শিশুদের উপর করোনা ভাইরাসের প্রভাব - সময় সংবাদ | Popular Bangla News Portal

Breaking

Post Top Ad

Responsive Ads Here

শুক্রবার, ডিসেম্বর ৩১, ২০২১

শিশুদের উপর করোনা ভাইরাসের প্রভাব

শিশুদের উপর করোনা ভাইরাসের প্রভাব





নিজস্ব প্রতিবেদক: 

করোনাভাইরাস শিশুদের উপর কম প্রভাব ফেললেও এর থেকে রেহাই পাচ্ছে না কোনো শিশু।হয়ত বলা যেতে পারে শিশুরা আক্রান্ত না হলে রেহাই পাচ্ছে না মানে? আচ্ছা বুঝিয়ে বলছি - শিশুরা করোনাভাইরাসে অপেক্ষাকৃত অনেক কম আক্রান্ত হলেও বলা হচ্ছে শিশুরা করোনাভাইরাসের নীরব শিকার।কারন ১৯ সালের মার্চ মাস থেকে শিশু সহ বৃদ্ধ, মধ্যবয়স্ক সবাই ঘরে বন্ধি।ঘরে বসে থেকে শিশু একাকীত্বে ভুগছে। শিশুর বুদ্ধির বিকাশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।"দীর্ঘদিনের আবদ্ধ অবস্থা শিশুর সকল ধরনের বিকাশ বাধাগ্রস্ত করছে।একটা শিশু যখন হাটতে, কথা বলতে,দৌড়াতে, খেলতে শিখে এর মদ্ধে দিয়েই শিশুর বিকাশ ঘটানোর একটা অংশ।। শিশুর সকল ধরনের বিকাশ, বুদ্ধির বিকাশ এই পরিস্থিতিতে মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।একটা শিশু যখন অন্য সব শিশুর সাথে সময় কাটাতে পারে খেলাদুলা করতে পারে এর মাদ্ধমে তাদের মানসিক অবস্থা ভালো থাকে।কিন্তু এই পরিস্থিতিতে শিশুকে একাই ঘরে বদ্ধ থাকতে হয়।করোনাভাইরাস  শুরু হওয়ার পর থেকে শিশুরা এমনিতেই মানসিক চাপে ভুগছে। স্কুল নেই, বন্ধুদের সাথে দেখা নেই, খেলা নেই, ঘরের চার দেয়াল ছাড়া কোথাও বেড়াতে যাওয়ার উপায় নেই।এমন পরিস্থিতি একদিকে যেমন তাদের সঠিক মানসিক বিকাশে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারে অন্যদিকে নিয়মতান্ত্রিক জীবনে অনভ্যস্ত হওয়ার প্রবণতা তৈরি হতে পারে শিশুদের মধ্যে।এদিকে শিশুরা আবার পুষ্টি হীনতায় ভুগছে কারন বাবা-মায়ের কাজ বন্ধ সবাইকে ঘরে থাকতে হয়।যার ফলে পরিবার আর্থিক সমস্যার মদ্ধে দিয়ে যাচ্ছে।বাচ্চাদের জন্য পুষ্টিকর খাবার কেনার সামর্থ্য হারিয়ে ফেলছে।শিশুরা তো বুঝতে পারে না করোনা কি, এটা হলে কি হয়, না বুঝেও তাদের ঘরে বদ্ধ থাকতে হয়। স্কুলে যেতে দেওয়া হয় না, মাঝেমধ্যে তারা বাহিরে যাওয়ার জন্য জেদ করে,ঘুরতে যাওয়ার জেদ করে, হয়ত অনেকবেশি জেদ করে কান্নাকাটি করে তাও তাদের বদ্ধ থাকতে হয় যার ফলে তাদের বিষন্নতায় ভুগতে হয়। এর মধ্যে অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানই অনলাইনে ক্লাস পরিচালনা করছে। চিকিৎসা মনোবিজ্ঞানীরা আশঙ্কা প্রকাশ করে বলছেন, অনলাইন ক্লাসের কারণে শিশুদের মোবাইল এবং ইন্টানেটের প্রতি আসক্তি বাড়তে পারে।আবার দেখা যাচ্ছে এই বদ্ধ থাকা অবস্থায় শিশুরা অনলাইনে বেশি আসক্ত হয়ে যাচ্ছে।কারো সাথে তেমন কথা বলে না, তেমন কিছু খায় না,শুধু গেম খেলে,যার ফলে শিশুদের মানসিক সমস্যা,চোখে সমস্যা,এবং পড়াশুনার উপর অমনোযোগী হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।অনেক সময় বাবা-মায়ের মানসিক চাপের কারনে শিশুদের শারিরীক ও মানসিক অত্যাচারের পরিমাণ বেড়ে যায়।এতে শুরুরা না বুঝে মা-বাবাকে ভুল বুঝতে পারে। তাদের সম্পর্কে ব্যঘাত ঘটতে পারে।এবং অনেক সময় দেখা যায় বাবা-মায়ের উপর অভিমান করে সুইসাইডের শিকার অনেক শিশু।দরিদ্র পরিবারের শিশুরা নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সংস্পর্শে আসতে পারে। সবমিলিয়ে ক্ষুধা, অপুষ্টি, শিশু শ্রমের সাথে সাথে শিশুদের মনে নিশ্চিতভাবেই দীর্ঘমেয়াদি একটা ট্রমা রেখে যাবে করোনাভাইরাস সৃষ্ট মহামারি।


এই অবস্থা চলতে থাকলে শিক্ষার্থীদের সামনের দিনগুলো কেমন হতে পারে? জানতে চাইলে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ডা. তাজুল ইসলাম বলেন, ‘‘প্রত্যেকটি মানুষের শরীরে যেমন পুষ্টি দরকার, তেমনি মস্তিষ্কেরও পুষ্টি দরকার হয়৷ মস্তিষ্কের পুষ্টি হলো ভালো চিন্তা৷ সারা দিন ফেসবুক-ইউটিউবে থাকলে মস্তিষ্কের সৃজনশীলতা নষ্ট হয়ে যায়৷ চিন্তায় পরিবর্তন আসে৷ ভালো চিন্তা বাদ দিয়ে খারাপ চিন্তাগুলো মস্তিষ্কে ভর করে৷ আচরণ পালটে যায়, মানুষের সঙ্গে ব্যবহারও খারাপ হতে থাকে৷ ফলে এখনই শিক্ষক ও অভিভাবকদের বিশেষ নজর দিতে হবে তরুণ শিক্ষার্থীদের দিকে৷’’


বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দীর্ঘক্ষণ ইলেক্ট্রোনিক ডিভাইস ব্যবহার করলে নানা ধরনের স্বাস্থ্য ঝুঁকি দেখা দেয়৷ বিশেষ করে শিশুদের ওপর এর প্রভাব অত্যন্ত বেশি৷ শিশুরা মোবাইল হ্যান্ডসেট অনেকক্ষণ ব্যবহার করলে তাদের স্মৃতি ও দৃষ্টিশক্তি লোপ পায়৷ শরীরে টিউমার হতে পারে৷ রেডিয়েশনের প্রভাবে একটা শিশুর মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্থ হয়ে থাকে৷


তবে ঢাকা শিশু হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. সৈয়দ শফি আহমেদ মনে করেন শারীরিক ক্ষতির চেয়েও শিশুদের মানসিক ক্ষতিটা বেশি হচ্ছে৷ তিনি বলেন, ‘‘এই এক বছরে শিশুদের মারাত্মক কিছু ক্ষতি হয়েছে৷ এর মধ্যে মানসিক ক্ষতিটা অনেক বেশি৷


এইসব বিষয়ে অভিভাবকদের সতর্ক থাকার কথা বলছেন বাংলাদেশ শিশু চিকিৎসক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মনজুর হোসেনও৷ তিনি বলেন, ‘‘এখনকার তরুণরা বেশ সেনসেটিভ৷ তাদের খুব একটা বিরক্ত না করাই ভালো৷ আবার তাদের লেখাপড়ার মধ্যেও রাখতে হবে৷ টিভি দেখা বা ঘরের মধ্যে অন্য ধরনের খেলাধুলার (লুডু, দাবা, ক্যারাম) ব্যবস্থা করতে হবে৷ বাবা-মা সন্তান মিলে খেলতে হবে৷ এখন আপনি যদি নিজেই সারা দিন মোবাইল নিয়ে পড়ে থাকেন, তাহলে তো আপনার সন্তানও তাই করবে! সন্তানকে সময় দেওয়ার এটা কিন্তু একটা ভালো সুযোগ৷ পাশাপাশি যে ধর্মের মানুষ আপনি, সেখানে সন্তানকে নিয়ে ধর্ম পালন করতে পারেন৷ মোট কথা স্কুল বন্ধ থাকলেও নির্দিষ্ট সময়ে ঘুম থেকে উঠাসহ তাদের একটা রুটিনের মধ্যে নিয়ে আনতে হবে৷’’


সব মিলিয়ে আমরা দেখতে পাচ্ছি শিশুরা অনেক বেশিই করোনাভাইরাস এর শিকার। এমতাবস্থায় আমাদের শিশুদের সাথে ভালোভাবে কথা বলতে হয় তাদের সাথে বেশি বেশি সময় কাটাতে হয়।তাদের সাথে গল্প করতে হবে।আপনার শিশুকে নির্দ্বিধায় কথা বলার সুযোগ দিন। তাদের খোলামেলা প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করুন এবং তারা ইতোমধ্যে কতটা জানে তা বোঝার চেষ্টা করুন।


বাসার মদ্ধ বসে যা কিছু করা যায়, খেলাদুলা,গল্প আড্ডা, এসবের মদ্ধে রাখলে শিশুর মানসিক চাপ, বিষন্নতা কিছুটা হলেও কমতে পারে। 




মোঃসাইফুল্লাহ /সময় সংবাদ 

Post Top Ad

Responsive Ads Here