নাজমুল (নিজস্ব প্রতিবেদক) সময় সংবাদ, ফরিদপুর।
ফরিদপুর জেলার পদ্মার ভাঙন কবলিত চরভদ্রাসন উপজেলার পদ্মার চরের কৃষকদের খরায় এবার বাদামগুলো পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে ।
সেচ ব্যবস্থার অভাবে এবং অনাবৃষ্টির কারণে শতশত কৃষকের ভাগ্য আজ বিপর্যয়ের মুখে ।
প্রতি মণ বাদামের বীজ ৯ থেকে ১০ হাজারে টাকা ক্রয় করে ক্ষেতের সার, হাল বাবদ ব্যয়, ক্ষেত পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করার খরচ প্রতি কৃষকের যে ব্যয় হয়েছে তার পুরোটাই লোকসান যেতে বসেছে এবার।
উপজেলা কৃষি অফিসারের হিসেব মতে ১০২০ হেক্টর জমির মধ্যে ৪০ হেক্টর জমির বাদাম পুড়ে কৃষকরা ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে বলে জানায়।
নদী ভাঙন কবলিত এই এলাকার মানুষগুলো পদ্মার চরে কৃষি ফসলের উপর নির্ভরশীল। যদিও উন্নত প্রযুক্তির অভাব, পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থার অনুপযোগী, কৃষকদের ন্যায্য দাবি দাওয়া নিয়ে কথা বলার মতো যোগ্য লোকের অভাব , মহামারী কোভিড-১৯ এ পুরো বিশ্ব এবং আমাদের দেশ যখন স্থবির, এই সময়ে কৃষকরা অনেক আশা ও ভালো ফসল উৎপাদন হবে এবং তা ভালো দামে বিক্রি করবে এই আশা নিয়ে এগুচ্ছিলো কিন্তু খরায় তাদের আশাগুলো বিপর্যস্ত করে দিয়েছে।
বাদাম চাষি পান্নু মোল্যার সাথে এই বিষয়ে কথা বললে তিনি জানান, আমার তিন বিঘা জমির বাদাম প্রায় পুরে শেষ। প্রায় ৫০ হাজার টাকা খরচ করে বাদাম লাগিয়েছিলাম কিন্তু এখন কিছুই নাই।
বাদাম চাষি অভি খালাসীর স্ত্রী বলেন, আমাদের ৪ বিঘা জমির বাদাম পুরে শেষ হয়ে গেছে। সংবাদ সংগ্রহ করতে ঐ এলাকা বাদাম চাষিদের সঙ্গে কথা বললে এরকম প্রায় শতজনের এই ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে বলে জানায়। বিন্দার ২ বিঘা,হোসেন ব্যাপারীর ৩ বিঘা, মৈনিন্ড বিশ্বাস ৩ কাঠা,করিম খার ৩ বিঘা,কামাল খার ৩ বিঘা, মহসিন ব্যাপারীর ৩ বিঘা, মিঠু লাল কাপাসিয়া ৬ বিঘা,হরিপদ সরকারের ৩ বিঘা,জগদ্বিস সরকার ৭ কাঠা,নিলকমল মন্ডল ৬/৭ বিঘা, শাহজাহান ব্যাপারী ১০ কাঠা,সুরহাব ৪ বিঘা,সিরাজুল ইসলাম ১ বিঘা, ফিরোজ মোল্লা ১ বিঘা, রশিদ শিকদার ৩ বিঘা, ইসাহাক ফকির ১ বিঘা, শেখ মুন্নাফ ২ বিঘা, শেখ মান্নান ১ বিঘা, উকিন্ডা ১.৫০ বিঘা,মুমিন ফকির ২ বিঘা,কুটি ১০ কাঠা,গেনান্দ বৈরাগী ২ বিঘা,রামপ্রসাদ মন্ডল ১.৫০ বিঘা। নাম না জানা আরো অনেকেই এই ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে বলে জানা যায়।
সরকারের কাছে ভুক্তভোগীরা দাবি করেন, বর্তমানে খরায় বাদাম চাষিদের শতশত বিঘার বাদাম পুড়ে ছাই হলো এই বিপদ কাটিয়ে উঠতে সরকারের কাছে আমরা আর্থিক ক্ষতিপূরন দাবি করছি। করোনার এই মুহূর্তে সরকার আমাদের পাশে না দাঁড়ালে কিংবা আর্থিকভাবে সহযোগিতা না করলে আমাদের আর কোথাও যাওয়ার জায়গা থাকবে না।
এখানে শুধু খালাসি ডাঙ্গী বাদাম চাষিদের ক্ষতির পরিমানটা তুলে ধরা হয়েছে। পদ্মা চরে বাদাম চাষ করে বাকি এলাকাগুলো হচ্ছে হাজি ডাঙ্গী,বাদুল্যা মাতুব্বরের ডাঙ্গী,কামার ডাঙ্গী,আব্দুল গফুর মৃধা ডাঙ্গী এবং মাথা ভাঙ্গায় অনেক চাষিদের আজ একই অবস্থা।
সংবাদ প্রকাশের স্বার্থে উপজেলা কৃষি অফিসার জনাব প্রতাব মন্ডলের কাছে বিষয়টি তুলে ধরলে তিনি বলেন প্রায় ৪ মাস অনাবৃষ্টির ফলে বাদাম পুড়ে গেছে এই বিষয়ে আমরা অবগত আছি। আমরা তাদেরকে বুঝাচ্ছি নিজেদের খরচে সেচ ব্যবস্থা করেন। আমরা আপনাদের জন্যে পাম্প স্থাপনের জন্যে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি এবং চাষিদের এহেন ক্ষতিপূরনে ঊর্ধ্বতন কতৃপক্ষের নিকটে আমরা দাবি জানাবো। যাতে আর্থিক ক্ষতিপূরন কাটিয়ে উঠতে পারে এই বাদাম চাষিরা।