সময় সংবাদ ডেস্ক//
তার বাৎসরিক আয় ৩১ লাখ ২০ হাজার পাউন্ড বা প্রায় ৩৫ কোটি টাকা। সাপ্তাহিক হিসেবে এটি ৬০ হাজার পাউন্ড বা ৬৬ লাখ টাকার বেশি। খেলেন ইংল্যান্ডের জাতীয় ফুটবল দলে। ইউরোপিয়ান ক্লাব ফুটবলে তার বর্তমান দল টটেনহ্যাম হটস্পার। বর্তমানে লোনে রয়েছেন প্রিমিয়ার লিগের আরেক দল নিউক্যাসল ইউনাইটেডে।
এমন একজন ফুটবলারকে কি না চেনেই না যুক্তরাজ্যের পুলিশ। শুধু না চিনলেও এক কথা ছিল। রীতিমতো জনসম্মুখে অপমানজনক আচরণ করা হয় তার সঙ্গে। সপ্তাহে ৬৬ লাখ টাকা আয় করা ফুটবলারকে গাড়ি চোর সন্দেহে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। তাও একবার নয়, প্রায় প্রতিবার।
তিনি ইংল্যান্ড জাতীয় দলের ৩০ বছর বয়সী ডিফেন্ডার ড্যানিয়েল লি রোজ বা ড্যানি রোজ। গত চার বছর ধরে ইংল্যান্ড জাতীয় দলের নিয়মিত মুখ তিনি। প্রিমিয়ার লিগেও খেলেছেন সেই ২০০৭ সাল থেকে। অথচ স্রেফ গায়ের রঙ কৃষ্ণকায় হওয়ায় নানান অপমান সইতে হয় ড্যানি রোজকে।
২০০৬-০৭ মৌসুমে লিডস ইউনাইটেডের হয়ে পেশাদার ক্যারিয়ার শুরু ডনক্যাস্টারে জন্ম নেয়া রোজের। ২০০৭ সালে যোগ দেন টটেনহ্যামে। এখনও পর্যন্ত রয়েছেন এই ক্লাবেই। তবে লোনে বিভিন্ন ক্লাবে তাকে পাঠিয়ে থাকে টটেনহ্যাম। সে ধারাবাহিকতায়ই এখন নিউক্যাসলে রয়েছেন রোজ।
সম্প্রতি সেকেন্ড ক্যাপ্টেনস পডকাস্টে বর্ণবৈষম্যমূলক আচরণের শিকার হওয়ার ব্যাপারে মুখ খুলেছেন তিনি। জানিয়েছেন সেই ১৫ বছর থেকে শুরু হয়েছে এসব আচরণ, এখন ৩০ বছরে এসেও নিস্তার পাননি তিনি। খেলার মাঠ কিংবা মাঠের বাইরে, বারবার বর্ণবাদী আচরণ সইতে হয়েছে তাকে।
পডকাস্টে রোজের ভাষ্য, ‘বেশ কয়েকবার এমন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হওয়ার সময় আমার বন্ধুরাও সঙ্গে ছিল। শেষবার এমন হয়েছে গত সপ্তাহে, আমি যখন আমার মায়ের বাড়িতে যাই। আমি একটা কার পার্কে গাড়ি থামিয়েছিলাম, ইঞ্জিন তাই বন্ধ ছিল। তখন রায়ট ভ্যান নিয়ে পুলিশ হাজির। তিনটি পুলিশের গাড়ি এলো সাথে।’
‘তারা আমাকে বলতে শুরু করলো যে, আমি নাকি গাড়িটি ঠিকভাবে চালাইনি। তখন বাধ্য হয়ে আমার পরিচয়পত্র দেখাই এবং তখন তারা আমাকে দম ফেলার সুযোগ দেয়। এটা শুধুমাত্র একটা ঘটনা। এমন অনেক হয়েছে। আমি কী করতে পারি? গত ১৫ বছর ধরে চলছে, কোনো পরিবর্তন নেই।’
তার সঙ্গে পুলিশের এমন আচরণ যে নিয়মিত বিষয় তা জানিয়ে রোজ আরও বলেন, ‘প্রতিবার তাদের একই প্রশ্ন, গাড়িটি চুরি করা? তুমি কোথায় পেয়েছ এটি? এখানে কী করছো তুমি? প্রমাণ করতে পারবে এটা যে তোমারই গাড়ি?’
শুধু পুলিশ নয়, ট্রেনে ভ্রমণকালেও বর্ণবাদী আচরণের শিকার হয়েছেন রোজ। তিনি বলেন, ‘একবার আমি ট্রেনে উঠলাম। ব্যাগ নিয়ে প্রবেশ করার পর এটেন্ডেন্ট আমাকে দেখে বলে, তুমি কি জানো এটা প্রথম শ্রেণির কামড়া? আমি বললাম, হ্যাঁ জানি, তো? তখন সে আমার কাছে টিকিট দেখতে চাইলো। ঠিক পাশ দিয়েই দুজন শ্বেতাঙ্গ মানুষ ট্রেনে উঠল কিন্তু তাদের কাছে টিকিট চাওয়া হয়নি। আমি জিজ্ঞেস করলাম, তাদের টিকিট দেখলে না? সে বললো, এটার দরকার নেই।’
তিনি শেষ করেন এভাবে, ‘মানুষ হয়তো ভাবতে পারে যে এমনটা স্বাভাবিক। কিন্তু আমার কাছে এটা বর্ণবৈষম্য। প্রতিবার আমাকে থামানো, প্রথম শ্রেণির কামড়ায় ভুল করে উঠেছি কি না জানতে চাওয়া- এগুলো স্বাভাবিক নয়। এটা আমার নিত্যদিনের ঘটনা। এ বিষয়ে অভিযোগ করতেও এখন বিব্রত হই। যখনই আমি অভিযোগ করি বা কিছু বলি, তখন মানুষ বলে এটার সঙ্গে মানিয়ে নিতে। আমি তাই আশা ছেড়ে দিয়েছি। কখনও এই অবস্থার পরিবর্তন হবে না।’