ফরিদপুর পুলিশ সুপারের এক বছর কেমন ছিলো - সময় সংবাদ | Popular Bangla News Portal

শিরোনাম

Tuesday, August 04, 2020

ফরিদপুর পুলিশ সুপারের এক বছর কেমন ছিলো

 

ফরিদপুর প্রতিনিধি :
গম্ভীরা দলবদ্ধভাবে গাওয়া একটি সংগীত। এটি বর্ণনামূলক গান। শিবের এক নাম 'গম্ভীর', তাই শিবের উৎসব গম্ভীরা উৎসব এবং শিবের বন্দনাগীতিই হলো গম্ভীরা গান। ... গম্ভীরা গানের উৎপত্তি পশ্চিমবঙ্গের মালদহ জেলায় হিন্দুসমাজে। গানটি অনেকটা গম্ভীর প্রকৃতির।

আর এমন এক গম্ভীর থমথমে বিরাজকৃত দম বন্ধকৃত জনপদ ছিলো ফরিদপুর। কোথাও কোন প্রতিবাদ চোখে পড়েনি ১০টি বছর। কিছু ভংয়কর প্রতারক সাহেদ এর আগমন ঘটে। আর তাদের দিয়ে ষ্টিম রোলার চালানো হয় নিজ দলের ত্যাগী নেতা-কর্মিসহ সাধারন অসহায় মানুষের উপর। তাদের আজ্ঞাবহ হয়ে চলতে শুরু করে প্রশাসন সহ সকল প্রতিষ্ঠান। 

আর এমন এক দুঃসময়ে গত এক বছর আগে ২৫ জুলাই ফরিদপুরের পুলিশ সুপার হিসেবে ফরিদপুরে আগমন ঘটে মোঃ আলিমুজ্জামানের। আগমনের প্রথম দিনেই সাংবাদিকদের কাছে তিনি উচ্চকন্ঠে ঘোষনা করে ছিলেন ফরিদপুর হবে সন্ত্রাস, মাদক ও শান্তির জনপদ। যে কথা সেই কাজ। শুরু হলো তার জোরদার অভিযান। প্রতিটি অপরাধ তিনি দিন নয়, ঘন্টার নিরিখে তুলে ধরতে শুরু করলেন।

একে একে অপরাধীরা আটক হতে থাকলো পুলিশের জালে। এরই ভিতর টনক নড়লো কিছু প্রতারক শাহেদের। টাকা দিয়ে তার বদলির ব্যবস্থা করলেন তারা। আর এই ঘটনা ফরিদপুরে ছড়িয়ে পড়লে ক্ষোভে রাগে ফেটে পড়েন সাধারন মানুষ থেকে ত্যাগী নেতাকর্মিরা।

এরই মাঝে এমন জনবান্ধব পুলিশ অফিসারের ফরিদপুরে থাকার মৌখিক নির্দেশ আসলে হাফ ছেড়ে বাচেঁ জেলাবাসী। শুরু হলো আবার তার অভিযান।

এবার অভিযানে একে একে আটক হতে থাকলেন ভংয়কর প্রতারক সব হাইব্রীড লুটেরা। অপরাধ করলে নিস্তার নেই এমন সংস্কৃতি তিনি ফরিদপুরে শুরু করেছিলেন গত এক বছর আগে থেকে। ফরিদপুরের জনবান্ধব এই পুলিশ সুপার মোঃ আলিমুজ্জামানের সাড়াশি অভিযানে এক এক করে ধরা পড়ছে বড় বড় সব অপরাধী। আর এ অভিযান থেকে একে একে ছাড়া পাচ্ছেনা কোন অপরাধীই। তার কঠোর ভূমিকায় এ জনপদে এখন শান্তির সুবাতাস বউতে শুরু করেছে। গম্ভীর সেই সংগীতের দিন এখন শেষ। জেলার সব শ্রেনির মানুষ এখন মুক্ত বিহঙ্গ এক পাখি। প্রতিদিন কোন না কোন বড় অপরাধী আটক হচ্ছেন পুলিশি অভিযানে।

দায়িত্বের প্রথম দিনেই তিনি উচ্চারন করেছিলেন কোন অপরাধী ছাড় পাবেনা। সময়ের পরিক্রমায় আজ সেই কথাটি বাস্তবায়িত হয়েছে। জেলার সব ক্ষমতাশালী ভংয়কর দাগি অপরাধী তার হাত থেকে নিস্তার পাচ্ছেনা। পুলিশ সুপার আলিমুজ্জামান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সোনার বাংলা গড়ার প্রত্যয়ে কাজ করে চলছেন নিরন্তর দুরুন্ত গতিতে। আর এ কারনেই তার দপ্তরের দরজা প্রতিটি বিচারপ্রার্থী মানুসের জন্য ২৪ ঘন্টা খোলা থাকে। 

এ বিষয়ে ফরিদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ সাইফুজ্জামান বলেন, এসপি স্যারের নির্দেশে করোনার লকডাউনের শুরু থেকে আমাদের জেলা পুলিশের বেতনের দুদিনের টাকা দিয়ে অসহায় মানুষের জন্য খাদ্য সামগ্রী বিতরণ শুরু করা হয়। সংখ্যার নিরিখে তাহা দিনের সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে। এরপর রোজার ঈদে প্রতিদিন মধ্যরাতে শতাধিক মানুষের সেহরি সহ ঈদ সামগ্রী দেয় শুরু হয়। বর্তমানে জেলা পুলিশ অসহায় বানভাসি মানুষের মুখে খাবার তুলে দিতে দিনরাত তারা বন্যার্তদের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে ত্রাণের প্যাকেট তুলে দিচ্ছেন। একই সাথে উচুঁ স্থানে অবস্থানরতদের হাতেও তারা ত্রাণের প্যাকেট দেয়া হচ্ছে।

ফরিদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ রাশেদুল ইসলাম বলেন, দিনরাত স্যার পথে প্রান্তরে কাজ করছেন। ঘটনা ঘটার দ্রæত সময়ের মধ্যে তিনি সেখানে উপস্থিত হয়ে নিজেই কাজ শুরু করেন ঘটনার পিছনের ঘটনা তুলে নিয়ে আসার কাজে। তার এই কাজে পুলিশের টিম ও সাধারন মানুষ এক হয়ে তাকে হাত বাড়িয়ে তথ্য উদঘাটনেও সাহায্য করে থাকেন। এরই মাঝে জেলার বড় বড় সব ক্লুলেস মার্ডার সহ অপরাধ যেকোন বিষয় প্রযুক্তির সহযোগিতায় অতি দ্রæত সময়ের মধ্যে তিনি সামনে তুলে নিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন স্যারের নির্দেশে আমরা একটি টিম করেছি অসহায় মানুষকে রক্ত দিয়ে সাহায্য করার জন্য। এখান থেকে যেকোন ব্যক্তির রক্তের প্রয়োজন হলে আমরা তাদের রক্ত দিচ্ছি। এছাড়া স্যার করোনায় মৃতদের লাশ দাফনের জন্য টিম করেছেন। তারা যেকোন করোনায় মৃত ব্যক্তি লাশ দাফন ও হিন্দুদের লাশ সৎকারে দিন রাত আমরা কাজ করছি। অপরদিকে করোনা রোগিদের সহায়তা দিতে ঢাকা গিয়ে প্লাজমা দিয়ে এসেছে পুলিশের ৩৫ সদস্য। 

তার এক বছরের পরিবর্তন নিয়ে কথা হলে পুলিশ সুপার মোঃ আলিমুজ্জামান বিপিএম-সেবা জানান,  “মুজিব বর্ষের অঙ্গিকার, পুলিশ হবে জনতার”- এ ¯েøাগানকে সামনে রেখে কাজ শুরু করেছিলাম গত এক বছর আগে এই জেলায়। তখন কথা দিয়ে ছিলাম সাদাকে সাদা কালোকে কালো বলবো। এই কথা থেকে সড়ে যায়নি। প্রতিদিন অপরাধ দমনে কাজ করছি। একই সাথে এখন বন্যার্তদের সাহায্য সহযোগীতায় পুলিশ সদস্যরা কাজ করছেন। প্রতিদিনই কোন না কোন এলাকার মানুষের মাঝে গিয়ে ত্রাণ সামগ্রী তুলে দেওয়া হচ্ছে তাদের হাতে। বন্যার পাশাপাশি করোনার কারনে যারা কাজে বের হতে পারছেন না কিংবা লকডাউনের মধ্যে রয়েছেন তাদেরও করোনার প্রথম দিন থেকে আমাদের সাধ্যমতো সাহায্যের চেষ্টা করছে পুলিশ সদস্যরা। তিনি আরো বলেন, অপরাধীকে আইনের আওতায় আনার কাজ করছি সব সময়। এর ভিতর থানা গুলোকে জনবান্ধব হিসেবে গড়ে তুলেছি। আমার পুলিশের সদস্যরাও যদি আইন ভংগ করলেও তাদের ব্যাপারে আমি খুব কঠোর। থানায় এখন পুলিশ ক্লিয়ারেন্স, জিডি ও মামলা করতে কোন টাকা নেয়া হয়না। আমি চেষ্টা করছি পুলিশকে আরো বেশি জনগনের দৌড়গড়ায় নিয়ে জনবান্ধব পুলিশ তৈরি করার জন্য।

এক পরিসংখ্যানে জানাযায় পুলিশ সুপার মোঃ আলিমুজ্জামান ২০১৯ সালের ২৫ জুলাই যোগদান করার পর ডাকাতি হয়েছিলো ১১ টি, দস্যূতা ১১টি, ৬৫ খুন, ৬০ ধর্ষন, ৮৫টি চুরি, ৩৬ শিশু নির্যাতন, ১৩টি অস্ত্র মামলা ও ১০৫২টি মাদক মামলা হয়। মোট মামলা হয় ২৪৯৭টি। এসব মামলার ভিতর ডাকাতির ১১ টির ভিতর ১০ টি উদঘাটন আর একটি মামলা সিআইডি কাজ করছে। দস্যূতার ১১টি মামলার ভিতর সব কটি উদঘাটিত হয়েছে। খুনের ৬৫ মামলার ভিতর ৯টি সিআইডি, ৪টি পিবিআই দেখছে বাকি সব মামলা উদঘাটিত করে পুলিশ। আর এসব ঘটনায় আসামী গ্রেফতার করে আদালতে পাঠায় পুলিশ। 

ফরিদপুরে পুলিশ সুপার মোঃ আলিমুজ্জামান বিপিএম-সেবা এক বছর আগে যোগদান করার পর থেকে যেকোন দূর্যোগ, মাদক দমন, অপরাধ এবং আইন শৃংখলা রক্ষার্থে দিন রাত কাজ করে চলছেন। তার নানা মুখি কাজের কারনে তাকে ফরিদপুর বাসি জনবান্ধব পুলিশ সুপার হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন এরই মধ্যে।

No comments: