গ্রাম-বাংলার সেই চিরচেনা ঢেঁকি এখন বিলুপ্তির পথে ।।SHOMOY SANGBAD - সময় সংবাদ | Popular Bangla News Portal

Breaking

Post Top Ad

Responsive Ads Here

বৃহস্পতিবার, মে ৩১, ২০১৮

গ্রাম-বাংলার সেই চিরচেনা ঢেঁকি এখন বিলুপ্তির পথে ।।SHOMOY SANGBAD

জাহাঙ্গীর আলম, টাঙ্গাইল

আদিকাল থেকে গ্রাম-বাংলার প্রতিটি ঘরেই চিরচেনা উপাদেয় ঢেঁকি। সেই ঢেঁকি এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে। ধান ভানা, ধানের গুড়া কোটা, চিড়া তৈরি, পায়রা থেকে ছাতু, তিল-তিসি থেকে তৈল তৈরি করার কাজে ঢেঁকির ব্যবহার ছিল অপরিসীম। ভোর রাত শুরু করে সূর্য ওঠা পর্যন্ত ধান ভানার কাজে ব্যস্ত থাকত গ্রাম-বাংলার গৃহিনীরা। ঢেঁকির ধাপুর-ধুপুর শব্দে ঘুম ভাঙ্গত পরিবারের অন্যান্যদের। তখনকার দিনে ঢেঁকিতে ধান ভানা বাড়ির মহিলাদের কাছে একটি উপভোগ্য বিষয় ছিল। নতুন ধানের গুড়া দিয়ে পিঠা তৈরি করে খাওয়ানোর মজাই আলাদা। বাড়ির বৌ-ঝিয়েরা তাই নিত্য কাজের ফাঁকে ধান ভানার কাজে প্রায় সময়ই ব্যস্ত থাকত। ঢেঁকিতে ধান ভানার সময় গ্রামীন সুরে গান (গীত) গাওয়া তাদের একটা রেওয়াজ ছিল। গ্রামীন চিরচেনা সেই আনন্দের গান এখন আর শোনা যায় না। ঢেঁকি ছিল না এমন কোন গৃহস্থ বাড়ীই ছিল না বললেই চলে। কালের বিবর্তনে তা এখন বিলীন হওয়ার পথে। বাংলাদেশের গ্রাম-গঞ্জে এখন পুরোপুরি যান্ত্রিক মেশিনের ঢেউ লেগেছে। মাছে ভাতে বাঙ্গালির ঘরে একসময় নবান্নের উৎসব হতো ঘটা করে। উৎসবের প্রাতিপাদ্যটাই ছিল মাটির গন্ধ মাখা ধান। এ উৎসবে ঢেঁকি ছাটা ধানের চালের ভাত আর সুস্বাদু পিঠার আয়োজন হোত। রাতের পর রাত জেগে শরীরের ঘাম ঝরিয়ে ঢেঁকিতে ধান ভানার পর প্রাণখোলা হাসি তাদের মুখে লেগেই থাকত।

ঢেঁকি তৈরির উপাদান সাধারণত একটি কাঠের খন্ড যা বাবলা, গাব অথবা বেল গাছের কাঠ তৈরি করা হোত। সাধারণত ৫/৬ হাত লম্বা ৬/৭ ইঞ্চি চওড়া গাছ দিয়ে ঢেঁকি তৈরি করা হোত। ঢেঁকি সাধারণত বসানো হতো রান্না ঘরে। তখনকার দিনে রান্নাঘর বলে কিছু ছিল না, ওই ঘরটি ছিল ঢেঁকি ঘর নামে পরিচিত। শুকনা ধান নুডের মধ্যে দিয়ে গোড়ার উপর দাড়িয়ে পেছন অংশে চাপ দিলেই ঢেঁকি উপরে উঠত এবং পা সরিয়ে নিলেই মোনাই বা চুর্নি স্বজোরে নুডের ভিতর রাখা ধানের উপর পরত। এভানে ধানের খোসা ছাড়িয়ে তৈরি হতো চাল।

ঢেঁকি গ্রাম-বাংলার একটি প্রাচীন ঐতিহ্য। শীতের দিনে গ্রামগঞ্জে ঢেঁকি দিয়ে গুড়া তৈরি করে পিঠা খাওয়ার ধুম পড়ে যেত। তাছাড়া বাড়িতে অতিথি আসলে কিংবা বিয়ের অনুষ্ঠান শুরু হলেই বিভিন্ন পিঠা তৈরির জন্য চাল ভানতে ঢেঁকি ব্যবহার করা হতো। এখন পাল্টে গেছে সেই দৃশ্যপট। গ্রামগঞ্জের প্রায় প্রতিটি হাট-বাজারে পৌছে গেছে বিদ্যুৎ। গ্রামে এখন সেলো-ইঞ্জিন মেশিনে ধান ভাঙ্গানো হয়ে থাকে। এমনকি ভাসমান মেশিন দিয়েও এখন ধান চাল গমসহ নানান খাদ্যসামগ্রী ভাঙ্গানো হচ্ছে। ফলে মানুষের সেই চিরচেনা ঢেঁকি এখন বিলীনের পথে। আগামী প্রজন্মের কাছে এটা স্বপ্নের মতো মনে হবে।

Post Top Ad

Responsive Ads Here