রাসেল কবির মুরাদ , কলাপাড়া(পটুয়াখালী)প্রতিনিধি: কলাপাড়া পৌর নির্বাচনে মেয়র, কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত আসনের নারী কাউন্সিলরদের অধিকাংশ প্রার্থীর বিরুদ্ধেই ফৌজদারী মামলা চলমান রয়েছে। কারো বিরুদ্ধে রয়েছে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রন আইন, দ্রæত বিচার আইন, বিশেষ ক্ষমতা আইন ও বাংলাদেশ দন্ডবিধি ধারায় গুরুতর অভিযোগ বিদ্যমান এবং বিএসটিআই আইন ও নির্বাচন বিধিমালা আইনে মামলা। রয়েছে অনেক প্রার্থীর বিরুদ্ধে নিজস্ব গ্যাং গ্রæপ নিয়ে চাঁদাবাজি, লুটপাট, টেন্ডারবাজি, দখল বানিজ্য করে রাতারাতি কোটিপতি বনে যাওয়ার গুঞ্জন। স্থানীয় প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা ও প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ে এদের হট কানেকশন থাকায় ফৌজদারী অপরাধে যুক্ত থেকেও এরা এখন স্থানীয় সরকার পরিষদ নির্বাচনে জনপ্রতিনিধি হয়ে ক্লিন ইমেজ গড়ার মিশনে নেমেছে। ফৌজদারী অপরাধের সাথে যুক্ত থেকে এরা কিভাবে পৌরসভার জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হয়ে নাগরিক সেবা, সুশাসন, মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রন, ইভটিজিং, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস মুক্ত পৌরসভা গঠন নিশ্চিত করবে তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন পৌরবাসীরা।
কলাপাড়া থানা ও পৌরসভা নির্বাচনে দাখিলকৃত এসকল প্রার্থীদের হলফ নামা থেকে জানা যায়, ১নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী মো: তারেকুজ্জামান’র নামে কলাপাড়া থানায়, জিআর-২৫২/১৩, বা.দ.বি. আইনের ১৪৩/৩০৭/৩২৩/৩২৪/৩২৫/৩২৬/৫০৬(খ) ধারার অভিযোগ বিদ্যমান, যা পটুয়াখালী চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজি: আদালতে বিচারাধীন, ২নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী নুরুল আমিন ওরফে রুহুল’র নামে জিআর-১৯/১৬, জিআর-৫০/১৮, বা.দ.বি. আইনের ৩২৩/৩৭৯/ ৫০৬ (খ) ও ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনে অপরাধের অভিযোগ রয়েছে, ৩ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী জাকি হোসেন জুকু’র নামে কলাপাড়া থানা ও জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে একাধিক মামলা রয়েছে, যা বা.দ.বি. আইনের ১৪৩/৩০৭/৩২৩/৩২৪/৩২৫/৩২৬ ধারার অভিযোগ সহ ৩২৩/৩৮৪/৩৮৬/৩৬২/৪০৬/৪২০/৫০৬ সহ বিএসটিআই আইনের অভিযোগ, ৪ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী জুকু’র সহোদর ছোট ভাই মো: খালিদ খান’র নামে কলাপাড়া থানায় জিআর-২৫২/১৩, জিআর-৩৬৪/১৯, জিআর-০৬/১৮, বা.দ.বি. আইনের ১৪৩/৩০৭/৩২৩/৩২৪/৩২৫/৩২৬/৩৭৯/৫০৬(খ) ধারার অভিযোগসহ দ্রæত বিচার আইনের ৪/৫ ধারার অভিযোগ বিদ্যমান, ৮ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী আশরাফুল আলম’র নামে কলাপাড়া থানায় জিআর-২০৭/১৬, মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রন আইনে মামলা রয়েছে, একই ওয়ার্ডের রাশেদ খান’র নামে জিআর-২৬১/১৬, বা.দ.বি. আইনের ১৪৩/৪৪৭/৩২৩/৩২৬/ ৩০৭ ধারার অভিযোগ বিদ্যমান, যা পটুয়াখালী চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজি: আদালতে বিচারাধীন, ৯নং ওয়ার্ডের আল আমিন সরদার’র নামে, জিআর-২০/২০১৮, বা.দ.বি. আইনের ৩৩২/৩৫৩ ধারার অভিযোগ বিদ্যমান রয়েছে। সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর প্রার্থী উম্মে তামিমা বিথি ও লাইজু হেলেন লাকী নির্বাচনী ব্যয় রিটার্ন দাখিল না করায় নির্বাচন বিধিমালা ২০০৮ এর ৭৪ ধারায় পৃথক দু’টি মামলা রয়েছে। এছাড়া ১ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী জুয়েল রানা ও ৬নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী জসিম হাওলাদার ফৌজদারী অপরাধের সাথে যুক্ত থেকেও মামলা সম্পর্কিত সকল তথ্য হলফ নামায় গোপন করায় তাদের মনোনয়ন পত্র বাতিল ঘোষনা করেন জেলা রিটার্নিং অফিসার।
এদিকে ক্ষমতাসীন দলের নৌকা প্রতীকের মেয়র প্রার্থী বিপুল হাওলাদারের নামে কলাপাড়া সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে বিএসটিআই আইনে একটি মামলা চলমান রয়েছে। বিএনপি’র ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী মো: হুমায়ুন কবির’র নামে বিশেষ ক্ষমতা আইনে কলাপাড়া থানায়, নং-৫, তারিখ-০৮/০২/১৮, একটি মামলা সম্পর্কিত তথ্য রয়েছে, যা তিনি হলফ নামায় উল্লেখ করেননি। বিএনপি সূত্র জানায়, মামলাটির অভিযোগ পত্রে তাকে বাদ দেয়া হয়েছে বিধায় তিনি হলফ নামায় এ তথ্য উল্লেখ করেননি।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) কলাপাড়া শাখার সভাপতি ও কলাপাড়া প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি শামসুল আলম বলেন, স্থানীয় সরকার পরিষদ নির্বাচনে অংশগ্রহনকারী প্রার্থীদের শিক্ষাগত যোগ্যতার বিষয়ে কোন বিধি নিষেধ না থাকায় অনেক স্বল্প শিক্ষিত প্রার্থী কোনরকমে টেনেটুনে অষ্টম শ্রেনী পাশের প্রত্যয়ন দিয়ে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। তিনি বলেন, ফৌজদারী অপরাধের সাথে যুক্ত এসকল প্রার্থী জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হলে সুশাসন ও নাগরিক সেবা নিশ্চিত করায় প্রতিবন্ধকতা দেখা দেবে।
নাগরিক ঐক্য, কলাপাড়া’র আহবায়ক নাসির তালুকদার বলেন, ফৌজদারী অপরাধের সাথে যুক্ত এসব বিতর্কিত প্রার্থী জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হলে এদের দিয়ে নাগরিক সেবা পাওয়ার সুযোগ নেই। এদের দ¦ারা সুশাসন ও অপরাধ মুক্ত সমাজ গঠন কোনক্রমেই প্রত্যাশা করা যায় না।
১৪ ফেব্রæয়ারী ৪র্থ ধাপে অনুষ্ঠিতব্য কলাপাড়া পৌর নির্বাচনে অংশগ্রহনকারী এসকল প্রার্থীরা ইতোমধ্যে কিশোরগ্যাং সদস্যদের নিয়ে ভোটারদের কাছে তাদের পক্ষে ভোট চাইতে যাওয়ায় আতংকিত হয়ে পড়ছেন ভোটাররা। এরা মিটিং, প্রচারনাসহ নির্বাচনী কর্মকান্ডে ভোটারদের অংশ নিতে জোড়-জবরদস্তি করলে ভয়ে মুখে না বলতে সাহস করছে না কেউ।