ষার্থীরা - সময় সংবাদ | Popular Bangla News Portal

শিরোনাম

Monday, June 14, 2021

করোনায় কেমন আছে ফরিদপুরের শিক্ষার্থীরা

 



ফিচার//সময় সংবাদ ডটকমঃ


করোনা আতঙ্কের পাশাপাশি শিক্ষার্থীরাও আতঙ্কিত হয়ে পড়ছেঃ


বর্তমান সময়ের সবচেয়ে বড় আতঙ্কের নাম করোনা মহামারি। রোজ কারো না কারো প্রিয়জন না ফেরার দেশে পাড়ি জমাচ্ছে করোনার ছোবলে। অন্যান্য সকল ক্ষেত্রে করোনার প্রকোপ এড়িয়ে কার্যক্রম পরিচালনা বহাল থাকলেও নেতিয়ে পড়েছে জাতির মেরুদণ্ড- 'শিক্ষা ব্যবস্থা'।

নেপোলিয়ন বোনাপার্ট এর ভাষ্যমতে, একজন শিক্ষিত মা যদি একটি শিক্ষিত জাতি উপহার দিতে পারে, তবে সেই মায়েরাই আজ ঝরে পড়ছে শিক্ষা জীবন থেকে। করোনায় বিদ্যাপীঠ বন্ধ থাকার ফলে শুধু ফরিদপুর এর শিক্ষার্থীদের জীবনের স্বাভাবিকতাই নষ্ট হচ্ছে না, গোটা দেশের আনাচে-কানাচে শত শত শিক্ষার্থী হাতের বই-খাতা ফেলে, কেউ মোবাইল ফোনে আসক্ত হচ্ছে আবার কেউ জীবিকার তাগিদে কর্মক্ষেত্রে যোগ দিচ্ছে।

যে মেয়েটি নিজেকে স্বাবলম্বী করার স্বপ্নে কলম হাতে তুলে নিয়েছিল, সে আজ সেই কলম দিয়েই বিয়ের রেজিস্ট্রি খাতায় সিগনেচার করছে।
যে জীবন রক্ষা করার জন্য এত আয়োজন,
সে জীবনের স্বাভাবিকতা ফেরাতে
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া প্রয়োজন।

মনিরা সুলতানা, পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক, একতাবদ্ধ সংগঠন। 





এখন সবার মনে একটাই প্রশ্ন কবে খুলবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানঃ


করোনা মহামারীতে ধ্বস নেমেছে শিক্ষাখাতে। দীর্ঘ দিন যাবৎ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় ফরিদপুর জেলার প্রায় শিক্ষার্থীই ঝুঁকে যাচ্ছে পড়াশোনা ব্যতিরেকে অন্যত্র। কেউ ঝুঁকে যাচ্ছে অনলাইন ভিত্তিক গেইমসে, কেউ ঝুঁকে যাচ্ছে মাদকের দিকে আবার কেউ কেউ পরিবারের বোঝা হয়ে যাওয়ায় কর্মসংস্থানের সন্ধানে ছুটে চলছে। সর্বপরি মেরুণ্ডহীন হয়ে গিয়েছে শিক্ষাখাত।

নামমাত্র অনলাইন ক্লাস আর এসাইনমেন্টের প্রচলন শিক্ষার্থীদের মাঝে ভালো প্রভাব ফেলছেনা। আবার অনেকের বাড়ি গ্রাম-মফস্বলে হওয়ায় অনেকেই নেটওয়ার্ক আওতার বাইরে।
ফলে তারা ছন্দহীন হয়ে পড়ছে। যার ফলে শিক্ষার্থীদের মাঝে দেখা যাচ্ছে হতাশা৷ তারা আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে শিক্ষা গ্রহণের। জ্ঞানপিপাসুর সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে ক্রমশই। অথচ এই শিক্ষা একটি সমাজকে আলোকিত করে একটি দেশকে পরিবর্তন করতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে কিন্তু মহামারীতে সব খাতের ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করা হলেও শিক্ষাখাত নিয়ে এখনো তেমন কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে দেখা যাচ্ছে না। যার ফলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বেড়েই চলছে আতঙ্ক, হতাশা, ভবিষ্যত নিয়ে অনিশ্চয়তা।

এখন সবার মনে একটাই প্রশ্ন কবে খুলবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান?কবে মেলবে এ অভিশাপ থেকে মুক্তি? কবে সুস্থ হবে এই পৃথিবী? এ প্রশ্নের জবাব নিয়ে উদ্বিগ্ন আজ শিক্ষার্থীরা।

সিফাত মাহমুদ সিহাব, শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়



বারবার পরীক্ষার তারিখ পরিবর্তন হওয়ায় শিক্ষার্থীদের মনোবল হারিয়ে যাচ্ছেঃ


গত বছরের মার্চ মাসের শুরুর দিকে বাংলাদেশে কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত রোগী  শনাক্তের  পরপরই ১৭ই মার্চ থেকে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হয়। ধাপে ধাপে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছুটি বাড়ানো হয়। সশরীরে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে  না এনে বিকল্প ব্যবস্থা কতৃপক্ষ নেয়।


অনলাইন ক্লাস, অনলাইন পরীক্ষা, অ্যাসাইনমেন্ট প্রভৃতির মাধ্যমে শিক্ষার্থীদেরকে শিক্ষার আওতাধীন  রাখার প্রচেষ্টা কতৃপক্ষ  চালাচ্ছে। কিন্তু ফরিদপুর সহ বিভিন্ন জেলার বিশেষ করে গ্রামের শিক্ষার্থীরা এই বিকল্প ব্যবস্থা সঠিকভাবে গ্রহণ   করতে পারছে না। দুর্বল নেটওয়ার্ক ব্যবস্থা,ডিভাইসের সংকট প্রভৃতি সমস্যার কারণে ফরিদপুরের বিভিন্ন শ্রেণির শিক্ষার্থীরা অনলাইন ক্লাসগুলোর সাথে যুক্ত হতে পারছেনা। ডিজিটাল ডিভাইস সম্পর্কে অনেক শিক্ষার্থীরই যথাপোযুক্ত ধারণা নেই। আবার কিছু

 

কিছু ছেলেমেয়ে অনলাইনে পড়াশোনার নামে বিভিন্ন ধরনের গেমস যেমন-ফ্রী ফায়ারস,পবজি ইত্যাদিতে আসক্ত হয়ে পড়ছে।

 

ফরিদপুরের বিভিন্ন গ্রাম থেকে যেসকল শিক্ষার্থী পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করত তারাও আজ ১৫ মাস যাবত ঘরে বসে হীনমন্যতায় ভুগছে।

২০২০ সালের এইচ এস সি পরীক্ষার্থীরা অটো পাসের মাধ্যমে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায় অতিক্রম করলেও উচ্চ শিক্ষার জন্য বিভিন্ন পাবলিক     
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার জন্য যথাযথ প্রস্তুতি নিতে পারছে না।প্রতিকূল পরিস্থিতির জন্য বিভাগীয় পর্যায়ের বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি কোচিং এর সাহায্য নিতে পারছেনা। বারবার পরীক্ষার তারিখ পরিবর্তন হওয়ায় শিক্ষার্থীদের মনোবল হারিয়ে ফেলছে।

সর্বোপরি বলা যাচ্ছে ফরিদপুরসহ বিভিন্ন জেলার বিভিন্ন গ্রামের বিভিন্ন শ্রেণির শিক্ষার্থীর এই করোনাকালীন পরিস্থিতির জন্য পড়াশোনার যে অবনতি হয়েছে তা স্বাভাবিক পর্যায়ে নিয়ে  আসা খুবই কষ্টসাধ্য হবে।

পপি আক্তার, শিক্ষার্থী ,  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় 



অনেক শিক্ষার্থীরা ফ্রী ফায়ার এবং পাবজি গেমসে আসক্তি হয়ে পড়ছেঃ

করোনা মহামারীতে সবারই খুব খারাপ দিন কাটতেছে। তন্মধ্যে শিক্ষার্থীদের যেন একটু বেশি ই।অন্য সব জায়গার মতো ফরিদপুরের শিক্ষার্থীদের ও খুবই খারাপ দিন কাটতেছে। পড়াশোনা তো হচ্ছেই না বরং সব ভুলে যাচ্ছে।

সেদিন ফরিদপুরের কিছু ছোট শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বললাম, বিদ্যালয়ের নাম জিজ্ঞেস করায় আর বলতে পারল না। ভুলে গেছে বিদ্যালয়ের নাম।
অনলাইনে ক্লাস করার জন্য সবাই খুব কষ্ট হলেও মোবাইল ফোন কিনছে, ফোনে মেগাবাইট কিনে অনলাইনে ক্লাস করার জন্য কিন্তু তারা কি আদৌ ক্লাস করছে? মেগাবাইট ব্যবহার করে তারা আসক্ত হচ্ছে পাবজি,ফ্রি-ফায়ার সহ আরও বিভিন্ন গেমস এ

এটা নাকি তাদের নেশার মতো,খেলতেই হবে।ছোট বাচ্চা থেকে শুরু করে বড় মানুষ ও খেলছে।খেলবে নাই বা কেন,তাদের তো সময় কাটে না, পড়ালেখার চাপ নেই।করোনার জন্য শিক্ষার্থীদের যা ক্ষতি হচ্ছে তা কোনোভাবেই পোষানো সম্ভব নয়।

অনলাইনে ক্লাস হলেও একটা সমীকরণে এসেছে মাত্র ৩৩% শিক্ষার্থীরা অনলাইনে যুক্ত হতে পারে,আর শিক্ষার্থীরা পারছে না।তাহলে আর যেসকল শিক্ষার্থীরা আছে তারা কি করবে অনলাইনে পরীক্ষা হলে ৩৩% বাদে আর কেউ পরীক্ষা দিতে পারবে না।অতএব,ফরিদপুরের শিক্ষার্থীদের করনা মহামারীর এই দিনগুলে খুবই খারাপ যাচ্ছে।এতে দেশের নবীনযাত্রীদের পথ অন্ধকারের পথে।

মিথিলা খানম মিম, শিক্ষার্থী, চরভদ্রাসন সরকারি কলেজ

 


করোনায় অস্থির স্থিরতাঃ

জীবনের রাস্তায় যখন পাগলা ঘোড়ার মতো দৌড়াচ্ছিলাম তখন করোনা এসে হুট করে টুঁটি চেপে ধরে থামিয়ে দেয়। প্রথমে খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম এই আকস্মিকতায়। ধীরে ধীরে মানিয়ে নিয়েছি অনেকটাই।


করোনার বদৌলতে আমি প্রচুর সময় পেয়েছি।যে সময়টা আমার নিজেকে নতুন করে গুছিয়ে নিতে সাহায্য করেছে।
স্থির থেকে ব্যক্তিগত জীবন, পরিবারিক জীবন,বৈশ্বিক জীবনকে নতুন দর্শনে দেখার সুযোগ করে দিয়েছে। কিন্তু এই সুদীর্ঘ স্থিরতা এখন মানসিক অস্থিরতার সৃষ্টি করছে।চারিদিকে মৃত্যুর মিছিল,মানুষের হাহাকার দেখে কোন সুস্থ মানুষের পক্ষেই ভালো থাকা সম্ভব নয়।
রাত হলে জীবনের সব লেনদেন শেষ করে
ঘরে ফিরে আসে সব প্রাণী।আবার সকাল হলে বেরিয়ে পড়ে পৃথিবীর কাজে;এটাই স্বাভাবিক জীবন,এটাই জীবনের সৌন্দর্য।

কিন্তু আমরা আটকে আছি সুদীর্ঘ মহামারী রাতে।আমাদের এখন একটাই প্রতিক্ষা-কখন সেই সুন্দর সকাল আসবে,যেদিন আমরা ফিরতে পারবো আমাদের স্বাভাবিক জীবন যাপনে।

আব্দুল্লাহ আল শাহিদ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ইংরেজি সাহিত্য বিভাগ



যেই হাতে ছাত্রীর থাকার কথা কলম, সেই হাতে আজ সংসারের দায়বদ্ধতার দায়িত্ব, রান্নার সরঞ্জামঃ


শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড । শিক্ষা ছাড়া কোন জাতি উন্নতি লাভ করতে পারেনা। শিক্ষার আলোয় আলোকিত ব্যক্তি এবং জাতি উন্নতি ও অগ্রগতির শিখরে আরোহন করে। এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে নেতৃত্ব দেয়। কিন্তু শিক্ষা তখনই যোগ্যতাসম্পন্ন মানুষ গড়তে সমর্থ হয় যখন সেই শিক্ষা ব্যবস্থা হবে যথোপযুক্ত মানসম্পন্ন।

কেবল মানসম্পন্ন আধুনিক যুগোপযোগী শিক্ষাই পারে একজন সুনাগরিক জনশক্তিতে তৈরি করতে। আর এজন্যই শিক্ষা ব্যবস্থার মানোন্নয়ন খুবই গুরুত্বপূর্ণ অংশ। অথচ

 

আজ শিক্ষা ব্যবস্থায় গুরুত্বহীন বিষয়ে পরিণত হয়েছে। যেখানে সবচাইতে বেশি গুরুত্ব দেওয়ার কথা ছিলো


আজ প্রায় দীর্ঘ দেড় বছর যাবৎ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে করোনার জন্য। যার বিরূপ  প্রভাব পড়েছে আজ শিক্ষার্থীদের ওপর,সমাজ ব্যবস্থাপনার ওপর,দেশের ওপর। শিক্ষা ব্যবস্থা হুমড়ি খেয়ে পড়েছে। ছাত্র সমাজ আজ হুমকির মুখে।  ছাত্র সমাজ শিরদাঁড়াহীনে পরিনত হচ্ছে। নেই কোন স্কুল, কলেজ,বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা ভবিষ্যৎ অন্ধকারাচ্ছন্ন ছাত্রদের। তাদের জীবন হয়েছে স্থবির, অভিভাবক ও ছাত্ররা হতাশায় ও অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তাগ্রস্ত। 

যেখানে যানবাহন চলাচল, হাট-বাজার, পার্ক-রিসোর্ট,চিড়িয়াখানা সবই পূর্বের ন্যায় চলছে। 

শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কবে খুলবে তা নিয়ে এখনো কোন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়নি সরকার। 

এমন পরিস্থিতিতে ছাত্রদের মানসিক বিকাশেও প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে। দেশে বেকারত্বের হার দিন দিন বাড়ছে।ছাত্ররা হয়েছে ভবঘুরে, জড়িয়ে পড়ছে বিভিন্ন অনৈতিক কাজের সাথে। যেই হাতে ছাত্রীর থাকার কথা কলম, সেই হাতে আজ সংসারের দায়বদ্ধতার দায়িত্ব, রান্নার সরঞ্জাম। হতাশায় নিমজ্জিত ছাত্ররা।


যদিও কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অনলাইন ভিত্তিক ক্লাস এবং পরিক্ষার ব্যবস্থা করেছেন। কিন্তু আমাদের দেশের প্রান্তিক পর্যায়ের সবার পক্ষে ইন্টারনেটভিত্তিক মাধ্যমের সহজলভ্যতা নেই।নেই স্মার্টফোন, কম্পিউটার অপরদিকে অনেকে অনলাইন ভিত্তিক হওয়াই এটিতে অন্যান্য  ব্যবহারের ক্ষেত্রে  আসক্ত হয়ে পড়ছে। যা অারো ছাত্র সমাজের ধ্বংসের কারণে পরিনত হচ্ছে। 


অবিলম্বে এই শিক্ষা ব্যবস্থার মানোন্নয়নের জন্য কার্যকরী ব্যবস্থা নেওয়া অতীব জরুরি। 

মাহিয়া সুলতানা আরজু(মুক্তা),শিক্ষার্থী, সরকারি রাজেন্দ্র কলেজ। 


No comments: