ভুয়া ডাক্তার হয়েও তিনি করতেন জটিল রোগের চিকিৎসা
চকরিয়া সিটি হাসপাতাল
কক্সবাজার প্রতিনিধি
ডাক্তারি পাস না করেও দীর্ঘদিন ধরে নামের পাশে লিখেন এমবিবিএস ডাক্তার। আর ডাক্তার সেজে রোগীদের বিভিন্ন জটিল ভুয়া চিকিৎসা প্রদান করে আসছিলেন ফরিদ উদ্দিন নামে এক প্রতারক। চিকিৎসার নামে মানুষের সঙ্গে প্রতারণার অভিযোগে কক্সবাজারের চকরিয়া সিটি হাসপাতাল থেকে তাকে গ্রেফতার করেছে উপজেলা প্রশাসনের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালত।
এ সময় তাকে এক বছরের কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানাও করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রাহাত উজজ্জামান।
সোমবার দুুপুরে চকরিয়া পৌরশহরের বাস টার্মিনালস্থ সিটি হাসপাতাল থেকে ভুয়া ডাক্তার ফরিদ উদ্দিনকে গ্রেফতার করা হয়।
ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রাহাত উজ্জামান বলেন, ফরিদ উদ্দিন নামের এক ব্যক্তি নিজেকে ডাক্তার পরিচয় দিয়ে চকরিয়া-পেকুয়াসহ বিভিন্ন স্থানে চিকিৎসার নামে প্রতারণা করে আসছে। ওই ভুয়া ডাক্তার ফরিদ উদ্দিন চকরিয়া পৌরশহরের বাস টার্মিনালস্থ সিটি হাসপাতালে নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নিতে অবস্থান করছেন বলে আমাদের কাছে খবর আসে। এর প্রেক্ষিতে সোমবার দুপুরের দিকে ওই হাসপাতালে চকরিয়া থানা পুলিশ ও আনসার সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে অভিযানে যাই। ওইসময় ফরিদ উদ্দিনকে এমবিবিএস পাশ করা সনদ দেখাতে বললে তিনি ডা. মাঈন উদ্দিন নামের এক ডাক্তারের সার্টিফিকেট দেখান।
চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শোভন দত্ত সেসব কাগজ যাচাই-বাছাই করে দেখেন গ্রেফতারকৃত ফরিদ উদ্দিন মুলত ডা. মাঈন উদ্দিনের সার্টিফিকেট জালিয়াতি করে সিটি হাসপাতালের কাছে হস্তান্তর করেছেন।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি নিজেকে ভুয়া ডাক্তার বলে স্বীকার করেন। সরকারি নিবন্ধনকৃত কোনো মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে ডাক্তারি পাস না করেও দীর্ঘদিন ধরে নামের পাশে ডাক্তার লিখে ভুয়া এমবিবিএস ডাক্তার সেজে তিনি নিরীহ রোগীদের বিভিন্ন জটিল রোগের ভুয়া চিকিৎসা দিয়ে আসছেন। পরে ফরিদ উদ্দিন ভ্রাম্যমাণ আদালতের কাছে দোষ স্বীকার করলে এক বছরের কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা প্রদান করা হয়।
জানা যায়, ভুয়া ডাক্তার দিয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের অনুমোদন ছাড়াই চলছে চকরিয়া সিটি হাসপাতাল। প্রাইভেট হাসপাতাল বলা হলেও এটি মূলত একটি অবৈধ ক্লিনিক। যেখানে চিকিৎসার নামে চলছে রমরমা গলাকাটা বাণিজ্য। চিকিৎসাসেবা নিতে এসে প্রতারিত হয়েছেন অনেকেই, এমন অভিযোগ রোগীর স্বজনদের। টাকা খরচ করেও উপযুক্ত সেবা না পেয়ে ক্লিনিকটিতে অনেক রোগীর মৃত্যুর খবরও পাওয়া গেছে। আরো অভিযোগ রয়েছে, সিভিল সার্জন অফিসসহ সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে কোটি কোটি টাকা মাসোয়ারা দিয়ে ময়লা-আবর্জনার ভাগাড়সহ নানা সংকট এবং অনিয়ম-অব্যবস্থাপনায় মধ্যদিয়ে রোগীদের স্বজনদের সঙ্গে চরমভাবে প্রতারণা করে যাচ্ছে এই ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ।ঢাকা, মঙ্গলবার ১৭ মে ২০২২।