‘পুলিশ সপ্তাহ ২০২২’ উপলক্ষে বঙ্গভবন থেকে ভার্চুয়ালি ভাষণ দেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ পুলিশকে বলেন, সেবাপ্রার্থীরা যেন হয়রানির শিকার না হয় সেদিকে পুলিশ সদস্যদের খেয়াল রাখতে হবে।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ‘পুলিশ সপ্তাহ ২০২২’ উপলক্ষে বঙ্গভবন থেকে দেওয়া ভার্চুয়াল বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন।
রাষ্ট্রপতি বলেন, সাধারণ মানুষ বিপদে পড়লে আইনি সহায়তার জন্য পুলিশের কাছে যায়। আপনি তাদের উদ্বেগ এবং অভিযোগগুলি খুব মনোযোগ সহকারে শুনবেন এবং আন্তরিকভাবে তাদের (বিপন্ন) আইনি পরিষেবা দিতে দ্বিধা করবেন না।
'দক্ষ পুলিশ, সমৃদ্ধ দেশ, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ' প্রতিপাদ্যের অধীনে 23 থেকে 26 জানুয়ারি 2022 পর্যন্ত পালিত হচ্ছে পুলিশ সপ্তাহ।
রাষ্ট্রপতি আরও বলেন, আপনারা (পুলিশ সদস্য) বন্ধু হিসেবে জনগণের পাশে থাকবেন। একজন মানবিক পুলিশ হয়ে মানুষের সেবা করুন।
মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অনুপ্রাণিত হয়ে রাষ্ট্রপতি পুলিশ বাহিনীকে দেশপ্রেম, সততা ও সর্বোচ্চ নিষ্ঠার সাথে দেশ ও জনগণের কল্যাণে কাজ করার আহ্বান জানান।
বাংলাদেশ পুলিশকে একটি আধুনিক ও উন্নত দেশে একটি উপযোগী বাহিনী হিসেবে গড়ে তুলতে সরকার কাজ করছে উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, তথ্যপ্রযুক্তির (আইটি) প্রসারের সঙ্গে সঙ্গে পুলিশের চাকরিতে প্রবেশও সহজ হয়েছে।
সময়মতো পুলিশি সেবা দিতে নতুন ইউনিট গঠন করা হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। এতে পুলিশের কার্যক্রম আরো গতিশীল হবে এবং জনগণ সহজেই ভালো পুলিশি সেবা পাবে।
কমিউনিটি পুলিশিং ও বিট পুলিশিংয়ে জনগণকে আরও সম্পৃক্ত করার ওপর গুরুত্বারোপ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, পুলিশের একার পক্ষে সমাজ থেকে অপরাধ দমন করা সম্ভব নয়।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ পুলিশকে 'জনবান্ধব পুলিশ ও মানবিক পুলিশ' হিসেবে গড়ে তুলতে আপনাদের আন্তরিক প্রচেষ্টা চালাতে হবে।
বর্তমান সরকার ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি উন্নত দেশে পরিণত করার লক্ষ্যে কাজ করছে উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি হামিদ বলেন, দেশ ইতিমধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছে।
রাষ্ট্রপতি বলেন, গবেষণা, উদ্ভাবন এবং সর্বাধুনিক প্রযুক্তি গ্রহণের মাধ্যমে একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় পুলিশকে এগিয়ে যেতে হবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ পুলিশকে নতুন গবেষণা ও উদ্ভাবনে সমৃদ্ধ হতে হবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ পুলিশের একটি 'থিংক ট্যাংক' থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
বর্তমান প্রযুক্তির বিকাশের বিশ্বে অন্যান্য অপরাধের মধ্যে দেশীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক এবং বিভিন্ন অ্যাপ ব্যবহার করে সাইবার ক্রাইম বাড়ছে উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, সাইবার অপরাধ মোকাবেলায় আমাদের পুলিশের সক্ষমতা বাড়াতে হবে এবং সমৃদ্ধ, প্রশিক্ষিত ও দক্ষ ব্যক্তি তৈরি করতে হবে। আধুনিক তথ্য প্রযুক্তিতে দক্ষ জনশক্তি।
আবদুল হামিদ বলেন, ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় পুলিশ সদস্যদের সর্বাধুনিক প্রযুক্তিতে সজ্জিত করতে হবে।
জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে অভিযান বাংলাদেশ পুলিশের অন্যতম বড় অর্জন উল্লেখ করে তিনি বলেন, জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে জনগণকে সম্পৃক্ত করতে হবে এবং এর বিরুদ্ধে জনসচেতনতা বাড়াতে হবে।
মাদকের অপব্যবহারকে একটি বড় সামাজিক ব্যাধি উল্লেখ করে তিনি বলেন, পুলিশসহ বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের কিছু অসাধু কর্মচারীর সহায়তায় দেশের তরুণদের একটি অংশ মাদক সংক্রান্ত অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে।
এ বিষয়ে পুলিশকে আরও সক্রিয় হতে হবে বলে মন্তব্য করেন রাষ্ট্রপতি মো. এ ক্ষেত্রে 'জিরো টলারেন্স' নীতি বিবেচনা করতে হবে।
রাষ্ট্রপতি বলেন, বাংলাদেশ পুলিশ বিশ্বব্যাপী কোভিড-১৯ মহামারীতে সামনের সারির যোদ্ধা হিসেবে জনগণের সেবা করার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।
তিনি দেশের জনগণের সেবা, নিরাপত্তা ও নিরাপত্তার জন্য জীবন উৎসর্গকারী সকল নির্ভীক পুলিশ সদস্যদের বিদেহী আত্মার চির শান্তি কামনা করেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, জননিরাপত্তা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. আখতার হোসেন, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মো. বেনজীর আহমেদসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
মোঃসাইফুল্লাহ /সময় সংবাদ