তিস্তা পাড়ের মানুষের ভোগান্তির শেষ নেই - সময় সংবাদ | Popular Bangla News Portal

Breaking

Post Top Ad

Responsive Ads Here

রবিবার, অক্টোবর ২৪, ২০২১

তিস্তা পাড়ের মানুষের ভোগান্তির শেষ নেই




জেলা প্রতিনিধিঃ



 লালমনিরহাটে তিস্তার পানি নামলেও কমেনি নদীপাড়ের মানুষের ভোগান্তি। চরাঞ্চলের অনেক বাড়িতে এখনো জমে আছে বন্যার পানি। ভেঙেচুরে ল-ভ- পাকা সড়ক। সংযোগ সেতু ভেঙে চরের লাখো মানুষের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে।



নৌকাই তাদের একমাত্র ভরসা। চরম কষ্টে দিন কাটছে ওইসব এলাকার মানুষের। প্রায় নিশ্চিহ্ন হওয়া সড়কের পাশের ঘরবাড়ি মাটিতে পড়ে আছে মুখ থুবড়ে। কোথাও কোথাও উপড়ে গেছে গাছপালা।


ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হওয়ায় কেউ কেউ আশ্রয় নিয়েছে অন্যের বাড়িতে। চরে আবাদ করা সব আগাম ফসলের খেত নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছেন চাষিরা। কী করে চলবে তাদের বাকিটা সময় তা ভেবে দিশাহারা চরের মানুষ।

পানি নামতে থাকায় আশ্রয় কেন্দ্র কিংবা উঁচু স্থানে ঠাঁই নেওয়া কিছু মানুষ নিজের বাড়িতে ফিরতে শুরু করেছে।


 উজানে ভারী বৃষ্টি হওয়ায় উত্তরের জেলা লালমনিরহাটে মঙ্গলবার রাত থেকে দেখা দেয় এই আকস্মিক বন্যা। পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, গতকাল ব্যারাজ পয়েন্টে তিস্তার পানি বিপৎসীমার ৫৮ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এরই মধ্যে জেলায় বানভাসী মানুষের মধ্যে ৫০ মেট্রিক টন চাল, ৫ লাখ টাকা, ৪ হাজার প্যাকেট শুকনা খাবার, পশুখাদ্যের জন্য আরও ২ লাখ টাকা এবং ১০০ বান্ডেল ঢেউটিন বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।


লালমনিরহাট জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, আকস্মিক বন্যায় জেলার পাঁচ উপজেলার ১৭ ইউনিয়নের ২৯ হাজার ৭১৩ পরিবারের ১ লাখ ১৭ হাজার ২৫২ জন মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।


লালমনিরহাটের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, তিস্তার ঢলে অসংখ্য পাকা ও কাঁচা রাস্তা ভেঙে গেছে। কোথাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ব্রিজ-কালভার্ট। নদীতীরের অনেক বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। কয়েকটি এলাকার বাঁধ হয়েছে ক্ষতিগ্রস্ত।

গঙ্গাচড়া শেখ হাসিনা সেতুর সংযোগ সড়কের একটি অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে বুধবার থেকে কালীগঞ্জের কাকিনা হয়ে রংপুরের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। অন্যদিকে তিস্তা ব্যারাজের ফ্লাড বাইপাস ভেঙে যাওয়ায় লালমনিরহাটের বড়খাতা হয়ে নীলফামারীর সড়ক যোগাযোগও বন্ধ রয়েছে। লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ, পাটগ্রাম, হাতীবান্ধা ও সদর উপজেলার কিছু এলাকায় এখনো রয়ে গেছে বন্যার পানি। রুদ্রেশ্বর চরের ষাটোর্ধ্ব সাইদুর মিয়া চার দিন পর গতকাল সকালে স্ত্রীকে নিয়ে ফিরেছেন নিজের বিধ্বস্ত বাড়িতে। সঙ্গে এনেছেন সরকারি ত্রাণের একটি প্যাকেট। দেখা গেল, পানির তোড়ে তার দুটি ঘরের নিচের মাটি খালে পরিণত হয়ে সেখানেই ভেঙে পড়েছে। পাশে থাকা গোয়ালঘরে ঘুমানোর জন্য বিছানা ঠিক করছেন তার স্ত্রী। সাইদুর বলেন, ‘আমার বয়সে এ ধরনের বন্যা কখনো দেখিনি। কিছু বুঝে ওঠার আগেই আমার ঘর ভেঙে পড়েছে, ভেসে গেছে সবকিছু। আমরা কোনো রকমে কোমর-সমান পানি পেরিয়ে সরে যেতে পেরেছি। ’ চার দিন তারা ছিলেন অন্যের বাড়িতে। এখন রান্না হবে ত্রাণের চাল-ডাল। প্রতিবেশী রুনা বেগম বলেন, ‘বানের পানিতে আমার একটি ঘর পুরো ভেঙে গেছে। যেভাবে পানির ঢেউ এসেছে, তাতে কোনো কিছু রক্ষা করা যায়নি। শুধু কোনো রকমে আমাদের জীবনটা বেঁচেছে। ’


রুদ্রেশ্বর চরের সাইদুর মিয়া কিংবা রুনা বেগমের মতো লালমনিরহাটের তিস্তা চরাঞ্চলের হাজার হাজার মানুষ ‘হঠাৎ’ আসা বন্যায় হয়েছে নিঃস্ব। দুর্ভোগে পড়েছে যোগাযোগসহ খাবারের কষ্টে। অনেকের কষ্টে লাগানো আমনসহ বিভিন্ন ফসলের খেত হয়েছে বিনষ্ট। ফলে এসব মানুষ দিন কাটানো নিয়ে শঙ্কায় পড়েছে।


কাকিনা ইউনিয়নের চরাঞ্চলের সবচেয়ে বড় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রুদ্রেশ্বর উচ্চবিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানটির একটি নতুন আধাপাকা ভবন বিধ্বস্ত হয়ে পানিতে পড়ে আছে। আরও দুটি ভবন পানির তোড়ে মুখ থুবড়ে পড়েছে। একটি তিনতলা ভবন আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিদ্যালয়ের নৈশপ্রহরী শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘বুধবার দুপুরের দিকে হঠাৎ করে ৪ ফুট উঁচু পানির ঢল এসে প্রথমে একটি ভবন ভেঙে পড়ে। পানির চাপে সন্ধ্যায় ভেঙেছে আরও দুটি ভবন। ’

Post Top Ad

Responsive Ads Here