কেউ মত দেয়নি রাসেলকে সময় দেয়ার পক্ষে - সময় সংবাদ | Popular Bangla News Portal

Breaking

Post Top Ad

Responsive Ads Here

শুক্রবার, সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২১

কেউ মত দেয়নি রাসেলকে সময় দেয়ার পক্ষে


  


সময় সংবাদ ডেস্কঃ




বিতর্কিত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালি ডটকম লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ রাসেল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়ে বকেয়া দায়দেনা পরিশোধে ছয় মাস সময় চেয়েছিলেন। তবে তাঁকে সময় দেওয়ার বিষয়ে কোনো সংস্থাই মত দেয়নি। বরং সরকারি-বেসরকারি সংস্থাগুলোর পক্ষ থেকে প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির সুপারিশ করা হয়।


বাংলাদেশ ব্যাংক বলে, ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করে আগামী পাঁচ মাসের মধ্যে দায়দেনা পরিশোধ করা একটি অসম্ভব বিষয়।



আইনি মতামতে বলা হয়, ইভ্যালিকে ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনার সুযোগ দিলে তা প্রশ্নের মুখে পড়বে। ইভ্যালির ভবিষ্যৎ নিয়ে গত ১৪ সেপ্টেম্বর বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে যে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা অনুষ্ঠিত হয়, সেখানেই এসব মতামত উঠে আসে। ওই সভার একটি কার্যবিবরণী বাংলাদেশ প্রতিদিনের হাতে এসেছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ও কেন্দ্রীয় ডিজিটাল কমার্স সেলের মহাপরিচালক হাফিজুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ওই সভায় সংশ্লিষ্ট সরকারি-বেসরকারি সংস্থাগুলোর মতামত পাওয়ার পর ইভ্যালির বিষয়ে একটিই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, সেটি প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে দায়িত্ব দেওয়া। ওই সভার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে গতকাল ইভ্যালির এমডি মো. রাসেল ও চেয়ারম্যান শামীমা নাসরীনকে (রাসেলের স্ত্রী) তাদের বাসা থেকে গ্রেফতার করে র‌্যাব।  

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, সভায় ইভ্যালি ছয় মাসের মধ্যে দায়দেনা পরিশোধের যে প্রস্তাব দিয়েছিল, সেটি নিয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খ আলোচনা করা হয়। প্রতিষ্ঠানটির এমডি রাসেলকে সময় দেওয়ার বিষয়ে কেউ মত দেননি। সবাই বলেছেন, আলোচ্য সময়ে দায়দেনা কোনোভাবেই শোধ করা সম্ভব না।



সভায় সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যরিস্টার তানজিবুল আলম বলেন, যেহেতু কয়েকটি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে এবং একই অভিযোগের প্রেক্ষিতে ই-অরেঞ্জ শপের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। তাদের শীর্ষ কর্মকর্তা গ্রেফতার হয়েছেন। তাই ইভ্যালির ক্ষেত্রেও একই রকম ব্যবস্থা গ্রহণ করা সমীচীন হবে। ওই আইনজীবী আরও বলেন, ইভ্যালিকে ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনার সুযোগ দিলে তা প্রশ্নের মুখে পড়বে। যদি ইভ্যালি কোনো সুযোগ পায়, তবে অন্যান্য কোম্পানিও একই রকম সুযোগ পাওয়ার অধিকার রাখে।

 

সূত্র জানায়, সভায় এ ধরনের আইনি মতামতের পরই মূলত ইভ্যালির শীর্ষ দুই কর্মকর্তাকে গ্রেফতারে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ উঠে আসে। সূত্র জানায়, আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটির সভায় বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিনিধি জানান, ডিজিটাল কমার্স পরিচালনা নির্দেশিকা এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের পেমেন্ট সংক্রান্ত পরিপত্র জারির পর ইভ্যালির কার্যক্রম কিছুট নিয়মতান্ত্রিকভাবে পরিচালিত হলেও আগে যে অনিয়ম হয়েছে তা সমাধান করা কঠিন। বাংলাদেশ ব্যাংক ১৫ জুলাই পর্যন্ত ইভ্যালির দেওয়া হিসাব পর্যালোচনা করে জানায়, প্রতিষ্ঠানটি স্থাবর সম্পদ দেখিয়েছে ১০৫ কোটি ৫৪ লাখ টাকা, যার মধ্যে ৯০ কোটি ৬৬ লাখ টাকা চলতি সম্পদ।  


অন্যদিকে অস্থাবর সম্পদ দেখানো হয়েছে ৪৩৮ কোটি ৪৫ লাখ টাকা, যার মধ্যে ব্র্যান্ড মূল্যই ৪২২ কোটি টাকা। স্থাবর ও অস্থাবর এই সম্পদের বিপরীতে প্রতিষ্ঠানটির কাছে গ্রাহক ও মার্চেন্টদের মোট পাওনা ৫৪৩ কোটি টাকা। ইভ্যালি গত ৩ বছর ধরে লোকসান দিচ্ছে। অথচ ওই দায়দেনা আগামী ৫ মাসের মধ্যে স্বাভাবিক ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করে বিনিয়োগ লাভের মাধ্যমে পরিশোধ করা হবে বলে জানানো হয়েছে। এটা অসম্ভব বিষয়। বর্তমান ধারা অব্যাহত থাকলে কোনোভাবেই তারা গ্রাহক ও মার্চেন্টদের দায়দেনা পরিশোধ করতে পারবে না বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিনিধি সভায় জানান। আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি সভায় জানান, যেহেতু ইভ্যালি প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী গ্রাহকদের পণ্য সরবরাহ ও মার্চেন্টদের দেনা শোধ করতে পারছে না, তাই তাদের বিরুদ্ধে কঠোরভাবে আইন প্রয়োগ করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করা প্রয়োজন।  


প্রতিযোগিতা কমিশনের প্রতিনিধি জানান, বাজারে অসম অফার দিয়ে ভারসাম্যহীন পরিবেশ তৈরি করাও একটা অপরাধ। ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর মালিকদের অ্যাসোসিয়েশন ইক্যাব-এর ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ শাহাব উদ্দিন বলেন, ইভ্যালির মতো ডিজিটাল কমার্স প্রতিষ্ঠান বিধিবিধান অমান্য করলে তা কোনোভাবেই হালকাভাবে দেখার সুযোগ নেই। ইক্যাব শুধু তার সদস্যপদ বাতিল করতে পারে, আর কোনো ক্ষমতা নাই। সরকারকে এ বিষয়ে কঠোর হতে হবে। তবে গ্রাহক ও মার্চেন্টদের স্বার্থ দেখতে হবে।


ইক্যাবের মহাব্যবস্থাপক জাহাঙ্গীর আলম শোভন বলেন, ইভ্যালির কাছে সর্বশেষ তথ্য চাওয়া হলেও তারা চাহিদা মতো তথ্য দেয়নি। যে তথ্য দিয়েছে, তাতে মনে হয়েছে প্রতিষ্ঠানটি গ্রাহক ও মার্চেন্টদের দায় পরিশোধের ক্ষমতা রাখে না। এ অবস্থায় পাঁচ মাসের মধ্যে দেনা পরিশোধের যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি, তা কোনোভাবেই সম্ভব হবে না।   


ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের উপপরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার বলেন, ইভ্যালির দায়দেনা পর্যালোচনার পর বর্তমান অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে, প্রতিষ্ঠানটি গ্রাহক ও মার্চেন্টদের দায়দেনা পরিশোধের ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে।

Post Top Ad

Responsive Ads Here