বোয়ালমারীর রবিউলের দেড় যুগের শিকল বন্দী জীবন - সময় সংবাদ | Popular Bangla News Portal

Breaking

Post Top Ad

Responsive Ads Here

শুক্রবার, জুলাই ৩০, ২০২১

বোয়ালমারীর রবিউলের দেড় যুগের শিকল বন্দী জীবন




আব্দুল্লাহ আল মামুন রনী,বোয়ালমারী (ফরিদপুর) প্রতিনিধি :


দেড় যুগ যাবত লোহার শিকলে বন্দি জীবন। দুরন্তপনায় শৈশব-কৈশোর কাটানোর পরিবর্তে কেটেছে এক ছোট গর্তে নগ্ন অবস্থায়। পরিবারের জ্যেষ্ঠ সন্তান হিসেবে যে বয়সে উপার্জন করে সংসারের হাল ধরার কথা, ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে সে নিজেই এখন সংসারের বোঝা। বলছিলাম রবিউল ইসলাম নামে ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার ময়না ইউনিয়নের এক হতভাগা যুবকের কথা। যে মাত্র দশ বছর বয়সে মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে আঠারো বছর ধরে অস্বাভাবিক জীবনযাপন করছে।


শুক্রবার (৩০ জুলাই) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, রবিউল ইসলাম বাড়ির একটি ভাঙ্গা ঘরের ভেতর এক ছোট গর্তে শুয়ে আছে। কোমরে লোহার শিকল বাঁধা। মুখে ঘন দাড়িভর্তি। পরনে কোন কাপড় নেই। তিন ভাইয়ের মধ্যে বড় রবিউল ফরিদপুর জেলার বোয়ালমারী উপজেলার ময়না ইউনিয়নের বর্নিরচর পশ্চিমপাড়া গ্রামের নুরুল ইসলামের ছেলে। হতভাগা বাবা নুরুল ইসলাম পেশায় একজন কৃষক।


আর্থিক অবস্থা নাজুক হওয়ায় পরিবারের একটু স্বচ্ছলতার জন্য মাঝে মাঝে ভ্যান চালিয়ে বাড়তি উপার্জনের চেষ্টা করেন। ছেলের মানসিক ভারসাম্যহীন অবস্থা তাকে প্রচন্ডভাবে ব্যথিত করলেও তিনি নিরূপায়। পৈতৃক সূত্রে প্রাপ্ত সামান্য জমিজমা আর নিজের অর্জিত উদ্বৃত্ত অর্থের সবটাই ছেলে রবিউলকে সুস্থ করতে তার চিকিৎসার পেছনে ব্যয় করেছেন। কিন্তু কোন সদর্থক ফলাফল অর্জিত হয়নি।


রবিউলের বাবা নুরুল ইসলাম বলেন, 'রবিউল দশ বছর পর্যন্ত সুস্থ স্বাভাবিক ছিল। হেসেখেলে বেড়াত। তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ার সময় হঠাৎ করে তার মধ্যে মানসিক ভারসাম্যহীন অবস্থা দেখতে পাই। এরপর নিজের সাধ্যমতো চিকিৎসার চেষ্টা করেও সুস্থ করতে পারিনি।'


ময়না ইউনিয়নের মধুবর্নী উচ্চ বিদ্যালয় এর প্রধান শিক্ষক আনিসুজ্জামান বলেন, 'যথাযথ চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে পারলে রবিউলকে হয়তো সুস্থ করা যেত। কারণ রবিউলের পিতা দরিদ্র হওয়ায় উন্নত ও আধুনিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে পারেননি। কোন আর্থিক সামর্থ্যবান লোক রবিউলের চিকিৎসায় এগিয়ে এলে হয়তো ছেলেটি আবার সুস্থ, সুন্দর, স্বাভাবিক জীবন ফিরে পেত।'


এ ব্যাপারে ময়না ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নাসির মো. সেলিম বলেন, 'ছেলেটি মানসিক ভারসাম্যহীন। শিকল খুলে দিলেই ও অন্যত্র চলে যায়। কাপড়ও পরনে রাখতে চায় না।' এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'আমার নিকট ওদের পরিবারের কেউ কখনো সাহায্যের ব্যাপারে আসেনি। এলে আমি নিশ্চয়ই সাহায্য করব।'

উল্লেখ্য, সমাজকর্মী সুমন রাফি সর্বপ্রথম সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন এবং সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহবান জানিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন ক্ষুধার্তের আত্মচিতকার গ্রুপে। 

Post Top Ad

Responsive Ads Here