এবার মুম্বাইতেও কথিত অবৈধ বাংলাদেশিদের জন্য বন্দি শিবির - সময় সংবাদ | Popular Bangla News Portal

Breaking

Post Top Ad

Responsive Ads Here

বৃহস্পতিবার, সেপ্টেম্বর ১২, ২০১৯

এবার মুম্বাইতেও কথিত অবৈধ বাংলাদেশিদের জন্য বন্দি শিবির


সময় সংবাদ ডেস্ক-
ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য আসামে ‘প্রকৃত নাগরিক’ চিহ্নিত করার যে বিতর্কিত অভিযানের জেরে প্রায় বিশ লাখ মানুষের রাষ্ট্রহীন হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে, সেই একই ধরনের অভিযান এবার পশ্চিম ভারতের মহারাষ্ট্রেও শুরু হতে চলেছে বলে পরিষ্কার ইঙ্গিত মিলেছে। আর তারই প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে রাজ্যে ‘অবৈধ বিদেশি’দের আটক রাখতে মুম্বাইয়ের উপকণ্ঠে এক বিশাল ‘ফরেনার্স ডিটেনশন সেন্টার’ বা ‘বিদেশি বন্দি শিবির’ গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছে মহারাষ্ট্র সরকার।ভারতের আর্থিক রাজধানী মুম্বাইয়ের শহরতলীতে ‘নাভি মুম্বাই’ নামে যে উপনগরী তৈরি হয়েছে, তারই নেরুল এলাকায় এই সেন্টারটি গড়ে তুলতে চাইছে সরকার। মহারাষ্ট্রের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যেই নাভি মুম্বাইতে সিটি অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডেভেলপমেন্ট করপোরেশনের কাছে চিঠি লিখে এর জন্য সাড়ে চারশো বর্গমিটারের একটি প্লট অধিগ্রহণ করতে চেয়েছে।

মুম্বাইতে সরকারি কর্মকর্তারা নিশ্চিত করেছেন, এই জমি অধিগ্রহণ করা হচ্ছে ‘অবৈধ বিদেশি’দের আটক রাখতেই। ওই জমিতে এখন দুস্থ মহিলাদের জন্য একটি আশ্রয়কেন্দ্র চালানো হয়, তার জায়গায় সেটি পরিণত হবে একটি বন্দি শিবিরে।

আসামে এই মুহূর্তে ছয়টি ডিটেনশন সেন্টার গড়ে তুলে যেভাবে সন্দেহভাজন হিসেবে শত শত লোককে আটকে রাখা হয়েছে, মুম্বাইও এবার সেই একই পথে হাঁটতে চলেছে বলে পর্যবেক্ষকরা এক মত। আর এই পদক্ষেপের সঙ্গে আগামী মাসে (অক্টোবর) অনুষ্ঠিতব্য রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আছে বলেও তারা মনে করছেন।

মুম্বাইতে টাটা ইনস্টিটিউট অব সোশ্যাল সায়েন্সের অধ্যাপক ও সমাজবিজ্ঞানী পি কে শাজাহান বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছেন, ‘‘মুম্বাই তথা মহারাষ্ট্রে প্রতিবার ভোটের আগে ‘অবৈধ বাংলাদেশি তাড়ানো’কে রাজনৈতিক ইস্যু বানানোর চেষ্টা করা হয়। এবারও ডিটেনশন সেন্টার বানানোর নামে সেই চেষ্টাই যে করা হচ্ছে তাতে কোনও সন্দেহ নেই।

অধ্যাপক শাহজাহান আরও বলেন, ‘ভোটের আর মাত্র মাসখানেক বাকি, তার আগে হয়তো এখানে আসামের এনআরসি-র মতো প্রক্রিয়া শুরু করা সম্ভব নয়। কারণ তার জন্য যথেষ্ট সময় নেই। কিন্তু, ডিটেনশন সেন্টার গড়ার কথা বলে বিজেপি-শিবসেনা এটাই প্রমাণ করতে চাইছে যে আবার ক্ষমতায় এলে তারা কথিত বাংলাদেশিদের তাড়িয়েই ছাড়বে!
মুম্বাইভিত্তিক ভারতীয় মুসলিম মহিলা আন্দোলনের জাকিয়া সোমান আবার আশঙ্কা করছেন, এই প্রস্তাবিত সেন্টারে বাংলাদেশি ভরার নামে ভারতের সত্যিকারের বাংলাভাষী মুসলিম নাগরিকরাও হেনস্থার শিকার হবেন।

জাকিয়া সোমান এই প্রতিবেদককে বলছিলেন, ‘দেখুন মুম্বাই থেকে প্রায় প্রতি মাসেই কিছু কিছু বাংলাদেশি নাগরিককে ডিপোর্ট করা হয় বলে আমরা জানি। ভোটের আগে সেই প্রবণতা হয়তো কিছুটা বাড়ে। কিন্তু সেই সংখ্যাটা কখনও এত বেশি নয় যে তার জন্য শহরতলিতে পেল্লায় সেন্টার গড়ে তোলার দরকার হবে।

সোমান আরও বলেন, ‘আমার আশঙ্কা, এখন এই ডিটেনশন সেন্টার ভর্তি– এটা দেখানোর জন্য মুম্বাইয়ে কর্মরত পশ্চিমবঙ্গের বাঙালি মুসলিমরা, যাদের হয়তো সঠিক কাগজপত্র নেই, তাদের এখানে পুরে দেওয়ার চেষ্টা হবে।

এদিকে এনআরসি ইস্যুটি যেভাবে ভারতে রাজনৈতিকভাবে স্পর্শকাতর একটি বিষয় হয়ে উঠেছে, তাতে মহারাষ্ট্রে প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসও এই ডিটেনশন সেন্টার গড়ার বিরোধিতা করতে দ্বিধায় ভুগছে।

মুম্বাইতে কংগ্রেসের সিনিয়র নেতা সঞ্জয় নিরুপমের (যিনি নিজেও আসলে মহারাষ্ট্রের লোক নন, বিহার থেকে আসা অভিবাসী) সঙ্গে এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে তিনিও কোনও মন্তব্য করা থেকে বিরত থেকেছেন।

তবে বিজেপি ও শিবসেনার মতো হিন্দুত্ববাদী দলগুলোর দাবি, মহারাষ্ট্রে ‘অবৈধ বাংলাদেশি’দের চাপ এতটাই বেড়ে গেছে যে, এই ধরনের সেন্টার গড়ে তোলা ছাড়া কোনও উপায় নেই।
‘রামভাউ মহালগি প্রবোধিনী’ নামক আরএসএস প্রভাবিত এনজিও মুম্বাইয়ের এই কথিত বিদেশিদের নিয়ে গবেষণা করছে দীর্ঘদিন ধরে। ওই প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী কর্মকর্তা রভি পোখর্নাও মনে করেন মুম্বাইতে এই ধরনের সেন্টার আসলে গড়ে তোলা উচিত ছিল অনেক আগেই। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে আসা লাখ লাখ অবৈধ অভিবাসী মুম্বাইয়ের রিসোর্স এবং আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির ওপরই শুধু চাপ সৃষ্টি করছে না, জাতীয় নিরাপত্তার জন্যও বিরাট হুমকি হিসেবে দেখা দিচ্ছে।

রভি আরও বলেন, ‘ফলে ডিটেনশন সেন্টার গড়ে তাদের আটকে রাখতেই হবে এবং বিচারের সম্মুখীন করতে হবে। সাজার মেয়াদ শেষ হলে নিজের দেশে ফেরত পাঠাতে হবে। ভারতের ফরেনার্স অ্যাক্টও ঠিক এই কথাই বলে।

সুতরাং মহারাষ্ট্রে আসন্ন নির্বাচনের আগে কথিত ‘অবৈধ বাংলাদেশি’ শনাক্ত করার অভিযান জোরেশোরে শুরু হতে পারে, অন্তত সেটা দেখানোর তাগিদ সরকারের দিক থেকে খুবই বেশি।

Post Top Ad

Responsive Ads Here