মাদকের খপ্পরে অনিশ্চিত ইবি শিক্ষার্থীর স্বপ্ন - সময় সংবাদ | Popular Bangla News Portal

Breaking

Post Top Ad

Responsive Ads Here

বুধবার, জানুয়ারী ১৯, ২০২২

মাদকের খপ্পরে অনিশ্চিত ইবি শিক্ষার্থীর স্বপ্ন

মাদকের খপ্পরে অনিশ্চিত ইবি শিক্ষার্থীর স্বপ্ন
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটক




নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

স্বপ্ন ভরা স্বপ্ন আর দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (আইইউ) ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হন সজিব (ছদ্মনাম)। বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগ ছিল তার স্বপ্ন পূরণের বাহন। সজিবের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পেছনের গল্পে অনেক উপাখ্যান ছিল। সজিব শৈশবে বাবাকে হারিয়ে অনেক কষ্টে লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর পারিবারিক অসুবিধায় তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্মাণকাজে কাজ করতেন। স্বপ্ন, স্নাতক শেষ করে পরিবারের যত্ন নেবেন। মায়ের মুখে ফুটে উঠবে বিজয়ের হাসি। কিন্তু মাদকের কারণে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে সজিবের স্বপ্ন।


অতিমাত্রায় মাদক সেবনের কারণে সম্প্রতি মানসিক ভারসাম্য হারিয়েছেন সজিব। গত এক মাস ধরে, তার বন্ধুরা তার অস্বাভাবিক আচরণ লক্ষ্য করছে। সকালে ক্লাস শেষে হল থেকে বের হয়ে গভীর রাতে ফিরতেন। মোবাইল ফোন না থাকায় তার বন্ধুরা তাকে খুঁজে পায়নি। গত শনিবার তিনি অতিরিক্ত মাদক সেবনের কারণে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে অস্বাভাবিক আচরণ করতে থাকেন। পরে তাকে ১০৪ নং কক্ষ (পাবলিক রুম) থেকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের অতিথি কক্ষে রাখা হয়। তার বন্ধুরা জানায়, সে নিয়মিত গজ ও ইনজেকশনের মাধ্যমে মাদক সেবন করে। মাদক কেনার জন্য ফোনও বিক্রি করতেন।


তার অস্বাভাবিক আচরণের ফলে তার বন্ধুরা তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রে নিয়ে যায়। এ সময় চিকিৎসকরা জানান, তিনি পথিদিন ও নলবন ছাড়াও গাজা, ইয়াবাসহ বিভিন্ন ওষুধ শরীরে ইনজেকশন দিয়ে সেবন করতেন। অতিরিক্ত মাদক সেবনে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছেন তিনি। এসময় তারা তাকে মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন।


তার পরিবারকে জানানোর পর সোমবার তার মা ক্যাম্পাসে আসেন। এ সময় মায়ের আহাজারিতে ক্যাম্পাসের বাতাস ভারী হয়ে ওঠে। তিনি বলেন, আমার ছেলের প্রতিভা খুবই ভালো। পড়ালেখায় সে বরাবরই খুব ভালো ছিল। এসএসসিতে গোল্ডেন এবং এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়েছে। তিনি কঠোর পড়াশোনা করেছিলেন কারণ তিনি ছোটবেলায় তার বাবাকে হারিয়েছিলেন। বাড়িতে ছেলেটা ভালোই ছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার পর সে মাদকের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। আর মায়ের সন্তান যাতে এমন না হয়।


পরে বিভাগের শিক্ষকদের সহায়তায় তাকে ঠাকুরগাঁওয়ের পুনর্জন্ম মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে ভর্তি করা হয়। বর্তমানে তিনি সেখানে চিকিৎসা নিচ্ছেন।


পুনর্বাসন কেন্দ্রের পরিচালক হাসান কবির শিহাব বলেন, মাদকাসক্ত ইবি শিক্ষার্থী সোমবার আমাদের কাছে আসে। নিরাময় কেন্দ্রে আসার পরে সুস্থ হতে সাধারণত 4 মাসের বেশি সময় লাগে না। তারপরও বাকিটা নির্ভর করে রোগীর ওপর।


প্রক্টর অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, মাদকের বিষয়ে আমাকে জানানো হয়েছে। ইতোমধ্যে মাদক প্রতিরোধের কাজ শুরু হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সব হলের প্রভোস্ট ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে কথা বলেছি। শিগগিরই এ বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।


উল্লেখ্য, বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলের বিভিন্ন কক্ষে নিয়মিত মাদকের আড্ডা চলছে বলে জানা গেছে। এ ছাড়া ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে দিনের বেলায়ও মাদকের জমজমাট আড়ত। বহিরাগতরা ক্যাম্পাসে এসব মাদক সরবরাহ করে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন মাদক নির্মূলে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় মাদক সেবনের হার দিন দিন বাড়ছে।

মোঃসাইফুল্লাহ /সময় সংবাদ 

Post Top Ad

Responsive Ads Here