অবশেষে ফেরি পাচ্ছে হাওরদ্বীপ খালিয়াজুরীবাসী
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
খালিয়াজুরী নেত্রকোনার মূল ভূখন্ড থেকে বিচ্ছিন্ন একটি হাওর উপজেলা। উপজেলাটি হাওরদ্বীপ নামেও পরিচিত। জেলা শহর থেকে এ উপজেলার দূরত্ব ৬০ কিলোমিটার। বছরের ৬ মাস জলাবদ্ধ জীবনযাপন করতে হয় খালিয়াজুরী উপজেলার মানুষকে।
এমতাবস্থায় দুই বছর আগে ৪ কোটি টাকা ব্যয়ে নিমজ্জিত সড়ক নির্মাণ করা হয়।
অবশেষে অবসান হতে যাচ্ছে নেত্রকোনার হাওর উপজেলার খালিয়াজুরীর দীর্ঘদিনের এই সমস্যার। ঐ উপজেলার মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া ধনু নদীর জন্য একটি ফেরি বরাদ্দ করা হয়েছে। ফেরিটি রসুলপুর ঘাটে পৌঁছালে যেকোনো যানবাহন বিচ্ছিন্ন খালিয়াজুরী উপজেলা শহরে পৌঁছাবে। এদিকে ফেরি বরাদ্দের খবরে খুশি হাওরদ্বীপ খালিয়াজুরী উপজেলার বাসিন্দারা।
সম্প্রতি সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন খালিয়াজুরী উপজেলা নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হলে খালিয়াজুরীর সন্তান ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারই প্রথম তার এলাকার মানুষকে ফেরি বরাদ্দের সুসংবাদ দেন। উপজেলা। তিনি তার ফেসবুক টাইমলাইনে স্ট্যাটাসে লিখেছেন, "আমি ধনু নদীতে ফেরি করার চেষ্টা করছিলাম।" আজ ফেরিটির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। জয় বাংলা। '
খালিয়াজুরী উপজেলা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক স্বাগত সরকার বলেন, উপজেলা সদরে কোনো যানবাহন না আসায় আমরা সব দিক দিয়ে পিছিয়ে আছি। ইউনিয়নগুলোর কেউ চাইলেই রাতে উপজেলা সদরে আসতে পারবে না। জরুরি ও জটিল রোগীদের পরিবহন করা যাচ্ছে না। দূরের শিক্ষার্থীরা সদর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এসে নিয়মিত ক্লাস করতে পারে না। কৃষিপণ্য ছাড়াও ব্যবসা-বাণিজ্যের বিভিন্ন পণ্য শ্রমিকদের নিয়ে আসতে হয়। তাই একটি ফেরি চালু হলে আমাদের উপজেলার পুরো চিত্রই পাল্টে যাবে। এ অঞ্চলের অর্থনীতিতে গতি আসবে।
খালিয়াজুরী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এএইচএম আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘ধনু নদীর কারণে এ উপজেলা শহর দীর্ঘদিন ধরে বিচ্ছিন্ন। জরুরী প্রয়োজনে বা কোন প্রসূতি মাকে নিয়ে জেলা শহরে যেতে পারছেন না এলাকাবাসী। রসুলপুর ঘাট ফেরি সার্ভিস চালু হলে খালিয়াজুরী জেলা সদর, বিভাগ বা রাজধানীর সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখবে।
খালিয়াজুরী থেকে জেলা সদর পর্যন্ত সরাসরি বাস সার্ভিস চালু করা যায়। সিএনজি চালিত অটোরিকশা ও প্রাইভেট কার সহজেই খালিয়াজুরী পৌঁছানো যায়। এ ছাড়া কৃষিনির্ভর এই এলাকায় কৃষকদের পণ্য পরিবহন সহজ হবে।
নেত্রকানা সড়ক ও নগর উন্নয়ন অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী হামিদুল ইসলাম বলেন, খালিয়াজুরী উপজেলার রসুলপুর ঘাট ধনু নদীতে ফেরি চলাচলের সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জেনেছি। আশা করছি, খুব অল্প সময়ের মধ্যেই বরাদ্দ দেওয়া হবে। মদনের উচিৎপুর থেকে খালিয়াজুরী সদর পর্যন্ত খুব অল্প সময়ের মধ্যে একটি উঁচু সেতু ও ফ্লাইওভার নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে বলেও জানান ওই কর্মকর্তা।
খালিয়াজুরীর শিক্ষার্থীদের ফিজার ভ্যাকসিন দেওয়ার জন্য গত বুধবার (১২ জানুয়ারি) স্থানীয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) একটি লাল গাড়ি এবং উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার দুটি কালো চার চাকার গাড়ি আনা হয়। তবে এ উপজেলা শহরে এর আগে কোনো চার চাকার গাড়ি প্রবেশ করেনি। সরকার ইতোমধ্যে এ দুটি গাড়ি বরাদ্দ দিলেও সড়ক যোগাযোগের অভাবে সেগুলো কাজে নিতে পারেনি। কিন্তু শিক্ষার্থীদের পরিবহনের জন্য শেষ পর্যন্ত ওই দুটি গাড়ি সেখানে নিয়ে যায়। আবার সহজে নিতে পারেননি তিনি। ধনু নদী পার হতে যানবাহনের জন্য কিশোরগঞ্জ জেলার করিমগঞ্জ উপজেলা থেকে একটি বড় নৌকা আনা হয়েছে। অনেক কষ্টের পর ২টি ৪ চাকার গাড়ি খালিয়াজুরী উপজেলা শহরে নিয়ে যাওয়া হয়। আর নগরীতে প্রথমবারের মতো চার চাকার গাড়ি দেখে অবাক খালিয়াজুরী হাওর উপজেলার মানুষ।
মোঃসাইফুল্লাহ /সময় সংবাদ