ঢাকা থাইক্ক্যা কেডা আইছে, আর এরা কয় আমি বুঝি এরার বাড়িত গেছি। চা খাইছি, এর লাগি আমারে করোনা কইয়া বাইর কইরা দিছে। আমার নাকি করোনা হইছে। করোনার ভয়ে নিজের পেটে ১০ মাস ১০ দিন ধরা ছেলেরা আমাকে রাস্তায় ফেলে গেছে। দুই দিন ধরে অভুক্ত আমি। এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন অমৃতবালা দাস।
অভাবের জ্বালা নিয়ে স্থানীয় স্কুলের বারান্দায় বসে আছেন তিনি। পুরোনো সাদা শাড়িতে বিধ্বস্ত লাগছিল এ বিধবাকে। কথা বলছিলেন জড়তা নিয়ে। তবে তার মধ্যে সর্দি-কাশি বা করোনার প্রাথমিক কোনো উপসর্গ লক্ষ্য করা যায়নি।
ঢাকা ফেরত শ্রমিকের বাড়ি যাওয়ার অভিযোগে তার সন্তানরা বাড়ি থেকে বের করে দেন বলে তিনি জানান। তবে ছেলেদের এই অমানবিক কাজে উৎসাহ দেন পাড়ার লোকজনও।
সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার হবিবপুর ইউপির নিয়ামতপুর গ্রামের বাসিন্দা ৮০ বছরের বৃদ্ধা অমৃতবালা দাসকে করোনা রোগী সন্দেহে গ্রাম ছাড়া করা হয়েছে। ঘর থেকে বের করে দেয়ায় তিনি পথে পথে ঘুরছেন। তার দুই ছেলে যোগেশ দাস ও রণধীর দাস। গত ১২ এপ্রিল ওই বৃদ্ধাকে গ্রাম ছাড়া করা হয়। এরপর তিনি রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন।
ওই নারী বলেন, আমার কোনো করোনাভাইরাস হয়নি। নারী মেম্বার জ্যোৎস্না রাণী দাসের কথাও শুনেনি ছেলেরা। পরে ১৪ এপ্রিল বুধবার আমি ২ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য সুব্রত সরকারের কাছে যাই। কিন্তু তাকে না পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়ি।
এ ব্যাপারে ২ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য সুব্রত সরকার বলেন, ঘটনাটি অমানবিক। আমি খোঁজ খবর নিচ্ছি।
এ বিষয়ে ইউএনও আল মুক্তাদির হোসেন বলেন, আমি ইউপি চেয়ারম্যানকে অবগত করেছি। তার কাছে ত্রাণ পৌঁছে দেয়া হবে। প্রয়োজনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে পাঠাবেন।
নিয়ামতপুর গ্রামে সম্প্রতি ঢাকা থেকে পরিবার নিয়ে গ্রামে আসেন অমরচাঁদ দাস। তারা বর্তমানে হোম কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন। ১২ এপ্রিল কে বা কারা গুজব ছড়ায় ওই বৃদ্ধা তাদের বাড়ি গিয়ে চা পান করেছেন। তারপর থেকেই তার ছেলেরা ও পাড়া প্রতিবেশী তাকে গ্রাম ছাড়া করে।
সময়/দেশ