প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে প্রায় বিশ্বজুড়ে। এতে মৃতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ২ লাখ ৪০ হাজার। আক্রান্ত হয়েছেন ৩৪ লাখ ২৪ হাজার ৩৮২ জন। এ তথ্য আন্তর্জাতিক জরিপকারী সংস্থা ওয়ার্ল্ডোমিটার এর। তবে জানেন কি- এমন একটি দেশ আছে যেখানে ভাইরাসটির সংক্রমণ ঘটেছে ঠিকই কিন্তু নেই কোনো মৃত্যুর সংখ্যা?
দেশটি ভিয়েতনাম। প্রায় ১০ কোটি মানুষের দেশটিতে এখনো কেউ এই ভাইরাসে মারা যায়নি। ২৭০ জন সেখানে সংক্রমিত হয়েছে। তার মধ্যে ২২০ জন ইতিমধ্যে সুস্থ হয়ে গেছে।
ভাইরাসের উৎপত্তি চীনের সঙ্গে রয়েছে ভিয়েতনামের প্রায় ১ হাজার ৩০০ কিলোমিটারের সীমান্ত। ভিয়েতনাম থেকে চীনে হাজার হাজার মানুষের আসা-যাওয়া। ২৫ বিলিয়ন ডলারের অর্থনৈতিক সম্পর্ক দুই দেশের। তারপরও ভাইরাস কাবু করতে পারেনি ভিয়েতনামকে।
কীভাবে ভাইরাস মোকাবিলায় ভিয়েতনাম অবিশ্বাস্য সফলতা দেখাল, সেটা সমগ্র বিশ্বের কাছেই এখন এক অনুসন্ধানের বিষয় হয়ে উঠছে। জানা গেছে, কারো মৃত্যু না হলেও ভিয়েতনামে এ পর্যন্ত করোনা পরীক্ষা করা হয়েছে প্রায় আড়াই লাখ নাগরিকের। কোয়ারেন্টিনে আছেন ৬০ থেকে ৭০ হাজার মানুষ। এসবই শুরু সেই জানুয়ারি থেকে। ওই মাসেই দেশটিতে প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়ে। তবে রোগ ধরা পর্যন্ত অপেক্ষা করেনি দেশটির নেতৃত্ব। তার আগেই সর্বোচ্চ প্রশাসনিক সতর্কতায় কাজে নেমে পড়েছিল। ফেব্রুয়ারিতেই সেখানে এটা সরকারের সবচেয়ে ‘অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত বিষয়’ হয়ে যায়।
শুরুতে যারাই সংক্রমিত হয়েছে, তাদের প্রত্যেকের চলাফেরা-মেলামেশার ইতিহাস সংগ্রহ করা হতো। সংক্রমিত ব্যক্তিদের কাছে আসা মানুষদেরও পরীক্ষার আওতায় আনা হয় ব্যাপক হারে। কমিউনিটিজুড়ে শুরু হয় প্রচার ও সচেতনতার কাজ। গত ১৭ মার্চ থেকে দেশটিতে জনসমাগমস্থলে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করা হয়। মাস্কের দাম বাড়ানোকে বড় আকারে শাস্তির আওতায় আনা হয়। ভাইরাস সংক্রমণের তথ্য লুকানোকেও শাস্তিযোগ্য করা হয়। রাস্তায় রাস্তায় ‘মাস্কের ফ্রি এটিএম বুথ’ খোলা হয়।
মার্চ থেকেই ভিয়েতনামে আসা সব নাগরিককে বাধ্যতামূলক আইসোলেশনে নেয়া হয়। বিদেশিদের আসায় সাময়িক নিষেধাজ্ঞা জারি হয়। হোটেল ও সামরিক ছাউনিগুলোর অনেকটিকে অস্থায়ী হাসপাতাল ও আশ্রয়কেন্দ্র বানিয়ে ফেলা হয়। বিমানগুলো আসার খবর আগেই ঘোষণা করা হতো এবং সব যাত্রীকে স্থানীয় প্রশাসনের কাছে রিপোর্ট করা বাধ্যতামূলক করা হয়। বিমানবন্দরেও বিনা খরচে ভাইরাস পরীক্ষার ব্যবস্থা হয়।
যে এলাকায় সংক্রমণের খবর মিলত, সেখানে পুরো এলাকাকে কোয়ারেন্টিন করে টেস্ট শুরু হতো। কোয়ারেন্টিন করা জায়গার আশপাশেই খোলা হতো অস্থায়ী আশ্রয় ও চিকিৎসাকেন্দ্র। ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে হ্যানয় থেকে ২৫ মাইল দূরে সন-লই নামের একটা গ্রামে যখন কয়েকজনের দেহে ‘করোনা পজিটিভ’ শনাক্ত হয়, তখন প্রায় ১০ হাজার মানুষের পুরো এলাকা ২০ দিনের জন্য লকডাউন করে টেস্ট শুরু হয়।
ফার্মাসিগুলো থেকেও তথ্য নেওয়া শুরু হয়, কে কী ওষুধ কিনেছে। সেই ইতিহাস ধরেও দেশটিতে টেস্ট করা হয় অনেক। কাজগুলো কঠিন ছিল না। কেবল প্রশাসনকে বহুমুখীকরণ করা হয়েছিল। এভাবে ভিয়েতনামের প্রশাসন হাঁটছিল ভাইরাসটির আগে আগে।
মাত্র ২০০ থেকে ৩০০ রোগী থাকার পরও এপ্রিলে এসে দেশটি করোনাসংকটকে ‘জাতীয় মহামারি’ তুল্য সমস্যা ঘোষণা করে। এতে পুরোনো প্রশাসনিক উদ্যোগগুলোই আরো জোরালো করা হয়। ফলে দেশটির অর্থনীতি গত কয়েক মাসে তেমন হোঁচট খায়নি।
ভিয়েতনাম প্রমাণ করেছে, স্বাস্থ্যব্যবস্থা খুব মানসম্মত না হয়েও করোনা মোকাবিলায় সফল হওয়া যায়।
সময়/আন্ত