মুশফিকুর রহিম, একটি ভরসার নাম - সময় সংবাদ | Popular Bangla News Portal

Breaking

Post Top Ad

Responsive Ads Here

শনিবার, মে ০৯, ২০২০

মুশফিকুর রহিম, একটি ভরসার নাম


বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলে সবচেয়ে পরিশ্রমী ক্রিকেটারের কথা বললে যার নামে সবার আগে আসবে তিনি হলেন মুশফিকুর রহিম। ধৈর্য, অধ্যবসায় ও একাগ্রতার প্রতিমূর্তি এই উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান বর্তমানে দলের ব্যাটিংয়ের অন্যতম স্তম্ভ।  নিজ গুণে ব্যাট হাতে বাইশগজে ভরসার অন্য নাম হয়ে উঠেছেন মুশফিক। এজন্য তাকে মিস্টার ডিপেন্ডেবল নামেও ডাকেন অনেকেই। 

বগুড়ার এই কৃতি ব্যাটসম্যানের জন্ম ১৯৮৭ সালের ৯ মে। বগুড়া জিলা স্কুলে পড়াশোনা শুরু করেন তিনি। স্কুলের পাশের আলতাফুন্নেসা খেলার মাঠে ক্রিকেট নিয়েই বেশি ব্যস্ত থাকতেন। খেলাধুলার প্রতি আগ্রহ দেখে হাইস্কুলে ওঠার পর তাকে বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে (বিকেএসপি) ভর্তি করে দেন বাবা মাহবুব হাবিব। 

মুশফিক হতে চেয়েছিলেন ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড়। তবে বিধাতা যে চেয়েছিলেন অন্য কিছু! তাই যেনো বিকেএসপিতে ভর্তি হওয়ার পর দেখেন ব্যাডমিন্টনে যাওয়ার সুযোগ নেই। ক্রিকেট বা ফুটবল, এই দুটার ভেতর শেষ পর্যন্ত বেছে নিলেন ক্রিকেটই। আর এখান থেকেই শুরু হয় তার নতুন পথচলা। 

মূলত উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান হিসেবেই সবার মাঝে পরিচিত মুশফিক। তবে মজার ব্যাপার, প্রথমে তিনি ছিলেন একজন ফাস্ট বোলার! দৌড়ে এসে গায়ের জোরে বল করতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করতেন তিনি। শারীরিক গঠনে খাটো হওয়ায় তাকে অন্যদিকে মনোযোগ দেয়ার পরামর্শ দেন বিকেএসপির শিক্ষক। এরপর ব্যাটিং নিয়েই বেশি মেতে থাকতেন। বিকেএসপির হয়ে একটি ম্যাচ খেলার সময় দলের মূল উইকেটরক্ষক আহত হওয়ায় তার দায়িত্ব পালন করেন মুশফিক। সেদিন কিপিংয়েই খুঁজে পেলেন তৃপ্তি। এরপর থেকেই উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলে আসছেন তিনি। 

২০০৫ সালে বাংলাদেশের ইংল্যান্ড সফরে খালেদ মাসুদ পাইলটের ব্যাকআপ উইকেটকিপার হিসেবে ডাক পান মুশফিক। তবে প্রস্তুতি ম্যাচে তার ৬৩ ও অপরাজিত ১১৫ রানের দুটি ইনিংস নির্বাচকদের নতুন করে ভাবতে বাধ্য করে। ফলে স্পেশালিস্ট ব্যাটসম্যান ও বাংলাদেশের ৪১তম ক্রিকেটার হিসেবে প্রথম টেস্টেই (২৬ মে) অভিষেক হয় মুশফিকের। তবে অ্যাংকেল ইঞ্জুরির ফলে সিরিজের বাকি ম্যাচগুলো থেকে থেকে ছিটকে পরেন তিনি। নিজের প্রথম আন্তর্জাতিক ইনিংসে ১৯ রান করে ছোট্ট মুশি। 


২০০৬ সালের অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দেন মুশফিক। সেই দলে সাকিব আল হাসান ও তামিম ইকবালও খেলেন। তার নেতৃত্বে কোয়ার্টার ফাইনাল পর্যন্ত যেতে পারে জুনিয়র টাইগাররা। একই বছর ৮০তম বাংলাদেশি ক্রিকেটার হিসেবে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে মুশফিকুর রহিমের ওয়ানডে অভিষেক হয়। সেই সিরিজেই অভিষেক হয় সাকিব আল হাসান ও ফরহাদ রেজার। জিম্বাবুয়ে সফরে ক্যারিয়ারের প্রথম হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন মুশফিক, যার ফলে পরের বছরের বিশ্বকাপ দলে জায়গা পেয়ে যান তিনি। 

ভারতের বিপক্ষে ২০১০ সালে প্রথম আন্তর্জাতিক টেস্ট সেঞ্চুরি করেন মুশফিক। এরপর আরো ছয়বার ক্রিকেটের এই অভিজাত ফরম্যাটে তিন অংকের ঘর স্পর্শ করেছেন তিনি। এর মাঝে ২০১৩ সালের শ্রীলংকা সফরে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে টেস্টে ডাবল সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন মিস্টার ডিপেন্ডেবল। তিনি অষ্টম উইকেট-রক্ষক যিনি টেস্টে ডাবল সেঞ্চুরি করেছেন এবং ৯ম ব্যাটসম্যান যিনি টেস্টে ৬ নম্বরে ব্যাটিংয়ে নেমে ডাবল সেঞ্চুরি করেছেন। 

২০১৮ সালের নভেম্বরে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দ্বিশতক করার মাধ্যমে ইতিহাসের প্রথম উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান হিসেবে টেস্টে দুইটি দ্বিশতক করার রেকর্ড গড়েন মুশফিক। এছাড়া প্রথম বাংলাদেশি হিসেবেও দুইটি দ্বিশতকের রেকর্ড তার। চলতি বছর জিম্বাবুয়ের বিপক্ষেই তৃতীয়বারের মতো টেস্ট ডাবল সেঞ্চুরি করেন তিনি, যা বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানদের মাঝে সর্বোচ্চ। 

টেস্টের পাশাপাশি মুশফিকের ওয়ানডে ক্যারিয়ারও বেশ রঙিন। একদিনের ক্রিকেটেও সাতবার তিন অংকের ম্যাজিক ফিগার স্পর্শ করেছেন এই ব্যাটসম্যান। এর মাঝে ২০১৮ সালের এশিয়া কাপে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ১৪৪ রানের ইনিংসটি সর্বোচ্চ। 

এখন পর্যন্ত ২১৮ ওয়ানডে, ৭০ টেস্ট ও ৮৬ টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছেন মুশফিক। এই তিন ফরম্যাটে যথাক্রমে ৬১৭৪, ৪৪১৩ ও ১২৮২ রান করেছেন তিনি। এছাড়া স্ট্যাম্পের পিছে থেকে সবমিলিয়ে ৪০৬টি ডিসমিসাল রয়েছে তার। দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশ দলে উইকেটের পিছে সফলতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে আসছেন এই ক্রিকেটার।

জাতীয় দলের অধিনায়ক হিসেবে দীর্ঘসময় দায়িত্ব পালন করেছেন মুশফিকুর রহিম। তার নেতৃত্বে ৩৪ টেস্টে ৭ বার জয়ের দেখা পায় বাংলাদেশ। মুশফিকের নেতৃত্বেই প্রথমবারের মতো অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড ও শ্রীলংকাকে হারায় টাইগাররা। ৩৭ ওয়ানডেতে অধিনায়ক হিসেবে নেতৃত্ব দিয়েছেন মিস্টার ডিপেন্ডেবল। এর মাঝে ৭ বার জয় পায় বাংলাদেশ। টি-টোয়েন্টিতে তার অধীনে ২৩ ম্যাচে আটবার জিতেছে লাল সবুজের প্রতিনিধিরা। 


অনেক ক্রিকেটারই আছেন যারা ঐশ্বরিকভাবে প্রাপ্ত প্রতিভার সাহায্যে এগিয়ে যান, নিজের নাম উজ্জ্বল করেন। তবে এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম মুশফিক। খুব বেশি প্রতিভা না থাকলেও প্রচুর পরিশ্রমের মাধ্যমে নিজের স্কিলকে অন্য পর্যায়ে নিয়ে গেছেন তিনি। যে দলের হয়েই খেলেন না কেনো, ব্যাট হাতে তার উপর সবারই বিশেষ প্রত্যাশা থাকে। মুখে সবসময় হাসি লেগে থাকার মতো তার ব্যাটও বেশ নিয়মিত হাসে। প্রতিপক্ষের বিপক্ষে ব্যাট দিয়ে রানের ফল্গুধারা ছুটিয়েই ভরসার অন্য এক নাম হয়ে উঠেছেন মুশফিকুর রহিম। 




সময়/ক্রিকেট

Post Top Ad

Responsive Ads Here