নিজস্ব প্রতিবেদক:
মহাকাশ স্টেশনে সাধারণত মহাকাশচারীদের জন্য প্যাকেট জাতক শুষ্ক খাবার পাঠানো হয়।কিন্তু ২০১৫ সাল থেকে মহাকাশ স্টেশনে চাষাবাদের গবেষণা চলছে এর কারন হলো অদূর ভবিষ্যতে মানুষ চাঁদ এবং মংগলগ্রহে বসবাস করতে যাচ্ছে এবং তাই সেখানে গিয়ে মানুষকে বছর খানেক এর বেশিও থাকতে হতে পারে।এই দীর্ঘ যাত্রায় মানুষের খাবার নিশ্চিত করতে হলে ভিনগ্রহেও মানুষকে ফসল ফলাতে হবে।এবং সেটার জন্যই দরকার পূর্বপ্রস্তুতি এবং ব্যপক বিস্তার গবেষনা।
মুলা সহ আরো বেশ কিছু চাষের পর এবার মহাকাষে চাষ হলো মরিচ
জমি/পৃথিবী ছাড়া মহাকাশে গিয়ে মহাকাশচারীরা চাষ করে ফসল ফলালো। এটা অনেকটা অবিশ্বাস্য। কিন্তু হ্যাঁ, এটাই সত্যি। পৃথিবীর মাটিতে নয় বরং মহাকাশে গিয়ে ফলানো হল মরিচ।গত ৩ জুন পাঠানো হলো মরিচের বিচ, ৪৮ টি বিচ বপন করা হলেও তার মদ্ধে থেকে ৪ টি গাছে ফলন হয়েছে।বাসা বাড়িতে যে ওভেন ইউজ করা হয় তেমন ই পাত্রে মরিচ চাষ করা হয়েছি।এবং ১২ জুলাই থেকে গাছগুলো নিয়ে গবেষনা শুরু হিয় এববগ ৩০ অক্টোবর প্রথম ফলন তোলা হয়।সবুজ এবং লাল দুইধরনের ফলন হয়।
মরিচের চাষ শুরু করার চার মাস পর, আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন (ISS)-এ থাকা নাসার মহাকাশচারীরা অবশেষে মহাকাশে চাষ করা মরিচ দিয়ে ভোজ সারলেন।
প্রায় ৭৫০০ বছর আগে থেকেই আমেরিকার আদিবাসীরা মরিচ ব্যবহার করে আসছে। ইকুয়েডর এর দক্ষিণ পশ্চিমাংশে পুরাতাত্ত্বিকেরা ৬ হাজার বছর আগে মরিচ চাষের প্রমাণ পেয়েছেন। মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকার বিভিন্ন অংশে মরিচের চাষ করা হতো প্রাচীন কাল থেকেই।
কলম্বাসের আমেরিকা আবিষ্কারের পর থেকে মরিচ সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। স্পেনীয় ব্যবসায়ীরা মেক্সিকো থেকে মরিচ এশিয়ার বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যায়। প্রথমে ফিলিপাইন্স, এবং তার থেকে ভারতবর্ষ, চীন, কোরিয়া, ও জাপানে মরিচ বিস্তার লাভ করে। ঝাল ও স্বাদের জন্য অচিরেই এটি এশিয়ার বিভিন্ন এলাকার স্থানীয় খাবারের অপরিহার্য উপকরণে পরিণত হয়।
এবার মরিচ ফলানো সম্ভব হলো আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে। এই প্রথম সেই মরিচ খেয়েছেন মহাকাশচারীরা। নাসার তরফে এ খবর দেওয়া হয়েছে।
নাসার মহাকাশচারী মেগান ম্যাকআর্থার তার সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টে ছবি পোস্ট করে জানিয়েছেন “আমরা লাল এবং সবুজ চিলির স্বাদ পেয়েছি। তারপরে আমরা এই বিষয়ে সার্ভে করেছি, আমি আমার সেরা স্পেস টাকোস তৈরি করেছিঃ ফাজিটা বিফ, রিহাইড্রেটেড টমেটো এবং আর্টিচোকস এবং হ্যাচ চিলি,”। নাসার একটি অফিসিয়াল রিলিজ অনুসারে মহাকাশে মরিচ চাষ নাসার প্ল্যান্ট হ্যাবিট্যাট-০৪ (PH-04) পরীক্ষার একটি অংশ এবং দীর্ঘ অঙ্কুরোদগম এবং ক্রমবর্ধমান সময়কালের কারণে এটি এখন পর্যন্ত সবচেয়ে জটিল পরীক্ষা ছিল। পরীক্ষাটির লক্ষ্য হল মঙ্গল গ্রহ সহ নিম্ন-পৃথিবী কক্ষপথের বাইরে গন্তব্যে মিশনের জন্য মহাকাশ অনুসন্ধানকারীদের টিকিয়ে রাখার উপায়গুলি অন্বেষণ করা এবং এমন মিশন যা কয়েক মাস বা এমনকি বছর ধরে চলতে পারে। মহাকাশচারীরা ২০১৫ সাল থেকে মহাকাশ স্টেশনগুলিতে ১০টি বিভিন্ন ফসল ফলিয়েছে এবং খেয়েছে।
“চাঁদ এবং বিশেষ করে মঙ্গলে যাওয়া মহাকাশচারীদের খাওয়া একটি লজিস্টিক চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়। এখনও পৃথিবী থেকে প্যাকেজ করা খাবারের উপর নির্ভর করে। দীর্ঘ সময়ের জন্য সংরক্ষিত প্যাকেটজাত খাবারের ফলে খাদ্যের মানের অবনতি ঘটে, যা ভিটামিন সি এবং ভিটামিন কে-এর মতো মূল পুষ্টির পরিমাণ হ্রাস করে,”।
মরিচ কেন?
মরিচের মধ্যে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান রয়েছে এবং এটি ভিটামিন সি-এর একটি চমৎকার উৎস। মাইক্রোগ্রাভিটিতে সফলভাবে বেড়ে ওঠার একটি ভালো সুযোগ থাকে এই মরিচের ক্ষেত্রে। শরীরের জন্যও পুষ্টিকর মরিচ। এগুলি মাইক্রোগ্র্যাভিটিতে বেড়ে ওঠার ফলে অণুজীবের মাত্রাও কম থাকে, তাই এগুলি মহাকাশচারীদের খাওয়ার জন্য নিরাপদ। NASA-এর পূর্ববর্তী মহাকাশ ফসল ফলানোর ক্ষেত্রে সেগুলি বৃদ্ধি পেতে অনেক বেশি সময় নিত। কিন্তু এই ধরনের মরিচ কয়েক মাসের মধ্যে বেড়ে ওঠে এবং স্থল পরীক্ষার সময় অ্যাডভান্সড প্ল্যান্ট হ্যাবিট্যাট (APH) এর ভিতরে উপলব্ধ সীমিত জায়গায় ভালভাবে বেড়েছে।
এবং সর্বশেষে জানা গেছে মহাকাশে যে মরিচ ফলন করা হলো সেটা খুব শিগ্রই পৃথিবীতে আনা হবে এবং পরিক্ষা করা হবে এটা কিভাবে জন্মালো এবং এ ফলন পৃথিবীতে সম্ভব কিনা।
মোঃসাইফুল্লাহ/সময় সংবাদ